টানা বর্ষণ ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আখাউড়ায় অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেঙ্গে গেছে হাওড়া নদীর বাঁধও। এতে করে নতুন নতুন এলাকায় পানি ডুকে যেন বন্যায় পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। প্রবল স্রোতে ভেসে গেছে ফসলি জমি ও পুকুরের মাছ। পানিবন্দি হয়ে পড়ছে অসংখ্য লোকজন। এদিকে আকস্মিক এ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে নানা ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, শনিবার সকালে দিকে আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ এলাকায় হাওড়া নদীর বাঁধ ভেঙ্গে ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এর আগে শুক্রবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া টানা সন্ধ্যা পযর্ন্ত বৃষ্টিতে আখাউড়া-আগরতলা সড়কের দুপাশের কালিকাপুর, বীরচন্দ্রপুর, আবদুল্লাহপুর, বঙ্গেরচর, রহিমপুর ও সাহেবনগর ৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে করে কৃষকের রোপা ফসলি জমি ও সবজিক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে বেশ কয়েকটি পুকুরে চাষ করা মাছ।
তাছাড়া সকালে হাওড়া বাধ ভেঙ্গে নতুন করে কর্নেল বাজার, ইটনা, আইড়ল, বড়লৌহঘরসহ ৪টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়। তাৎক্ষনিক ভাবে খবর পেয়ে সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অংগ্যজাই মারমা, ইউপি চেয়ারম্যান মো: মাহবুবুল আলম চৌধুরী দ্বিপকসহ সংশ্লিষ্ট লোকজনারা ছুটে গিয়ে খোঁজ খবর নেন।
এদিকে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট এলাকাও। এতে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে উভয়দেশের পাসপোর্টধারী যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাছাড়া বৃষ্টির পানিতে কৃষকের সবজি ক্ষেত, ফসলি জমি তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কার্যালয় ও কাস্টমস হাউজ।
এদিকে আখাউড়া-আগরতলা সড়কের বন্দর এলাকার কিছু অংশেও উঠেছে পানি। তবে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে তাদের অফিস যাবার রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তাদের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য রহিম মিয়া জানান, ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বেশকিছু বাড়ি ঘরের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাছাড়া স্থলবন্দর- কালিকাপুর সড়কে পানি উঠে গেছে। আখাউড়া ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, ভারী বৃষ্টির ফলে ইমিগ্রেশন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
ইউপি সদস্য একেএম মিয়াজি বলেন, ফজর নামাজ শেষ করে এসে দেখতে পান হাওড়া ভেঙ্গে পানি আসতেছে। লোকজনকে নিয়ে বাধ বাধার চেষ্টা করা হলেও শেষ পযর্ন্ত রক্ষা করা যায়নি। পানির স্্েরাতে পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে চাষীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
মনিয়ন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল আলম চৌধুরী দ্বিপক জানান, হাওড়া ভেঙ্গে ৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কি ভাবে বাধ মেরামত করা যায় চেষ্টা চলছে। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের কিভাবে সহযোগিতা করা যায় এ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, টানা বৃষ্টিতে বেশ কয়েকটি এলাকায় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অনেক সবজি ক্ষেত, ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। দুএক দিনের মধ্যে পানি চলে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না। তবে কী পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অংগ্যজাই মারমা বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে নানা ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। বন্যা দুর্গতদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য আশ্রয়ন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আকস্মিক এ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের খোঁজ খবর নিতেও শুরু করেছেন বলে তিনি জানায়।