কাজী সিকান্দার
জ্ঞানীরাই উপলব্ধি করতে পারেন। বুঝতে পারেন। রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেন। জাতির জন্য মঙ্গলজনক বস্তু চিহ্নিত করে তা জাতিকে উপহার দিতে পারেন। জাতিকে বিপদের হাত থেকে বাঁচার পথ বাতলিয়ে দিতে পারেন জ্ঞানীরা বা আলেমরা। আলেম না থাকলে জাতি এক মহাঅন্ধকারের অতল গহ্বরে নিপতিত হবে। আল্লাহতায়ালা জ্ঞানীদেরকে লক্ষ্য করে বার বার বিভিন্ন উপলব্ধির কথা বলেছেন। রহস্যের কথা বলেছেন।
আল্লাহ সুবহানুহু তায়ালা বলেন, ‘বলো যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে? নিশ্চয় জ্ঞানী ব্যক্তিরাই উপদেশ গ্রহণ করে থাকে।’ (সুরা যুমার, আয়াত- ৯) আল্লাহতায়ালা হলেন বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা। তিনি নিজেই ঘোষণা করলেন, যারা জ্ঞানী আর যারা জ্ঞানী নয় তারা কখনো সমান হতে পারে না।
আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, ‘নিশ্চয় আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টির মধ্যে এবং দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শন।’ (সুরা ইমরান, আয়াত-১৯০) অন্যত্র আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টি
এবং তোমাদের ভাষাও ভিন্নতা। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে নিদর্শন।’ (সুরা রূম-২২) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘এইতো তাদের ঘরবাড়ি, যা তাদের সীমালঙ্ঘনের কারণে জনশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে। নিশ্চয় এতে জ্ঞানী সমপ্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন।’ (সুরা, নামল, আয়াত-৫২) আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, ‘তিনিই সে মহান সত্তা, যিনি বানিয়েছেন সূর্যকে উজ্জ্বল আলোকময়, আর চন্দ্রকে স্নিগ্ধ আলো বিতরণকারীরূপে এবং অতঃপর নির্ধারিত করেছেন এর জন্য মনজিলসমূহ, যাতে করে তোমরা চিনতে পার বছরগুলোর সংখ্যা ও হিসাব। আল্লাহ এ সমস্ত কিছু এমনিতেই সৃষ্টি করেননি, কিন্তু যথার্থতার সাথে। তিনি প্রকাশ করেন লক্ষণসমূহ সে সমস্ত লোকের জন্য যাদের জ্ঞান আছে।’ (সুরা-ইউনুস, আয়াত-৫)
উপরিউক্ত আয়াতগুলোতে আল্লাহতায়ালা জ্ঞানী-আলেমদেরকে লক্ষ্য করে বলেছেন তারা নিগুঢ় রহস্য উদঘাটন করতে পারে। তারা আল্লাহর নিদর্শন বুঝতে পারে। যদি আলেম না থাকেন, তবে এ রহস্য উদ্ঘাটিত হতো না। জাতি হতো দিশেহারা। পথ খুঁজে পেতো না। ভ্রষ্টতার তীমিরে জীবনযাপন করতে হতো। এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘ওলামাদের দৃষ্টান্ত ওই সমস্ত তরিকার ন্যায় যাদের দ্বারা স্থলে ও জলের অন্ধকরে পথের দিশা পাওয়া যায়। যখন তারকাসমূহ আলোহীন হয়ে যায় তখন পথচারীর পথ হারানোর সম্ভাবনা থাকে।’ (মুসনাদে আহমাদ ৩/১৫৭) অর্থাৎ যে জনপদ আলেম শূন্য হয় সে জনপদের মানুষ ভ্রান্তিতে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই শতভাগ। সুতরাং যেমন নিজেদের রক্ষার্তে আলোর যত্ন নিতে হয় তেমনি ভ্রষ্টতা থেকে মুক্তির জন্য আলেমগণকে যেমন যত্ন নিতে হবে। তাদের সম্মান ও শ্রদ্ধাভরে দেখতে হবে। আলেমদের বিপক্ষে দাঁড়ানো যাবে না। যতক্ষণ আলেম সঠিক রাস্তায় থাকবে ততক্ষণ আলেমগণের অনুসরণ করতে উম্মত বাধ্য। আলেমগণ যদি সঠিক পথে থাকে আর ওই সময়ে যদি ওই আলেমের বিরোধিতা বা তাঁর সাথে শত্রুতা করা হয় তখন ধ্বংসের উপরকরণ ধেয়ে আসে। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন তা স্পষ্ট ভাষায় জাতিকে সতর্ক করেছেন। উম্মতকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
হজরত আবু বকর (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ইরশাদ করতে শুনেছি যে, তুমি হয়ত আলেম হও, অথবা তালেবে এলম হও, অথবা মনোযোগ সহকারে এলম শ্রবণকারী হও, অথবা ইলম ও আলেমদের মহব্বতকারী হও। পঞ্চম হইওনা। নতুবা ধ্বংস হয়ে যাবে। পঞ্চম প্রকার এই যে, তুমি ইলম ও আলেমদের সাথে শত্রুতা পোষণ কর। (তিবরানী, মাজমায়ে যাওয়ায়েদ-১/৩২৮) আমরা যদি অতীত ইতিহাস দেখতে যাই ইতিহাস এ হাদিসের সাক্ষ্য বাহন করে। যুগে যুগে যারাই আলেমদের বিরুদ্ধে শত্রুতা করেছে তারাই ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। ধ্বংসের অনল তাদের জ্বালিয়ে পুড়ে শেষ করে দিয়েছে। সুতরাং সর্বযুগের জন্য একটি কথা-আলেমদের বিরুদ্ধে না গিয়ে তাদের সহযোগী হোন। সফলতাই আসবে জীবনে ও রাষ্ট্রে।
লেখক : পরিচালক, ইসলাহ বাংলাদেশ
আশরাফাবাদ, কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা





