পোশাক শিল্পে কাজের পরিবেশ উন্নয়নে গঠিত যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের জোট ‘অ্যালায়েন্স’ নির্ধারিত সময়ে ফিরতে রাজি হলেও ইউরোপের ক্রেতাজোট ‘অ্যাকর্ড’ সহসা দেশ ছাড়বে না। নির্ধারিত সময় শেষে সরকার তাদের ছয় মাস বাড়তি সময় দিলেও কারখানা পরিদর্শন অধিদফতরের রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেলের (আরসিসি) সক্ষমতা অর্জন পর্যন্ত তারা এদেশে কাজ করতে চায়। তবে বাড়তি ছয় মাসের মধ্যে আরসিসি শক্তিশালী হবে বলে আশা করছে তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। এ সময়ের মধ্যেই অ্যাকর্ড তাদের কার্যক্রম গোটাবে বলে আশা করছেন সংগঠনটির নেতারা। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় উঠে আসে।
বৃহস্পতিবার বিজিএমইএ’র কার্যালয়ে সংগঠনটির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে ক্রেতাজোট অ্যাকর্ড। এতে বক্তব্য দেন অ্যাকর্ডের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য অ্যাডওয়ার্ড সাউথহল ও বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান। এ সময় বিজিএমইএ’র সহসভাপতি ফারুক হাসান ও মাহমুদ হাসান খান, অ্যাকর্ডের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য এইচঅ্যান্ডএমের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা কার্ল গার্নার ফার্গলিন, শ্রমিক নেতা রায় রমেশ চন্দ্র, আমিরুল হক আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাকর্ডের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য অ্যাডওয়ার্ড সাউথহল বলেন, আরসিসি অ্যাকর্ডের কার্যক্রম বুঝে নিতে এখনো প্রস্তুত নয়। আরসিসি সক্ষম হয়ে ওঠার পরই অ্যাকর্ড তার কার্যক্রম গোটাবে। সে ক্ষেত্রে অ্যাকর্ডের কাজের সময় বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।
বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট বলেন, অ্যাকর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আরসিসির তৈরি হওয়ার পর তারা দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে যাবে। ওই পর্যন্ত বেশি সময়ের দরকার হলে তা তাদের দিতে হবে। তবে ছয় মাসের মধ্যে আরসিসি কার্যক্রম বুঝে নিতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মাসে অ্যাকর্ডের কার্যক্রমের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র সভাপতি বলেন, সরকার অ্যাকর্ডের মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে। ফলে আদালতের বিষয়টিও সরকার দেখবে। বিজিএমইএ সুপারিশ করতে পারে কিন্তু অ্যাকর্ডের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সরকারকেই নিতে হবে।
২০১৭ সালের আইএলও, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও ইউনিগ্লোবালের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারের দুজন মন্ত্রী, বিজিএমইএ ও এফবিসিসিআইয়ের শীর্ষকর্তাদের বৈঠকে ইউরোপের ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ডকে নতুন করে ৬ মাসের সময় দেওয়া হয়। চুক্তি অনুয়ায়ী দেশে কাজ করা দুই ক্রেতাজোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কার্যক্রম পরিচালনার সময় ৩১ মে পর্যন্ত।
২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ নিয়ে ক্রেতা দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে কারখানা পরিদর্শনে ইউরোপীয় ২২৮টি ক্রেতার সমন্বয়ে গঠিত হয় অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ, যা সংক্ষেপে অ্যাকর্ড হিসেবে পরিচিতি পায়। তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের জোটের নাম হয় ‘অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স সেফটি ইনিশিয়েটিভ’, যা অ্যালায়েন্স নামে পরিচিত।
কাজ শেষে এসব জোটের দেশে কার্যক্রমের বিরোধিতা করছে বাংলাদেশের শিল্প মালিকরা, সরকারও তাতে সায় দিচ্ছে। বাংলাদেশে পোশাক কারখানা ভবনের কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন ও সংস্কার কাজ তদারক করে জোট দুটি। সংবাদ সম্মেলনে অ্যাকর্ড জানিয়েছে, তারা এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ করতে পেড়েছে। ইতোমধ্যে অ্যাকর্ডের সদস্য ১ হাজার ৬২০ পোশাক কারখানার ত্রুটি সংস্কার করেছে। অন্যদিকে অ্যালায়েন্সের ৬৬৪ কারখানার ত্রুটি সংস্কারকাজ প্রায় ৮৯ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ ছাড়ার পর শ্রম মন্ত্রণালয়ের রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেল (আরসিসি) ওইসব কাজের দায়িত্ব নেবে।