অনন্য উদাহরণ নূরে আলম

নূরে আলম

ছবি : বাংলাদেশের খবর

রাজনীতি

অনন্য উদাহরণ নূরে আলম

  • সৈকত ইসলাম সাগর
  • প্রকাশিত ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

রাজধানীর খিলগাঁও টু মোহাম্মাদপুর রুটে যেসব গণপরিবহন চলাচল করে তাদের কাছে খুবই পরিচিত প্রতিবন্ধী নূরে আলম। বয়স ২২ কী ২৩। শারীরিকভাবে অক্ষম হলেও মনের জোর প্রবল। অন্য দশজন সাধারণ মানুষের মতো সেও কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে চায়। তাই হাত পাতার পথ এড়িয়ে নেমে পড়েছে কাজে।

দিন কয়েক আগে বৌদ্ধমন্দির থেকে শাহবাগের উদ্দেশে মিডলাইন বাসে উঠি। বাসের গেট দিয়ে উঠতেই দেখি দেড় ফুট উচ্চতার একজন মানুষ। প্রথম দেখাতেই নূরে আলমকে ভিক্ষুক মনে হতে পারে। কারণ, রাজধানীতে এমন অসংখ্য প্রতিবন্ধী রয়েছে, যারা কাজ না পেয়ে ভিক্ষার থালা হাতে পথে নেমে পড়েছে। কিন্তু নূরে আলম তাদের চেয়ে ব্যতিক্রম। সে ওই পথে না গিয়ে বাসে হেলপার-কনট্রাক্টরের কাজ করছে। অন্যান্য বাসের হেলপারদের মতো সে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলতে পারে না। ভাড়াও আদায় করতে পারে না। সে বসে বসেই ডেকে ডেকে বাসে যাত্রী তুলছে। স্টপেজ ত্যাগ করার পর যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া তুলছে। যে কেউ তাকে দেখলে অবাক হবে। আমি অবাক হয়েছি। যে, তার মতো একজন প্রতিবন্ধী কারো বোঝা হয়ে নয়, নিজের ওপর নিজে ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। কাজ করে রোজগার করছে। সেই টাকা দিয়ে পরিবারের সদস্যদেরও ভরণ-পোষণ করছে।

যারা সক্ষম হয়েও ভিক্ষার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পাতে, তাদের জন্য নূরে আলম এক অনন্য উদাহরণ। সে সাহসী, সে কখনো কাউকে ভয় পায় না। সে তার সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে।

তার মতো প্রতিবন্ধীরা যখন দেশের বোঝা না হয়ে, কোনো না কোনো কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করবে, সমাজ তখনই সমৃদ্ধ হবে। এজন্য সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। তাদের কর্মসংস্থানের পথ তৈরি করে দিতে হবে। মানসিকতা বদলে, সমাজ বিনির্মাণে সবাইকে এসব প্রতিবন্ধীর প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে। তবেই এরা কারো বোঝা হয়ে নয়, নিজের পায়ে নিজেরা ভর করে দাঁড়াতে পারবে। পথভ্রষ্ট না হয়ে তারা এগিয়ে যাবে সঠিক পথে। ধীরে ধীরে ভিক্ষার প্রবণতা থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারবে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা নূরে আলমও এখন অনেক ভালো আছে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পেরে সে সন্তুষ্ট। খোদার কাছে সে এর চেয়ে বেশি কিছু চায় না। চায় আগামী দিনগুলো যেন ভালো কাটে।

তার দৃষ্টিভঙ্গি যে কাউকেই ভাবিয়ে তুলবে। আত্মবিশ্বাসী এই মানুষটিও বদলাতে চায় সমাজ। সেও একটি সুন্দর দেশ গড়তে চায়, সে কারো বোঝা হয়ে থাকতে চায় না। সে চায় না তাকে করুণা করে কেউ কিছু টাকা দান করুক। সে চায় তার যতটুকুই আছে তা দিয়ে কিছু একটা করে সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে। সমাজ তাকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখুক। তার মতো যারা আছে তাদের কোনো না কাজে সম্পৃক্ত করে ভিক্ষার পথ থেকে মুক্তি দিক। তারাও যেন স্বনির্ভর হয়ে সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে। এটুকুই প্রত্যাশা নূরে আলমের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads