আগামী শিক্ষাবর্ষেই সংশোধিত বই

আগামী শিক্ষাবর্ষেই সংশোধিত বই

সংরক্ষিত ছবি

শিক্ষা

প্রাথমিক-মাধ্যমিকে ইংলিশ ভার্সনের বইয়ে ভুল

আগামী শিক্ষাবর্ষেই সংশোধিত বই

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯

এ বছরও নির্দিষ্ট সময়ে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থী নতুন বই হাতে পেয়েছে। তবে ভুল আর অনুবাদের অসঙ্গতি এবারো রয়ে গেছে সব শ্রেণির ইংলিশ ভার্সনের বইতে। গত বছর ইংলিশ ভার্সনের বইয়ের ভুলের চিত্র গণমাধ্যমে বেরিয়ে এলেও এবার পাঠ্যবইয়ে রয়ে গেছে সেই পুরনো সঙ্কট। বাংলা বইয়ের সঙ্গে ইংলিশ ভার্সনের বইয়ে আছে অসঙ্গতি। যার ফলে এবারো খেসারত দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বইয়েও ভুল আছে। উচ্চ মাধ্যমিকের বইয়ের ভুলের কারণে ইংলিশ ভার্সনের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় নানা রকমের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। একদিকে নেই ইংলিশ ভার্সনের উপযুক্ত শিক্ষক, অন্যদিকে পাঠ্যবইয়ের ভুলের কারণে সঙ্কটে পড়েছে প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ইংলিশ ভার্সনের সব শিক্ষার্থী। সব শ্রেণির ইংলিশ ভার্সনের বইয়ে রয়েছে অনুবাদের ভুল আর অনেক অসঙ্গতি।

সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে বাংলা মাধ্যম ও ইংরেজি মাধ্যমের বইয়ের পাঠ্যক্রমের ব্যাপক ব্যবধান, ইংরেজি ভার্সনের বইয়ের অনুবাদের ঘাপলা, ভুল আর নানা অসঙ্গতি ধরা পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলা ভার্সনের বই হুবহু অনুবাদ করার নিয়ম রয়েছে। সেভাবেই হচ্ছে বলে দাবিও করে আসছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। কিন্তু বাস্তব চিত্র তার উল্টোটা।

সরকারি বিধান বলছে, পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন প্রণয়ন হয় বাংলা ভার্সনের বই থেকেই। পরে বাংলা ভার্সনের প্রশ্নপত্র অনুবাদ করা হয় ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থীদের জন্য। কিন্তু প্রথম শ্রেণি থেকে এইচএসসি এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাতেও বইয়ে নেই এমন অনেক অংশ থেকে প্রশ্ন করা হচ্ছে। যে কারণে শিক্ষার্থীরা এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না। গেল দুই বছরের বছরের প্রাথমিক সমাপনী, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় এমন অসংখ্য প্রশ্ন তৈরি হয়েছে যা বাংলা ভার্সনে থাকলেও ইংরেজি ভার্সনে নেই। আবার ইংরেজি ভার্সনের কোনো কোনো পরীক্ষাতে অর্ধশতাধিক ভুল তথ্য থাকার ঘটনা ঘটেছে। এ রকম ভুল রয়ে গেছে নতুন বইয়ে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পর্যালোচনা করে পাওয়া গেছে অনেক অসঙ্গতি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপে এনসিটিবি। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণির বাংলা মাধ্যমের শিশুদের জন্য ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ বইয়ের সঙ্গে গরমিল হয়েছে ইংলিশ ভার্সনের বইয়ে। ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’ নামের অধ্যায়ে বাংলা মাধ্যমের বইয়ে যে তথ্য দেওয়া আছে তার হদিস মিলছে না ইংলিশ ভার্সনের বইয়ে। বাংলা মাধ্যমের বইয়ের লেখা হবহু অনুবাদ করার কথা থাকলেও ইংলিশ ভার্সনের বইয়ে পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়েছে অধ্যায়ের অনেক তথ্য।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রত্যাশা ছিল, নতুন বইয়ের ভুল সংশোধন হবে, কিন্তু হয়নি। আবার গত বছরও জেএসসির সৃজনশীল প্রশ্নপত্রের বহু নির্বাচনী অংশের প্রশ্নে একাধিক ভুল ধরা পড়ে। সঙ্কট ছিল উচ্চ মাধ্যমিকেও। এ স্তরের শিক্ষার্থীরা তাদের নতুন শিক্ষাবর্ষের সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত বইয়ের ভুল সংশোধন চান।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, বাংলা মাধ্যম ও ইংরেজি মাধ্যমের পাশাপাশি যে ‘ইংরেজি ভার্সন’ রয়েছে, তা কারো অজানা নয়। এ মাধ্যমে আমাদের প্রতি যে অবহেলা হচ্ছে, তা অনেকেরই অজানা। ইংরেজি ভার্সনের বই থেকে শুরু করে এসএসসির প্রশ্নপত্রের সব স্তরেই আমরা অবহেলার শিকার হচ্ছি।

