ফিচার

অপসংস্কৃতির আগ্রাসনের কবলে যুবসমাজ

  • আবদুল্লাহ আল-আমীন
  • প্রকাশিত ২৩ নভেম্বর, ২০১৮

সংস্কৃতি মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, সমাজকে রাখে নিরাপত্তার বলয়ে। বর্তমান সমাজে অস্থিরতার মূল সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে অপসংস্কৃতি। অপসংস্কৃতির আগ্রাসনে আবদ্ধ যুবসমাজ উত্তরণের উপায় নিয়েই আজকের আলোচনা। সংস্কৃতি বা কালচার ও তাহজিব দুটি সমার্থক শব্দ। সব সংস্কৃতির উৎস হচ্ছে বিশ্বাস। আমরা যেহেতু মুসলমান, তাই আমাদের লালিত বিশ্বাস ইসলাম। আমাদের সংস্কৃতি পবিত্র কোরআন ও হাদিস নির্দেশিত ওহিভিত্তিক সংস্কৃতি। যে সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে হেরা গুহায়, যার পথ দেখিয়েছেন স্বয়ং মহান আল্লাহপাক। যার ধারক-বাহক হচ্ছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, সাইয়েদুল আম্বিয়া নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সেই সংস্কৃতির ছোঁয়ায় অসভ্য বর্বর আরব জাতি বিশ্ববরেণ্য জাতি হিসেবে গড়ে উঠেছিল। কালের পরিক্রমায় সেই সংস্কৃতির ঢেউ বাংলার দেয়ালেও এসে পৌঁছেছে। আজ কুফরি শক্তিগুলোর নানামুখী সংস্কৃতির আগ্রাসনে সার্বক্ষণিক আর্বজনায় লাভগুরু, সানডে নাইট, মাস্তি, আনলিমিটেড, নিত্যবালা, কিকএস এবং হার্টটু হার্টের মতো বিকৃত প্রোগ্রামের মাধ্যমে আজকের যুবসমাজ ও তরুণ-তরুণীদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এক অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে। মনুষ্যত্বের উচ্চাসন থেকে তাদের নামিয়ে আনা হয়েছে নিকৃষ্ট পশুদের কাতারে।

বহুমাত্রার অপসংস্কৃতির ধাপ পেরিয়ে এখন ভিনদেশী সংস্কৃতি রূপসজ্জা করে চলছে। এসব অপসংস্কৃতি আমাদের দেশের তরুণ ও যুবসমাজ খুব সহজেই গ্রহণ করছে। এ ধরনের অপসংস্কৃতি থেকে দেশের তরুণ সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে না বাঁচাতে পারলে খুব তাড়াতাড়ি আমরা ধ্বংসের পথে ধাবিত হব।

অপসংস্কৃতির ধারা-অপধারার মধ্যে রয়েছে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে চিত্রস্থির ধারণ, টেলিভিশন, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, অত্যাধুনক ভিডিও গেমস, ভ্রাম্যমাণ চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, যাত্রা, নাটক, জারিগান সংস্কৃতি বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের মাধ্যমে আধুনিক ইন্টারনেট ব্যবহার করে যুবসমাজের মধ্যে উগ্রতা তৈরি হয়েছে। এই মনোভাব পরিবর্তন করতে ব্যাপক আত্মশুদ্ধির প্রয়োজন।

বিভিন্ন দিবস উদযাপনের নামে সংস্কৃতিতে যোগ হচ্ছে নয়া দিগন্ত, এপ্রিল ফুল, ভ্যালেন্টাইন ডে, থার্টি ফার্স্ট নাইট ও পহেলা বৈশাখের নামে বর্বর যুগের মতো তরুণ-তরুণীদের অবাধ চলাফেরা, নগ্নতা, বেহায়াপনা, নাচগান, যাত্রা, থিয়েটার, মেলা প্রদর্শনী, নবান্ন উৎসব ও নাগর দোলাসহ এই হচ্ছে অপসংস্কৃতির আগ্রাসনে যুবসমাজের করুণ পরিণতি। আজ ইসলামবিদ্বেষীরা এসব অপসংস্কৃতির মাধ্যমে মুসলমানদের মূল্যবান সম্পদ পবিত্র ঈমানটুকু কেড়ে নেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র করছে। যারা আজ অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে জাতিকে সঠিক পথের দিশা দেওয়ার কথা, তারা আজ টিভি চ্যানেলের নোংরা প্রোগ্রাম আর অবাঞ্ছিত অশ্লীল সিনেমায় লিপ্ত হয়ে নিজেদের জাহান্নামের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমাদের হাতে রয়েছে ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে তিন লাখ মসজিদের তিন লাখ মিম্বার। সেই তিন লাখ মিম্বার থেকে যদি আমরা অপসংস্কৃতির ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে জাতিকে সতর্ক করি, তাহলে সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন বাংলার জমিন থেকে অপসংস্কৃতির জাল ছিন্নভিন্ন হয়ে সভ্য সুস্থ সংস্কৃতির জয়যাত্রা শুরু করা সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।

আজ যারা অপসংস্কৃতির জাল বিস্তার করে দেশকে একটি ইসলামবিদ্বেষী রাষ্ট্র বানানোর স্বপ্ন দেখছে, তাদের আমরা উপমহাদেশের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলতে চাই- যারা মুসলমানদের রক্ত নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিল, যারা মুসলমানদের তাহজিব-তমদ্দুন, সভ্যতা-সংস্কৃতিকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করেছিল, উপমহাদেশের সূর্যসন্তানরা তাদের নাম-নিশানা উপমহাদেশের মাটি থেকে সাত সাগর তেরো নদীর ওপারে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads