স্বীকৃতি পাওয়া সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের চালিয়ে যাওয়া অনশন কর্মসূচিতে অসুস্থ শিক্ষকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গতকাল মঙ্গলবার অনশন কর্মসূচির নবম দিনে আরো ১৭ শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ১৭১ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়েছেন। এর মধ্যে ৮০ জন শিক্ষককে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তার উত্তর পাশে গত ২৫ জুন থেকে এই কর্মসূচি চলছে। এদিকে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে এমপিও নীতিমালা শিথিল করে সব স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে স্বাধীনতা নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন।
জানতে চাইলে অনশনরত নন-এমপিও শিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিনয় ভূষণ রায় বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যে তারা আশ্বস্ত হতে পারছেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর যে প্রস্তাব দিয়েছেন সেটা যদি প্রধানমন্ত্রী দেখেন তাহলে দ্রুত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে। এমপিওভুক্তির বিষয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি এভাবেই চলবে বলে জানান তিনি।
অনশনস্থলে উপস্থিত হয়ে লেখক ও সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ সাংবাদিকদের বলেন, এভাবে শিক্ষকদের, বিশেষ করে নারী শিক্ষকদের রাস্তায় অবস্থান করাটা বিব্রতকর। আলোচনা করে সরকার সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দিলে শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাবেন।
এমপিওভুক্তির দাবিতে গত ১০ জুন থেকে প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান করে আসছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সরকার থেকে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় গত ২৫ জুন থেকে তারা আমরণ অনশন করছেন। বর্তমানে সারা দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় ৫ লাখ। তাদের বেতন-ভাতা বাবদ মাসে খরচ হয় প্রায় ৯৫০ কোটি টাকা। এর বাইরে স্বীকৃতি পাওয়া নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ৫ হাজার ২৪২টি। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ৭৫ থেকে ৮০ হাজার। স্বীকৃতির বাইরে আছে ২ হাজারেরও বেশি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের সূত্র মতে, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হলে এবং ওইসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করলে মাসে আরো প্রায় ১৫০ কোটি টাকা খরচ হবে। যদিও সরকারের পরিকল্পনা হলো হাজারখানেক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা।
নীতিমালা শিথিল করে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবি : আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে এমপিও নীতিমালা শিথিল করে সব স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে স্বাধীনতা নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্ত করা এবং যোগদানের দিন থেকে চাকরির বয়স গণনা করার দাবিও তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন স্বাধীনতা নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ মো. এশারত আলী, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু।