তালেবানের আগ্রসনের মুখে পলায়নপর আফগান নাগরিকদের ঠাঁই দিতে যুক্তরাষ্ট্র যে অনুরোধ করেছে, সেটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, আমরা এটাকে দুভাবে দেখছি। একটা হচ্ছে, ইতিবাচক। আমাদের ওপর আমেরিকান প্রশাসনের যথেষ্ট আস্থা আছে। তারা আমাদের মূল্যায়ন করে। এ কারণে তারা আমাদের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে কাউকে নেওয়ার মতো অবস্থা নেই। বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তাদের এটা বলেছি। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) যে আমাদের অনুরোধ করেছে, এটা হচ্ছে প্লাস পয়েন্ট। আমাদের সামর্থ্য নেই তাদের অনুরোধ রাখার। সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই অনুরোধ রাখতাম।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শোক দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের যদি ক্ষমতা থাকত আমরা অবশ্যই তাদের অনুরোধ বিবেচনা করে দেখতাম, কিন্তু বাস্তবে আমাদের সেই অবস্থান নেই।
গত সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, শনিবার যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলামের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠায় ওয়াশিংটন। ওই প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তোমরা তো অনেক রোহিঙ্গা রেখেছো। আমরা তাদের হেল্পও করছি। আমাদের অনেক বন্ধু আফগানিস্তানে আছেন, তারা দ্রুত কাবুল ছাড়তে চায়। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি ইস্যু। বাংলাদেশ যদি ওদের স্বল্পদিনের জন্য আশ্রয় দেয়, তাহলে অসহায় মানুষগুলোকে দ্রুত সরানো যাবে। এরপর রোববার রাতেই রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে জবাব পাঠায় ঢাকা।
আব্দুল মোমেন বলেন, জবাবে আমরা বলেছি যে, তোমরা যে আমাদের কথা ভেবেছ, এজন্য ধন্যবাদ। রোহিঙ্গা নিয়ে এমনিতেই আমরা বড় কষ্টে আছি। আমরা ছোট দেশ। অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। আমাদের তো এত জায়গা নেই। আমাদের অর্থনীতিও তোমাদের পর্যায়ের না। তাই তোমাদের অনুরোধ রাখতে পারছি না। নতুন করে এটা লোকও আশ্রয় দেওয়া আমাদের জন্য অসম্ভব।
আফগানিস্তানে তালেবানের পুনরুত্থান ইস্যুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, তালেবান আফগানিস্তানে জনগণের সরকার গঠন করলে তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসবে বাংলাদেশও।
আফগানিস্তানে তালেবান সরকার গঠন করলে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেমন হবে, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যদি তালেবান সরকার গঠন করে আর সেটা যদি জনগণের সরকার হয়, অবশ্যই তাদের জন্য আমাদের সাহায্য ও বন্ধুত্বের দরজা খোলা।
অনুষ্ঠান শেষে বিদেশের মিশনগুলোয় পাসপোর্ট নবায়ন বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এই ইস্যু নিয়ে আমরা অনেক দিন আলাপ করেছি। আমরা এ নিয়ে অনেক দিন ধরে বকবক করছি। কারণ অনেক বাঙালির পাসপোর্ট নবায়ন হচ্ছে না। তারা পাসপোর্ট পাচ্ছেন না। এর মূল কারণ হচ্ছে পাসপোর্টের প্রিন্টিং আটকে গেছে। এমনকি এখানেও আমরা অনেক পাসপোর্টের জন্য বসে আছি। প্রিন্টিং মেশিনের গন্ডগোল। পাসপোর্ট তো আমরা ইস্যু করি না, এটা পাসপোর্ট অফিস করে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করে। তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে। এখন এটা নিয়ে তারা আগে থেকে চিন্তা করেনি কেন, আমি জানি না।