অপরাধ

আমেরিকা কানাডায় পাচার হচ্ছে ইয়াবা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২০ ডিসেম্বর, ২০২০

ঢাকা ও চট্রগ্রামের বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার হচ্ছে ইয়াবা। আর এ পাচারে সহযোগিতা করছে সিঅ্যান্ডএফ। মূলত এক্সপোর্ট কার্গোকে ব্যবহার করে এক শ্রেণির সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বিদেশে ইয়াবা পাচারে জড়িয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি রাজধানীর রামপুরায় নিউইয়র্কে পাচারের প্রস্তুতির সময় বিশেষ কৌশলে রাখা ইয়াবা জব্দ করা। এছাড়া বিমানবন্দরের এক্সপোর্ট কার্গোর ভেতর থেকে ৩৯ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, গত দুই বছর ধরে প্রতি মাসেই এই চালানগুলো পাচার হচ্ছে। ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। এর মধ্যে থেকে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত এক বছরে ইয়াবার কমপক্ষে দশটি চালান মধ্যপ্রাচ্যে পাচার করা হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে বিভিন্ন প্যাকেটের আড়ালে চালান পাচার হচ্ছে। দেশগুলোর মধ্যে আছে-  আমেরিকা, কানাডাসহ সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, বাহরাইন, ইরাক। তাছাড়া এবছরে এক মাসেই প্রায় পাঁচটি চালান সিঙ্গাপুরে পাচার হয়েছে।

সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি) এবং পুলিশের ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট অনুসন্ধানে নেমে দেখেছে, ইয়াবা চালান পাচারের জন্য অভিবাসী কর্মীদের বাহক হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ওষুধের প্যাকেট পৌঁছে দিলে উপকার হবে, এমন আবেগ দেখিয়ে নতুন অভিবাসী কর্মীদের কাজে লাগাচ্ছেন।

ডিএনসির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, বিমানবন্দরে কোনও থ্রিডি স্ক্যানার না থাকায়, এই চালানগুলো ধরা পড়েছে না। ভুয়া প্রাপকের ঠিকানায় পাঠানো চালান পৌঁছানোর পরে আবার সঠিক গন্তব্যে যাচ্ছে। তখন ঐ প্যাকেট থেকে বের করে নতুন প্যাকেট করা হচ্ছে। প্যাকেটগুলো সঠিকভাবে চেক না করা বা অতি আধুনিক স্ক্যানার না থাকায় এই চালানগুলো চোখ ফাঁকি দিতে পারছে।

ডিএনসির এই কর্মকর্তা বলেন, সর্বশেষ গত মাসে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি সুরক্ষা ইউনিটের মালামাল কার্টুনের অভ্যন্তর থেকে প্রায় ৩৯ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। যা কার্গো বিমানে সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় ডিএনসি ইতোমধ্যে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে। সিন্ডিকেটটির অন্যতম মাস্টারমাইন্ডসসহ আরও সাত জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা বিমানবন্দরে সিঅ্যান্ডএফ (কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং) এজেন্ট ব্যবসায়ের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। তদন্তের স্বার্থে গ্রেফতারকৃত পাঁচজনসহ অন্যদের নাম ঠিকানা বলা যাচ্ছে না।

গত ৮ ডিসেম্বও জিনস প্যান্টের ওয়েস্ট বেল্টে প্লাস্টিকের ফিতা বসিয়ে এর ভেতর ইয়াবা বড়ি ঢুকিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের সময় ৪ জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় বিশেষ কৌশলে লুকানো প্রায় ৩ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।

খিলগাঁও থানার পুলিশ জানায়, গত রোববার রাতে রাজধানীর বনশ্রী এলাকার জে ব্লকের ৭ নম্বর রোডে অভিযান চালিয়ে ৮০টি ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী চক্রের সদস্য নাহিদ পারভেজকে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁর তথ্যের ভিত্তিতে একই এলাকা থেকে নাহিদের আরও তিন সহযোগী মিজানুর, ইমাম ও রাজীবকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তাঁরা জানান, জিনসের প্যান্টের ওয়েস্ট বেল্টে প্লাস্টিকের ফিতা বসিয়ে এর ভেতরে ইয়াবা ভরে যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করে থাকেন।

জিনসের প্যান্টের পার্সেল জিপিও থেকে পাঠাতেন। গতকাল সোমবারও তাঁরা এমন একটি পার্সেল নিউইয়র্কে পাঠানোর জন্য জিপিওতে জমা দিয়েছেন। তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে আজ বিকেলে খিলগাঁও অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার জুলফিকার আলীর নেতৃত্বে পুলিশ জিপিওতে অভিযান চালিয়ে পার্সেলটি জব্দ করে।

জুলফিকার আলী বলেন, পার্সেলের ভেতরে জিনসের তিনটি ফুলপ্যান্ট ও একটি থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট এবং এক জোড়া জুতা পাওয়া যায়। প্যান্টের ওয়েস্ট বেল্টে ঢোকানো একটি প্লাস্টিকের ফিতায় ৩০টি করে ইয়াবা পাওয়া যায়। এভাবে উদ্ধার করা ৬৮টি প্লাস্টিকের ফিতার ভেতরে ২ হাজার ৪০টি ইয়াবা জব্দ করা হয়।

বিমানবন্দর সিঅ্যান্ডএফ (কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরয়ার্ডিং) এজেন্ট সমিতির সেক্রেটারি ফারুক আহমেদ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না যে কোনও এজেন্ট জেনে-শুনে ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। যদি এমনটা হয় তাহলে এজেন্টদের অজান্তে হয়েছে। তারা কাস্টসম কর্মকর্তাদের সমানে প্যাকেট খোলেন। এমন কোনও সুযোগই নেই।

এ বিষয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ-উল আহসান বলেন, বিমানবন্দরে ৩৯ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ হওয়ার পরে শুল্ক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও এজেন্ট সমিতির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমরা আরও স্ক্যানার স্থাপনের জন্য বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। তাছাড়া প্যাকেটগুলো আরও নিবিড়ভাবে পরীক্ষার কথা বলেছি।

এএইচএম তৌহিদ-উল আহসান বলেন,আমরা বিমানবন্দরের প্রতিটি ইঞ্চি কাভার করার জন্য আরও কিছু সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছি। আরও দক্ষতার সাথে কাজ করার জন্য প্রশিক্ষিত জনশক্তি বাড়ানোর কথা বলেছি। এছাড়াও প্রতিটি প্যাকেট পরিষ্কার স্ক্যানিং নিশ্চিত করতে বিমানবন্দরের জন্য ইতোমধ্যে ১১ টি নতুন এক্স-রে মেশিন কেনার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে ডিএনসির অপর এক উচ্চ কর্মকর্তা বলেন, আমরা স্থানীয় সিন্ডিকেটের সঙ্গে কয়েকজন বিদেশি নাগরিকরেও সম্পৃক্ততা পেয়েছি। ওই বিদেশিদের সন্ধানের জন্য ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়ার পরিকল্পনা করছি।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) মোসাদ্দেক হোসেন রেজা বলেন, তদন্তে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। আমরা দ্রুতই জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে পারব বলে আশা করছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads