অপরাধের স্বর্গরাজ্য পূর্বাচল

প্রতীকী ছবি

অপরাধ

অপরাধের স্বর্গরাজ্য পূর্বাচল

  • ইমদাদুল হক দুলাল, রূপগঞ্জ
  • প্রকাশিত ৪ মার্চ, ২০২০

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এশিয়ার প্রথম স্যাটেলাইট শহর বাস্তবায়ন চলছে রূপগঞ্জের পূর্বাচল নতুন শহর নামে। ইতোমধ্যে এখানে সাড়ে ৬০০ বিঘায় রাস্তা ও ড্রেনেজের কাজ প্রায় শেষ। তাই দিনে কর্মমুখর পরিবেশ থাকলেও রাত হলেই হয় ঘুটঘুটে অন্ধকার। চারদিকে নীরব নিস্তব্ধতা। আর এ কারণেই ঘটে যায় ভয়ঙ্কর সব অপরাধ। ঢাকার বাইপাস, কুড়িল বিশ্বরোড ছাড়াও শীতলক্ষ্যা আর বালু নদীতে যাতায়াতের সুবিধায় অপরাধীরা নিরাপদ জোন হিসেবে ব্যবহার করছে এই পূর্বাচলকে। শুধু তাই নয়, মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, ধর্ষণ, হত্যাসহ নানা অপরাধ ঘটছে এখানে। আর থানা পুলিশের সদস্য কম অজুহাতে দায় এড়িয়ে যেতে চায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, পুরো পূর্বাচলজুড়েই চলছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই। হাট বাজার ও নির্জন পথে জনসাধারণের টাকাপয়সা ছিনতাইসহ পূর্বাচলের ছোট-বড় সবগুলো সড়কেই হচ্ছে অপরাধ। চলছে ব্যাটারিচালিত গাড়ি ও বৈধ যানবাহন ছিনতাই। আর ছিনতাই করেই শেষ নয়, চালককে হত্যা করে পূর্বাচলের নির্জন কোনো স্থানে কিংবা মহাসড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে মরদেহ। এমনই এক ঘটনায় গত ১১ জানুয়ারি উপজেলার বাগবের এলাকার অটোচালক মজির উদ্দিনের অটো ছিনতাই করে নিয়ে যায় একটি চক্র। এ সময় তাকে হত্যা করে পূর্বাচলের ২নং সেক্টরের একটি পরিত্যক্ত প্লটে মরদেহ ফেলে যায়। পরে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে ৩ জানুয়ারি আতলাপুর এলাকার মিলন নামের এক অটো চালককে হত্যা করে পূর্বাচলের ১০নং সেক্টরে ফেলে যায়। একই কায়দায় পূর্বাচলের ৪নং সেক্টর এলাকায় গত ডিসেম্বরে অটো ছিনতাই করে কালিগঞ্জ এলাকার অটো চালক ফরিদকে গলা কেটে মরদেহ ফেলে যায়।

শুধু হত্যাই নয়। নির্জন এলাকা হওয়ায় প্রায় নিত্য ঘটে ধর্ষণের ঘটনাও। এমন ঘটনা ঘটেছে গত ৯ ডিসেম্বর। ইফসুফগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রীকে পাতিরা এলাকার আজিজুল হকের ছেলে আবুল কালাম আজাদ ও তার সংঘবদ্ধ চক্র স্কুলে যাওয়ার পথে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে ধর্ষণ করে। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি রূপগঞ্জের তারাবো পৌরসভা এলাকায় পৌর ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি সোহান ও তার বন্ধুরা স্থানীয় অপর এক ৯ম শ্রেণির ছাত্রীকে তুলে নিয়ে দুদিন আটকে রেখে ধর্ষণ করে। পরে তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তবে ওই ছাত্রলীগ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করে স্থানীয় ছাত্রলীগ। এসব হত্যা ও ধর্ষণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ডাকাতির ঘটনাও। ইছাপুরা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রোমান মোল্লা জানান, গত ৫ জানুয়ারি রাত ১টার দিকে পুলিশ পরিচয়ে বাজারের দুটি স্বর্ণের দোকানে একটি ডাকাতদল হানা দেয়। এ সময় বাজার কমিটির লোক হিসেবে তিন তলা বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে জানতে চাইলে তারা নিজেকে পুলিশ পরিচয় দেয়। তবে তাদের হাতে থাকা রাইফেল ও ছুড়ি দেখে সন্দেহ হয়। পরে ৯৯৯-তে কল দিলে ঘটনাস্থলে র্যাব ও পুলিশ আসলেও ততক্ষণে ডাকাতরা ডাকাতি করে পালিয়ে যায়।

সূত্র জানিয়েছে, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প নির্জন হলেও আশপাশের গ্রামগুলোও নিরাপদ নয়। গরু ব্যবসায়ী ও গরু পালনকারীরা রয়েছেন ডাকাতির আতঙ্কে। রাত জেগে পাহারা বসিয়েও মিলছে না সুরাহা। গত ১০ জানুয়ারি উপজেলার মধূখালী গ্রামের চান মিয়ার ৫টি গরু নিয়ে যায় ডাকাতের দল। বাধা দিলেই খুন করে পালিয়ে যায়। এর আগে গত নভেম্বরে গুতিয়াবো নামাপাড়া এলাকার গৃহবধূ সুলতানার ৮টি গরু নিয়ে যায় ডাকাত দল। তাদের দাবি পূর্বাচল নতুন শহর এলাকায় ব্যাপকভাবে অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটে। পুলিশ বেশ কয়েকটি ঘটনার রহস্য উদঘাটনও করে। সম্প্রতি এখানে র্যাব বেশ কয়েকটি ছিনতাই চক্র ও ডাকাত গ্রেপ্তার করলেও থামছে না এসব অপরাধকা্ল।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ওসি মাহমুদুল হাসান বলেন, রূপগঞ্জের জনসংখ্যার তুলনায় পুলিশ সদস্য অনেকটা কম। তবে পুলিশের কোনো গাফিলতি নেই। প্রতিটি ঘটনা তদন্তে পুলিশ কাজ করছে। পূর্বাচলসহ অপরাধপ্রবণ এলাকায় নজর দারি বাড়ানো হয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads