ষাট বছরেরও বেশি সময় পর যাত্রীর আসনে নয়, আজ রোববার থেকে গাড়িচালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন সৌদি নারীরা। দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে গালফ উপকূলের ১ কোটি ৫১ লাখ নারী পাচ্ছেন হুইল স্টিয়ারিং নিয়ন্ত্রণের সুযোগ। এক অর্থে আজকের দিনটি সৌদি আরবের জন্য ঐতিহাসিক।
কয়েক দশক ধরে সৌদি আরবে নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। মোহাম্মদ বিন সালমান যুবরাজ পদে অভিষিক্ত হয়ে দেশ উন্নয়নে নানাবিধ সংস্কার-কার্যক্রম হাতে নেন। সংস্কার-কার্যক্রমের মধ্যে ছিল নারীর গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়টি। বিশ্লেষকরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার অবসান সামাজিক গতিশীলতা আনতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি অবদান রাখবে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। গাড়ি শিল্প অনেক দিন ধরেই অস্থিতিশীল সৌদি আরবের। নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় এ শিল্প চাঙা হবে বলে ধারণা অনেকের।
বিশ্বের বিভিন্ন গাড়ি নির্মাতার কাছ থেকে যানবাহন বিক্রির খতিয়ান সংগ্রহ করে বেস্ট সেলিং কারস ব্লগ ডটকম। এর প্রতিষ্ঠাতা ম্যাট গাসনিয়েরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সৌদি আরবে নতুন গাড়ি বিক্রি ২২ দশমিক ৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৭৬৭টিতে।
অন্যদিকে সৌদি আরবের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) একটি বড় অংশ আসে জ্বালানি তেল থেকে। কিন্তু গত বছর পণ্যটির উৎপাদন কমে যাওয়ায় দেশটির জিডিপি দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। সার্বিক পরিস্থিতি দেশটিকে ঠেলে দিয়েছে অর্থনৈতিক মন্দায়। গাসনিয়ের বলছেন, ২০১৭ সালের অস্থিতিশীলতা চলতি বছরও কাটেনি।
অ্যাকাউন্ট্যান্সি ফার্ম পিডব্লিউসি বলছে, সৌদি সড়কে ২০২০ সালের মধ্যে নারীর সংখ্যা ৩০ লাখে পৌঁছবে। গাড়ি চালানোয় প্রশিক্ষণ নিতে এরই মধ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন এক হাজার নারী। তিনি আরো জানান, সৌদি আরবে নারীদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বাড়বে গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তবে তা সময় সাপেক্ষ। ফলে কাজের সুযোগ বাড়বে নারী গাড়িচালক প্রশিক্ষকের। জেদ্দার ইফফাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ড্রাইভিং স্কিলস প্রোগ্রাম শুরু করেছে ফোর্ড। যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি নির্মাতার মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা বিভাগের বিপণন পরিচালক ক্রিস্টাল ওর্দেম বলেন, একদিনেই সবকিছু হবে না। এজন্য প্রয়োজন সময়।
তার মতে, একবারে সড়কে না নেমে কিছু সৌদি নারী গাড়ি চালানোয় প্রশিক্ষণ নেবেন। সৌদি আরবে আনুষ্ঠানিকভাবে নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হতো না। ১৯৫৭ সাল থেকে এ নীতি চলে আসছে। আজ থেকে এ নীতিতে আসছে পরিবর্তন। এ নীতি পরিবর্তনে গত বছর ডিক্রি জারি করেন সৌদির রাজা সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ। ডিক্রির আওতায় নারীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া শুরু করবে রাজতন্ত্র। তার ছেলে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি আরবের অর্থনীতিতে তেলনির্ভরতা কমাতে ‘ভিশন-২০৩০’ শীর্ষক সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। এ সংস্কার কার্যক্রমে রয়েছে সৌদি আরবের বেকারত্বের হার ১১ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা। সেই সঙ্গে জনশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ২২ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে উন্নীত করা।
গালফ রিসার্চ সেন্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে গিয়ে নারীদের অতিক্রম করতে হয় নানা প্রতিবন্ধকতা। গাড়ি চালানোয় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই এসব প্রতিবন্ধকতা কাটবে। গাড়িশিল্প সংশ্লিষ্ট সৌদি নারীর কর্মক্ষেত্রে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে এরই মধ্যে। সৌদি আরবে টয়োটা গাড়ির ডিস্ট্রিবিউটর আবদুল লফি জামিল মটরস জানিয়েছে, তারা শোরুমগুলোয় ১০০ নারীকর্মী নিয়োগ দিয়েছে। তারা নতুন গাড়ি কিনতে আসা নারীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন। ফোর্ড প্রশিক্ষণ দিয়েছে তাদের নারীকর্মীদের। এই নারীরা ফোর্ডের ব্যাক অফিসে কাজ করতেন। সৌদি নারীরা পছন্দের গাড়িটি সম্পর্কে জানতে পারবেন তাদের কাছ থেকে।