মুক্তমত

ইন্টারনেটের অপব্যবহারে শিশু-কিশোর

  • প্রকাশিত ৯ ডিসেম্বর, ২০২০

আরিফ আনজুম

 

 

একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে প্রাণিকুল, জীবজগৎ ও সমাজ সবকিছু প্রযুক্তিনির্ভর বা বিজ্ঞানমুখী হয়ে পড়েছে। বর্তমানে কোনো মানুষ তার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চেয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে বেশি বিশ্বাস ও ভরসা করে। আজ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে বিজ্ঞানের জয়জয়কার। নিত্যনতুন আবিষ্কারে সমৃদ্ধ হচ্ছে এ বিশ্ব, উপকৃত হচ্ছে মানবজগৎ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষের প্রত্যেকটি কাজের সঙ্গে জুড়ে আছে নানা ধরনের বৈজ্ঞানিক উপাদান, যার মধ্যে বর্তমানে ছোট থেকে বড় সকলে ব্যবহার করছে ইন্টারনেট। মানবকল্যাণের জন্যই প্রযুক্তি, কিন্তু সেই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে সমাজে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করছে এখন মানুষ। জীবনের সব ক্ষেত্রেই এখন ব্যবহূত হচ্ছে ইন্টারনেট। তাতে জীবনযাপন অনেক সহজ ও গতিময় হয়ে উঠেছে। অথচ ইন্টারনেটের অপব্যবহার করে অপপ্রচার চালিয়ে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে অহরহ। তন্মধ্যে ইন্টারনেটের অপব্যবহারের কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আজকের শিশু-কিশোররা।

খেলাধুলাবিমুখ হয়ে ইন্টারনেটের দিকে বেশি মনোযোগী হচ্ছে তারা। বর্তমানের শিশু-কিশোররা ইটারনেট ব্যবহারের ফলে পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ হারাচ্ছে। সর্বদা ইন্টারনেটে ব্যস্ত থাকার কারণে ছেলেমেয়েরা খেলার মাঠ ভুলে যাওয়া, দিন দিন তাদের মানসিক অবসাদ গ্রাস, পড়াশোনার আনন্দ থেকে বিরত, পরিবারের সঙ্গে খারাপ আচরণ, অতিরিক্ত স্ক্রিনের আলোয় চোখের ক্ষতি সাধন, ইন্টারনেটে কোনো কুচক্রে জড়িয়ে পড়া, গেমসের নেশায় আসক্ত হওয়া, নিজের প্রতিভাকে অবহেলা করা, শারীরিক ক্ষমতা হ্রাস, এমনকি ভবিষ্যতে শারীরিক ও মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কার প্রবণতা বেড়েই চলছে।

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি। শহর থেকে শুরু করে গ্রাম অঞ্চলেও ছোঁয়া লেগেছে বিজ্ঞানের এই সৃষ্টিকর্মের। ক’বছর আগেই মানুষ বিদেশে কথা বলার জন্য দোকানে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকত। কিন্তু বর্তমানে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার হাতে মোবাইল ফোন আছে, যার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ইন্টারনেট সংযোগ। দেশের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়ছে। তন্মধ্যে ব্রডব্যান্ড সংযোগ চালু হওয়ায় এটি আরো ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন ১ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি শিশু প্রথম বারের মতো অনলাইন ব্যবহার করছে। প্রতি আধা সেকেন্ডে একটি শিশু অনলাইন দুনিয়ায় প্রবেশ করছে এবং এতে দেশের ১৩ শতাংশ শিশু-কিশোর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানির শিকার হচ্ছে। একাধিকবার হয়রানির শিকার হচ্ছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। হয়রানির কারণে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিচ্ছে বলে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থার (ইউনিসেফ) গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

অনেক কষ্ট করে একটি পরিবার তথা বাবা-মা তার সন্তানকে আদর্শবান করে গড়ে তোলার চেষ্টা করে থাকে। অথচ দেখা যায়, কখনো কখনো অসৎ বন্ধুর পাল্লায় পড়ে সন্তানরা মাদকে নিমজ্জিত হচ্ছে। মা-বাবা বুঝতে পারেন সন্তানের ভেতর পরিবর্তন লক্ষ করে। চলাফেরা, আচরণে অদ্ভুত পরিবর্তনের লক্ষণ! রাত জাগা, মিথ্যা বলা, স্কুল-কলেজ না যাওয়া, প্রাইভেটের নামে অন্যত্র যাওয়া, বিভিন্ন অজুহাতে সময়ে সময়ে। এ থেকেই বুঝতে পারা যায়, আমরা আসলে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি বর্তমানের এই ইন্টারনেটের অপব্যবহারে। এটি বিজ্ঞানের পরিসংখ্যানকেও যেন হার মানায়! এ থেকে উত্তরণে নিজেদের বোধকে জাগ্রত করতে হবে, হতে হবে অধিক সচেতন। আর এ বিষয়ে এখন থেকেই আরো সতর্ক হবেন প্রতিটি পরিবার, এই বিশ্বাস রাখি।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, শিবগঞ্জ সরকারি এমএইচ কলেজ, শিবগঞ্জ, বগুড়া

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads