প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম সোনালি যুগের সিনেমার নায়ক ছিলেন। প্রথম সিনেমা ‘ধারাপাতে’ নায়ক হয়ে আলোচনায় আসেন ষাটের দশকে। এরপর অনেকগুলো সিনেমায় নায়ক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।
টেলিভিশন নাটকে রয়েছে তার বিশাল অবদান। টানা ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে টিভি নাটকে অভিনয় করছেন তিনি। মঞ্চে নিয়মিত অভিনয় করেছেন এক সময়। এ ছাড়া অসংখ্য বেতার নাটকেও অভিনয় করেছেন।
হাসান ইমাম পেয়েছেন স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আজীবন সম্মাননাসহ নানা পুরস্কার। এখন আর তেমন অভিনয় করেন না। হাসান ইমাম বলেন, ‘শারীরিক অবস্থার কারণে এখন আর বাইরে শুটিং করি না। প্রায় নাটকে এখন ইনডোরে শুটিং করে থাকি। করোনার কারণে তা-ও হচ্ছে না। বাসাতেই থাকি। শিল্পীদের মধ্যে আমি সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ। বয়স হলেও যত দিন পারি অভিনয় করে যেতে চাই। এ বয়সে তো আর পুরোপুরি ভালো থাকা যায় না, তার পরও যতটুকু আছি ভালোই আছি। সুস্থতার জন্য মোটামুটি নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করি।’
বর্ণাঢ্য জীবনের এ সময়ে এসে জীবনটাকে কীভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে এ গুণিজন বলেন, ‘জীবন অনেক সুন্দর। বেঁচে থাকাটা আরো সুন্দর। বেঁচে থাকার চেয়ে সুন্দর আর কিছু হতে পারে না। একটা বিচিত্র জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে এখনো বেঁচে আছি। জীবন নিয়ে ধারণা হচ্ছে, মানুষের বয়স বাড়ে, মানুষ বুড়ো হয়, কিন্তু মন কখনো বুড়ো হয় না। মন চির যৌবনে থেকে যায়। এ দেশে যত মহামারী-দুর্যোগ এসেছে, সব সময়ই মাঠে গিয়ে কাজ করেছি। বয়সের কারণে চাইলেও এখন তা সম্ভব নয়। তার পরও ঘরে বসে যতটুকু সম্ভব কাছের মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি।’
অভিনয় না করলেও অভিনয়ের মধ্যেই থাকতে চান হাসান ইমাম। বলেন, ‘যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে অভিনয়ে কাজ করছি, তাই এখন আর অভিনয় ছাড়া ভালোই লাগে না। কখনোই মনে হয় না অভিনয় ছেড়ে দিই কিংবা অবসর নিই। বরং অভিনয় করতেই ভালো লাগে। অভিনয় করে তৃপ্তি পাই।’
বর্তমান সময়ের নাটকের মান নিয়ে হাসান ইমাম বলেন, ‘এখনো আমাদের নাটকগুলো ভালো হচ্ছে। যারা অভিযোগ করেন বর্তমান নাটক ভালো হয় না, আমার মনে হয় তারা না দেখেই এমন মন্তব্য করেন। তারা হয়তো ভারতের সিরিয়াল নাটক দেখে অভ্যস্ত। ভারতের চেয়ে আমাদের সিরিয়াল অনেক ভালো। ভারতের সিরিয়ালে তেমন কোনো বিষয়বস্তু নেই। কড়া মেকআপ, কূটনামি, পারিবারিক দ্বন্দ্বের প্রাধান্যই বেশি দেখানো হয়। মূলত শেখার কিছু নেই। অন্যদিকে আমাদের নাটকে জীবনের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে। তবে প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিকদের লেখা থেকে নাটক কম হচ্ছে।’ হাসান ইমামের দৃষ্টিতে একজন শিল্পীর মৌলিক গুণ হলো ভালো মানুষ হওয়া, সৎ থাকা, মানুষসহ সব সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা থাকা।
নতুন শিল্পীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তাদের মধ্যে অনেকেই ভালো করছে, আরো ভালো করতে হবে। ভালো করার প্রতিযোগিতা থাকতে হবে। বিদেশপ্রীতি হলে চলবে না। দেশকে ও দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে। নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চা বাড়াতে হবে।’ না পাওয়ার কোনো কষ্ট নেই এই অভিনয়শিল্পীর। ভালো লাগা থেকেই মনের আনন্দে সব কাজ করেন। তাই হাসান ইমামের কোনো হতাশাও নেই।