বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘমেয়াদি, দেশের ইতিহাসে প্রথম চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও নারী জাগরণের আইকন আমাদের শেখ হাসিনা। অতিক্রম করেছেন ইন্দিরা গান্ধী, মার্গারেট থ্যাচার, চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার মতো নারী সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের। অমরত্বের স্বাদ পাবেন আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ গতকাল সোমবার বঙ্গভবনে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান। এ শপথের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয়বার এবং চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের গর্বিত প্রধানমন্ত্রী হলেন শেখ হাসিনা।
বিকাল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে প্রবেশ করেন শেখ হাসিনা। এরপর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিকাল ৩টা ৩৩ মিনিটে শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। শপথ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, বিচারপতিরা, শিক্ষক, কূটনীতিকসহ এক হাজারের মতো অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এমপি হিসেবেও শপথ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শপথ অনুষ্ঠান শেষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় তিনি সংসদ নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন।
১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর দলের দায়িত্ব নিয়ে শেখ হাসিনা প্রথম নির্বাচনে অংশ নেন ১৯৮৬ সালে। সেসময় মিডিয়া ক্যু করে এরশাদের সামরিক সরকার আওয়ামী লীগকে হারিয়ে দেয়। তখন তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো বিরোধীদলীয় নেতা হন শেখ হাসিনা। এরপর ১৯৯১ সালে স্বৈরাচার পতনের পর পঞ্চম সংসদে তিনি বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসেন।
১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে প্রথমবারের মতো সরকার গঠন করেন তিনি। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে না পারলেও ভোট বাড়ে আওয়ামী লীগের। সরকার গঠন করে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে সংসদে বসেন শেখ হাসিনা।
তারপর নবম সংসদ নির্বাচন থেকে একাদশ সংসদ পর্যন্ত টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৬৪টিতেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট জয়লাভ করে। এরপর থেকেই বাংলাদেশে ‘দিন বদলের শুরু’ হয়। দেশের প্রতিটি খাতে অভূতপূর্ব উন্নতি শুরু করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। শেখ হাসিনার জয়রথ চলমান থাকে দশম সংসদ নির্বাচনেও। ওই বছরের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আবারো বিজয়ী হয়ে টানা দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রিত্বের শপথ নেন শেখ হাসিনা।
২০১৪ সালের নির্বাচনের পর অনেকেই ভেবেছিলেন, পূর্ণ মেয়াদে সরকার পরিচালনা করতে পারবেন না শেখ হাসিনা। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন চাপের মুখে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে বাধ্য হবেন তিনি। কিন্তু তাদের সবার ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন-জ্বালাও পোড়াও মোকাবেলা করে পূর্ণ মেয়াদ সরকার পরিচালনা করেন শেখ হাসিনা। মেয়াদের শেষ দিকে এসে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী জোট আবারো সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের দাবি জানায়। কিন্তু সংবিধানের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, সংসদ বহাল রেখেই একাদশ সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের জন্য টানা এক সপ্তাহ দেশের সক্রিয় সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নির্বাচনী সংলাপে বসেন তিনি। ফলে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট। এই নির্বাচনেও ঐক্যফ্রন্ট মাত্র ৭টি আসনে জয় লাভ করে। আর ২৮৮টি আসন পায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট।