অথচ বাংলা মাধ্যমের বইগুলোর সম্পূর্ণ ইংরেজি সংস্করণ হলো ইংরেজি ভার্সনের বই। প্রাথমিক থেকে প্রতিটি ক্লাসে কোনো না কোনো বই আছে যা বাংলা মাধ্যমের বই থেকে ভিন্ন। বাংলা মাধ্যমের বিশাল বিশাল চ্যাপ্টার আমাদের ইংরেজি ভার্সনের অনেক বইয়ে শেষ করা হয়েছে কয়েকটি লাইনের মধ্যেই। কিন্তু পরীক্ষা দিতে গেলে দেখা যায়— প্রশ্ন এসেছে বাংলা মাধ্যমের বই থেকে। এই শিক্ষার্থী বলছে, অবহেলার শিকড় ছড়িয়েছে পাবলিক পরীক্ষায়ও।

গত বছর দেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠান নটর ডেম কলেজ থেকে বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা ঠিকই ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্য পেয়েছে কিন্তু মেধার পরিচয় দিয়ে জিপিএ-৫ পাওয়া ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। একই অবস্থা হয়েছে রাজউক উত্তরা মডেল, রেসিডেন্সিয়াল মডেল, ভিকারুন নিসা নূনসহ অনেক নামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের।

রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বলছে, ভর্তি পরীক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় থেকে যেসব প্রশ্ন এসেছে তার অধিকাংশই তাদের অধ্যায়ে নেই। একই অধ্যায়ে বাংলা মাধ্যমের বইয়ে সেই প্রশ্নের উত্তর আছে ঠিকভাবেই। আবার এনসিটিবির অনুমোদন ছাড়া বাজারে ভুলে ভরা বই রয়েছে অসংখ্য। তারা এসব অসঙ্গতিকেও শিক্ষার্থীদের ক্ষতির কারণ বলে উল্লেখ করেছেন।

রাজউক উত্তরা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ইংরেজি ভার্সনের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলছিলেন, ইংরেজি ভার্সন পাঠ্যবইয়ে ভুলের কথা এখন সবাই জানেন। তাড়াহুড়োর কারণে প্রতিবছরই পাঠ্যবইয়ের ইংরেজি ভার্সনে ভুল থাকে। অসংখ্য বানান ভুল এবং বাক্যগঠনে অসঙ্গতির প্রমাণ মিলছে প্রতিবছর। অথচ যারা এসব অনুবাদ করেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তারা বলছেন, কর্তৃপক্ষের ভুলে কেন শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

জানা গেছে, পাঠ্যবইয়ের ভুলের সঙ্গে ইংলিশ ভার্সনের প্রশ্নের ভুল গত দুই বছরেই ঘটেছে বহুবার। যা ব্যাপক সমালোচনারও জন্ম দিয়েছে। প্রায় প্রতিটি পরীক্ষায়ই প্রশ্নপত্রের ভুলের শিকার হচ্ছেন ইংলিশ ভার্সনের শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি সন্তোষজনক নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক প্রীতিশ কুমার সরকার বলেছেন, প্রথমে লেখা হয় বাংলা মাধ্যমের বই, তারপর ছাপার জন্য যখন যন্ত্রস্থ করা হয় তখন কিছুটা পরিবর্তন করেই ইংলিশ ভার্সনের কাজ হয়। মূলত এ জন্যই ভুল ত্রুটি থেকে যায়। কিন্তু এর দায়-দায়িত্ব নেবে কে? জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের আরেক কর্মকর্তা বলেন, হ্যাঁ ভুল আছে এটা ঠিক। তবে গত বছর গণমাধ্যমে উঠে এসেছিল ভুলগুলো। কিন্তু সংশোধন সম্ভব হয়নি। আগামী বছর শিক্ষার্থীরা পাবে সংশোধিত নতুন বই। তিনি বলেন, আমরা নতুন বইয়ের কাজ শুরু করলেই এ কাজে হাত দেব। এসব বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি। অবশ্যই এসব সংশোধন করতে আমরা কাজ করব। নতুন বই পর্যালোচনা করেই আগামী বছরের জন্য বই প্রস্তুত করা হবে।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads