আশার দ্যুতি ছড়াচ্ছেন যারা

আশার দ্যুতি ছড়াচ্ছেন যারা

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

আশার দ্যুতি ছড়াচ্ছেন যারা

  • ইশতিয়াক আবীর
  • প্রকাশিত ৩ জুন, ২০১৮

মিরপুরের বাসিন্ধা শিরিন আক্তার। তার স্বামী মজনু মিয়া। দুজনই জন্মান্ধ। মানবেতর জীবন পার করছিলেন তারা। ছোট একটা দোকান ছিল তাদের। কিন্তু অর্থাভাবে ভালো করে দোকান পরিচালনা করতে পারছিলেন না। এরই মধ্যে তাদের যোগাযোগ হয় ‘লাইট অব হোপস’ নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে। দোকান চালুর জন্য আর্থিক সাহায্য দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ায় সংগঠনটি। সম্প্রতি সরকারি উদ্যোগে একটা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দোকান পরিচালনার প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে এই দম্পতি।

হবিগঞ্জের সুমি বেগম। যৌতুকের জন্য স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি। তার গায়ে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল তার স্বামী। ঢাকা মেডিকেলে তার  চিকিৎসার ব্যবস্থা করে লাইট অব হোপস। এখানেই শেষ নয়, সুমি বেগমকে সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি সেলাই মেশিনও কিনে দেয় সংগঠনটি। এভাবে মানুষের পাশে আশার আলো ছড়াচ্ছে লাইট অব হোপস।

লাইট অব হোপসের বাংলা করলে দাঁড়ায় আশার আলো। সত্যিকারেই নিভে যাওয়া প্রদীপে আশার আলো জ্বালায় তারা। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে ২০১১ সালে আত্মপ্রকাশ করে লাইট অব হোপস। সে সময় শীতার্তদের মাঝে ৩৩টি কম্বল বিতরণ করেছিল সংগঠনটির কলেজ পড়ুয়া সদস্যরা। সমাজে পিছিয়ে পড়া ছিন্নমূল মানুষদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে তারা। হতদরিদ্র মানুষকে স্বাবলম্বী করতেই তাদের নিরন্তর প্রচেষ্টা।

‘প্রজেক্ট স্বাবলম্বীকরণ’ কার্যক্রমের আওতায় প্রতিবছর অসহায় দরিদ্র মানুষদের সাহায্য করছে লাইট অব হোপস। ২০১৬ সাল থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমের আওতায় প্রতিবছর ৩ থেকে ৫ জনকে সাহায্য করছে তারা।

সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠন প্রতিবছরই রমজান মাসে এতিম শিশুদের মধ্যে ইফতার বিতরণ করে। এ ছাড়াও পথশিশুদের নিয়ে পরিচালিত স্কুলগুলোতে ইফতার ও ঈদের পোশাকও বিতরণ করা হয়।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সাইফ জামান জানান, এ বছর তারা ১৫০ জন পথশিশুর মধ্যে ঈদের নতুন পোশাক বিতরণ করবেন।

সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে সাইফ জানান, প্রতিবছর দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষাবৃত্তি চালু করেছেন তারা। এসএসসি ও এইচএসসি শিক্ষার্থীদের মাসিক শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে থাকে সংগঠনটি। বন্যা, পাহাড়ধস ও হাওরে বাঁধ ভেঙে সৃষ্ট বিপর্যয়ের সময় ত্রাণ সহয়াতা দিয়েও অসহায় সাধারণ মানুষের পাশে ছিল এ সংগঠন।

প্রতিবছর গ্রীষ্মে পথশিশুদের নিয়ে ফল উৎসব এবং শীতে পিঠা উৎসবের আয়োজন করে লাইট অব হোপস। এ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসে পথশিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে তারা।

বাচ্চাদের ঈদের আনন্দ দিতে শিশু হাসপাতালে বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন উপহারের ব্যবস্থা করে লাইট অব হোপ। শীতের সময় উত্তরাঞ্চলে নিয়মিত শীতবস্ত্রও বিতরণ করে। লাইট অব হোপসের এক সদস্য জানান, গত বছরে তারা সৈয়দপুর, রংপুর ও গাইবান্ধায় ১২০০ শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে।

তরুণ সমাজসহ দেশের সব স্তরের মানুষকে মানবিক কাজে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করাও সংগঠনটির অন্যতম উদ্দেশ্য। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছে এবার লাইট অব হোপস।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads