মুক্তমত

অনাবাসিক পাখির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

  • প্রকাশিত ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০

আলিসা জাহান মিম

 

 

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের একটি বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে পক্ষিকুলের অবস্থান। শুধু প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষাই নয় বরং নানাভাবে শোভাবর্ধনকারী এই পাখি। প্রাণিবিজ্ঞানীর মতে, দুই ধরনের পাখি হয়ে থাকে, আবাসিক এবং অনাবাসিক পাখি। ৬৫০ প্রজাতির পাখির মধ্যে বাংলাদেশে অবস্থান করে ৩৬০ প্রজাতি। প্রতিবছর নভেম্বর মাসের শুরুর দিকে উত্তর মেরু, সাইবেরিয়া ইউরোপ, এশিয়ার কিছু অঞ্চল ও হিমালয়ের আশপাশের বিভিন্ন শীতপ্রধান অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে প্রায় ৩০০ প্রজাতির পাখি এদেশে আগমন করে শুধু নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্যের সন্ধানে। কেননা আগত দেশগুলোর শীতের আবহাওয়া অত্যধিক মাত্রায় অসহনীয় এবং নিদারুণ খাদ্যের অভাব এসব অতিথি পাখির নিজ বাসস্থান ছেড়ে আসার পেছনের মূল কারণ।

সেই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ হওয়ায় এসব অনাবাসিক পাখির জন্য উত্তম আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিগণিত। আন্তর্জাতিকভাবে জলচর পাখির জন্য স্বীকৃত ২৮টি স্থান বাংলাদেশের সীমানায় রয়েছে, এটিও একটি ক্রিয়াশীল কারণ। যেসব অতিথি পাখি বাংলাদেশে প্রতিবছর আসে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জলপিপি, পানকৌড়ি, বক, ডাহুক, বালিহাঁস, টেকুর, কোরা, গুলিন্দা, কোম্বডাক প্রভৃতি। এসব অতিথি পাখির বিচরণক্ষেত্র হয়ে ওঠে দক্ষিণাঞ্চলের সুন্দরবন, মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওর, সিরাজগঞ্জের চলনবিল, চিড়িয়াখানার জলাশয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের খালবিল, হাওর-বাঁওড়। পাখিদের কলতান, ডানা ঝাপটানোর শব্দ প্রভৃতি পরিবেশকে নতুনরূপে সজ্জিত করে, আর এই মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে পক্ষীপ্রেমীরা। সবকিছু মিলিয়ে প্রকৃতি সেজে ওঠে সম্পূর্ণ নতুন সাজে। আর গড়ে ওঠে পাখির এক অভয়ারণ্য পরিবেশ।

এরকম সময়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী, পেশাদার শিকারি এবং নৈতিক বিবর্জিত শৌখিন মানুষ পাখি নিধনে মত্ত হয়। শিকার করার উপায়স্বরূপ বন্দুকের গুলি, কারেন্ট জাল, বিষটোপ, নানারকমের ফাঁদ প্রভৃতি ব্যবহার করে। এক অভিনব কৌশল হিসেবে বাঁশির সুর পাখির ডাকের সঙ্গে মিলিয়ে করা হয়। যে কারণে ভুল করে ফাঁদে পড়ে এসব অতিথি পাখি। পাখি ধরে তা চড়া দামে বাজারে বিক্রি করা হয়। আবার অনেক সময় হাতবদলের মাধ্যমে বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় স্থান পায় এসব পাখির মাংস।

১৯৭৪ সালের বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী পাখি শিকার করা ফৌজদারি অপরাধ। এ সম্পর্কিত আইনে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ সাজা এক বছরের কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা। একই কাজের পুনরাবৃত্তি হলে দুই বছরের কারাদণ্ড, ২ লাখ টাকা এবং উভয় দণ্ড প্রযোজ্য ক্ষেত্রবিশেষে। দুঃখের বিষয় যে, আইন প্রণয়ন করা হলেও তা যথাযথ প্রয়োগ করা হচ্ছে না। স্থানীয় প্রশাসন কিংবা কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে উদাসীন। সাধারণ জনগণ এক্ষেত্রে অসচেতন। এই অসচেতনতা আর উদাসীনতা দায়ী পাখি নিধনের পেছনে। দিন দিন অসাধু ব্যবসায়ী আর পেশাদার শিকারিদের ঔদ্ধত্য বেড়ে যাচ্ছে। যার দরুন অতিথি পাখির আগমন কমে আসছে। আর এভাবেই যদি চলতে থাকে, প্রশাসন যদি কোনো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে দেশীয় অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং অতিথি পাখির আগমন একটা সময় হারিয়ে যাবে। আমাদের সবার উচিত এ বিষয়ে সচেতন হওয়া।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads