গেম খেলার জন্য এখন অনেকেরই প্রথম পছন্দ সনি কিংবা মাইক্রোসফটের গেমিং কনসোল। তবে এসব কনসোল বাজারে আসার আগে ভিডিও গেম খেলার জন্য কম্পিউটারই ছিল একমাত্র অবলম্বন। ৮০-এর দশকের কথাই ধরা যাক। তখন ঘরে ঘরে কম্পিউটারের ব্যবহারও তেমন একটা ছিল না।
তখন অল্প কিছু গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ছিল যারা নিয়মিত বাজারে এনেছে নতুন নতুন ভিডিও গেম। সেগা এর মধ্যে অন্যতম। সাড়া জাগানো বেশ কিছু গেম নির্মাণ করেছিল এ প্রতিষ্ঠানটি।
মজার বিষয় হলো দারুণ জনপ্রিয়তা পাওয়া গেমগুলো আবারো নতুন করে নিয়ে এসেছে সেগা। ভিন্নতা হলো এবার গেমগুলো খেলা যাবে অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস ডিভাইসে। ফলে ৮০-এর দশক কিংবা ৯০-এর দশকে যারা এসব গেম নিয়েই পড়ে থাকতেন, তাদের জন্য আবারো এই গেমগুলো খেলার সুযোগ তৈরি হলো। আর যারা শুধু এসব গেমের কথা শুনেই গিয়েছে, কিন্তু কখনো খেলার সুযোগ হয়নি, তারাও এবার গেমগুলো পেয়ে যাবে হাতের মুঠোয়।
‘সেগা ফরএভার’ শিরোনামে এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে গেমগুলো পুনরায় উন্মুক্ত করেছিল সেগা। এখানে আছে মোট ২০টি গেম।
সেগার এ গেমগুলোর মধ্যে দশটি গেমের খবর থাকছে আজ-
স্ট্রিটস অব রেজ ক্ল্যাসিক
১৯৯১ সালে উন্মুক্ত হওয়া এ গেমটিতে একজন গেমারকে স্ট্রিট ফাইটিং কপ হিসেবে খেলতে হয়। গেমারের মূল লক্ষ্য থাকে সন্ত্রাসীদের গডফাদারকে ঘায়েল করা। গেমটির প্রতিটি চরিত্রেরই আছে ভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং দক্ষতা।
ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে মাল্টিপ্লেয়ার গেম হিসেবেও এটি খেলার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া গেমটি সকল ধাপ পার হতে পারলে খেলা যাবে স্ট্রিটসঃ অব রেজ ২।
সনিক দ্য হেজহগ
সেগার একটি সাড়া জাগানো গেম হলো ‘সনিক দ্য হেজহগ’। ১৯৯১ সালে বাজারে আসার পর অল্প সময়েই ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে ক্ল্যাসিক এ গেমটি।
এ গেমটি না খেললেও এ ধরনের গেমের সঙ্গে অনেকেরই পরিচয় আছে। উঁচু নিচু রাস্তা দিয়ে সকল বাধা পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়াই এ গেমের মূল লক্ষ্য। চলার পথে বিভিন্ন কয়েন, রিং এগুলোও সংগ্রহ করতে হবে একজন গেমারকে।
এ গেমটি ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি ক্ল্যাসিক সনিক গেমও পুনরায় উন্মুক্ত করেছে সেগা।
গোল্ডেন অ্যাক্স ক্ল্যাসিক
১৯৮৯ সালে উন্মুক্ত হওয়া একটি সফল আর্কেড গেম এটি। গেমের মূল তিনটি চরিত্রই এখানে প্রধান আকর্ষণ যাদের প্রত্যকের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন দক্ষতা, কলাকৌশল, অস্ত্র এবং জাদুবিদ্যা।
গোল্ডেন অ্যাক্স ৮০-এর দশকের একটি অন্যতম স্ট্যান্ডআউট আর্কেড গেম। এই গেমটির মূল নির্মাতা ছিলেন মাকোতো উচিডা যিনি অল্টার্ড বিস্টেও কাজ করেছিলেন।
গেমটির সেগা ফরেভার সংস্করণের মাল্টিপ্লেয়ার মোড থাকায় কয়েকজন মিলেও খেলা যাবে।
কিড ক্যামিলিয়ন ক্ল্যাসিক
সেগার এ গেমটি গেমারদের জন্য আনা হয় ১৯৯২ সালে। শতাধিক স্টেজ রয়েছে গেমটিতে। এর মধ্যে কিছু গোপন এলাকা রয়েছে যেগুলো একজন গেমারকে খুঁজে বের করতে হয়।
গেমের মূল চরিত্রের নাম কিড ক্যামিলিয়ন যে গেমারকে সহযোগিতা করবে ভিলেনকে খুঁজে বের করতে। এ ছাড়া গেমের মধ্যে পাওয়া যাবে জাদুর মুখোশ যার মাধ্যমে পাওয়া যাবে কিছু বাড়তি সুবিধা।
ক্র্যাজি ট্যাক্সি ক্ল্যাসিক
রেসিং ঘরানার গেমগুলোর মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ক্র্যাজি ট্যাক্সি। ১৯৯৯ সালে গেমটি বাজারে আসে। এ গেমটির মাধ্যমে একজন গেমার যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করে। এর বিনিময়ে পাওয়া যায় নির্দিষ্ট ভাড়া। এর সঙ্গে বিভিন্ন সময় মিলবে বোনাসসহ আরো কিছু সুবিধা। তবে এখানে উল্লেখ্য গাড়ি চালানোর সময় কোনো নিয়মের বালাই থাকবে না, একেবারে পাগলের মতো চালাতে হবে। এখানেই গেমটির নামের সার্থকতা।
অরিজিনাল ড্রিমকাস্ট সংস্করণের মতো এই ক্ল্যাসিক সংস্করণের আর্কেড মোড ও অরিজিনাল মোড থাকছে। অনস্ক্রিন কন্ট্রোলারের পাশাপাশি ব্লুটুথ কন্ট্রোলার ব্যবহার করেও এটি খেলা যাবে।
কমিক্স জোন ক্ল্যাসিক
১৯৯৫ সালে বাজারে আসা এ গেমটি ‘বিট দেম আপ’ ঘরানার। তবে গেমের সব ঘটনাই ঘটবে কমিকের মধ্যে যেমনটা রয়েছে এর নামেই। প্রতিটি স্ট্রিপ থেকে শত্রুদের হটিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে গেমারকে। প্রতি ধাপেই রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে আসার সময় মিলবে নানা পুরস্কারও।
সুপার মানকি বল
এই গেমটি ২০০১ সালের। গেমটি খেলার সময় একজন গেমারকে বলের মধ্যে বানরকে রেখে সেই বলটি দিয়ে পার করতে হবে গোলকধাঁধা। এ রকম প্রায় ১২৫টি গোলকধাঁধা রয়েছে পুরো গেমে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় একজন গেমারকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কলা সংগ্রহ করতে হবে।
২০১০ সাল থেকেই গেমটির মোবাইল সংস্করণ থাকলেও সেগা ফরএভার সংস্করণে চারটি বানরের মধ্য থেকে পছন্দের একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।
এর বাইরে একই থিম নিয়ে আছে আরো চারটি মিনি গেম-মানকি টার্গেট, মানকি গলফ, মানকি বোল এবং মানকি বেজ। এর মধ্যে শেষেরটি শুধুই ট্যাবে খেলা যাবে।
দ্য রিভেঞ্জ অব শিনবি ক্ল্যাসিক
এখানে গেমার খেলবে জো মুশাসির চরিত্রে যার মাস্টারকে হত্যা করেছে নিও জিড। গেমারের কাজ হবে এ সন্ত্রাসী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া। এমনই কাহিনী নিয়ে সাজানো হয়েছে ‘দ্য রিভেঞ্জ অব শিনবি’ গেমটি। ১৯৮৯ সালে বাজারে আসা এ গেমটিকে অনেকেই সেগার সেরা গেম হিসেবেও আখ্যায়িত করেছিলেন। শত্রুদের ঘায়েল করতে অন্যান্য অস্ত্রের পাশাপাশি শুরিকেন নামক একটি বিশেষ জাপানি অস্ত্রও ব্যবহার করে জো। তবে শুরিকেন শেষ হয়ে গেলেও চিন্তার কিছু নেই। চিটকোড তো আছেই।
অল্টার্ড বিস্ট ক্ল্যাসিক
গেমারকে এখানে খেলতে হবে অল্টার্ড বিস্ট হিসেবে যার থাকবে নিজেকে খুনি হিসেবে রূপান্তরের সুযোগ। লক্ষ্য হবে বিভিন্ন চড়াই উতরাই পেরিয়ে অ্যাথেনাকে উদ্ধার করা।
১৯৮৮ সালে এ গেমটি আনে সেগা। তখনকার মতোই স্মার্টফোন সংস্করণেও গেমার বিভিন্ন চিটকোড ব্যবহার করতে পারবেন।
স্পেস হ্যারিয়ার ২
স্পেস হ্যারিয়ারের পরের সংস্করণ হিসেবে ১৯৮৮ সালে এসেছিল স্পেস হ্যারিয়ার ২। গেমটির মূল চরিত্রগুলোকে একটি চেকার বোর্ডের মতো স্থানে দৌড়াতে এবং উড়তে দেখা যাবে। এখানেই নানা বাধা পেরিয়ে বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করতে হবে গেমারকে।