একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার আলামত আদালতের অনুমতি ছাড়াই নষ্ট ও ধ্বংসের অভিযোগ করেছেন সরকার নিয়োজিত প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান। আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবীর যুক্তিতর্কের শুনানিতে তিনি এ কথা বলেন। বলেন, নিরস্ত্র মানুষের সমাবেশে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ বর্বরোচিত ও নৃশংস গ্রেনেড হামলার মতো ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে নেই।
গতকাল সোমবার নাজিমউদ্দিন রোডে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে যুক্তিতর্কের শুনানিতে তিনি এ অভিযোগ করেন। এদিন মামলার যুক্তিতর্কের ১১০তম দিনের শুনানি চলে। আজ মঙ্গলবারও শুনানি চলবে। এ পর্যন্ত ৪৪ আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ হলে সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে এ মামলার রায়ের দিন ধার্য হবে।
শুনানিতে লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে ষষ্ঠ দিনের মতো যুক্তিতর্ক পেশ করেন তার আইনজীবী নজরুল ইসলাম। বাবরের পক্ষে তার আইনজীবী এ মামলার সাক্ষী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম (পিডব্লিউ-১৫৩), মোহাম্মদ শামসুল ইসলামের (পিডব্লিউ-১৫৪) সাক্ষ্য থেকে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন। এছাড়া আসামি মুফতি হান্নান ও মাওলানা আবদুস সালামের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে যুক্তিতর্ক তুলে ধরে আসামি পক্ষ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল কাহহার আকন্দের (পিডব্লিউ-২২৫) সাক্ষ্য থেকে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন বাবরের আইনজীবী। পরে যুক্তিতর্ক অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতবি করেন আদালত।
শুনানিতে আদালত আসামি বাবরের আইনজীবীকে প্রাসঙ্গিক যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে তাগিদ দিয়ে বলেছেন, ‘যুক্তিতর্ক সাক্ষ্য ও জবানবন্দি থেকে করুন।’
আদালতে সরকার পক্ষে প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান, বিশেষ পিপি মো. আবু আবদুল্লাহ ভুঁইয়া, আকরাম উদ্দিন শ্যামল, অ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা, আমিনুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
একুশে আগস্টের ঘটনায় পৃথক মামলায় মোট আসামি ৫২ জন। এর মধ্যে জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ (মানবতাবিরোধী অপরাধ), হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান ও শরীফ সাহেদুল আলম বিপুলের (ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা) মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এ তিনজনের নাম বাদে এখন আসামি ৪৯ জন। এর মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ জন পলাতক। লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম সালাম পিন্টুসহ ২৩ আসামি কারাগারে ও ৮ জন জামিনে রয়েছেন।
সরকার পক্ষে ২২৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। গত বছরের ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দের জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
গত ২৭ ডিসেম্বর সরকার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের শেষ দিন এ মামলার আসামি তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টুসহ ৪৯ আসামির সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছে সরকার পক্ষ। গত ২৩ অক্টোবর থেকে সরকার পক্ষে যুক্তি পেশ শুরু হয়।
বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা ঘটে। ওই হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২২ জন নিহত হন। গুরুতর আহত হন তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কয়েকশ নেতাকর্মী। সেদিন হামলার শিকার অনেকে এখনো শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার বয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছেন।
জামিনে থাকা আসামিরা হলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মো. আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সি আতিকুর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার আবদুর রশীদ, সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম।
কারাগারে আছেন লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন। তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন আহমদ, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দারসহ ১৮ জন এখনো পলাতক। পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট নোটিশ জারি রয়েছে।