আপডেট : ০৮ August ২০২১
ব্রিটেনের শ্যানন পারসিফার নামের একটি মেয়ে। শ্যানন পারসিফার একজন স্কুলছাত্রী। বেশ কয়েক বছর আগে থেকে তার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। প্রমের দিন ঘনিয়ে আসছিল। আর অন্যান্য মেয়ের মতো শ্যাননের কাছেও এই দিনটি খুবই স্পেশাল ছিল। অনেকদিন ধরেই সে এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করছে। সে প্রমে কোন ড্রেস পরবে সেটা সে পছন্দ করেছিল প্রায় কয়েক মাস সময় নিয়ে। কিন্তু গ্রাজুয়েশনের দুই বছর আগে মেয়েটি কঠিন একটি রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য হয়। সে আর্থ্রাইটিসে ভুগছিল। আর এতে করে তার পুরো পৃথিবীই যেন পাল্টে যায়। এক মাস হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরে মেয়েটি লক্ষ্য করে সবাই তার দিকে নিষ্ঠুর দৃষ্টিতে তাকানো শুরু করেছে। তার সহপাঠীরা তাকে ভীষণভাবে উত্ত্যক্ত করত। আর সবসময় অপমান-অপদস্থ করত। এমন করতে করতে তার একাদশ শ্রেণির গ্রাজুয়েশনের দিন ঘনিয়ে আসে। শ্যানন চেয়েছিল প্রম অর্থাৎ গ্র্যাজুয়েশন উদযাপনের দিনে সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে অনেক মজা করবে। কিন্তু অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ফিরে আসে। মেয়েটির মা ক্লেয়ার কার্সটেনস জানায়, তার মেয়ে হঠাৎ করেই স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে এসে বলে আমি অনুষ্ঠানে যেতে পারব না। ক্লেয়ার বুঝতে পেরেছিল কিছু একটা হয়েছে। ক্লেয়ার তখন শ্যাননকে জিজ্ঞাসা করে তখন শ্যানন বলে তার সহপাঠীরা অনুষ্ঠানটি উদযাপন করার জন্য একটি রেস্টুরেন্টে যাওয়ার প্ল্যান করছে। কিন্তু কেউ তাকে নিমন্ত্রণ করেনি। আর এই সম্পর্কে কেউ তাকে কিছু বলেও নি। ক্লেয়ার আরো জানায় আমি আমার মেয়ের দিকে তাকাতেই পারছিলাম না। কারণ আমি তার জন্য কিছুই করতে পারছিলাম না। আর এরপরেই হঠাৎ করে ঘটনাটি সম্পূর্ণভাবে পাল্টে যায়। কেউ কল্পনাও করতে পারবে না ক্লেয়ার হঠাৎ করে তার মেয়ের একটি ছবি দেখতে পায়। আসলে এই ছবিটি শ্যানন তুলেছিল বেশ কিছুদিন আগে তাকে অনুষ্ঠানের দিন এই ড্রেসে কেমন লাগবে সেটা দেখার জন্য। হঠাৎ করেই তার মেয়ের ছবিটি ফেসবুক পেইজে শেয়ার করে দেয়। সেই সঙ্গে ক্যাপশনে লিখেছিল আমার মেয়েটি তার প্রম ড্রেস পড়ে আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সে তার প্রমে অর্থাৎ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারছে না। কিছুক্ষণ পরে সোশ্যাল মিডিয়া ইউজারেরা পোস্ট পড়ে কমেন্ট করতে থাকে যে কেন? কি হয়েছে? শ্যানন কেন প্রমে যেতে পারবে না? এই ধরনের অনেক কমেন্ট আসতে থাকে। ক্লেয়ার তখন তার মেয়ের পুরো গল্পটি শেয়ার করে। সে ভাবতেই পারেনি এরপর তার সঙ্গে কি হতে চলেছে। শহরটিতে মুহূর্তের মধ্যেই পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায়। পুরো শহরে এটি নিয়ে সমালোচনা হতে থাকে। মানুষ কমেন্ট করতে থাকে মেয়েটি অবশ্যই একটি বিশেষ দিন ডিজার্ভ করে। জানলে অবাক হবেন যে সবাই বলতে থাকে একমাত্র শ্যাননের জন্য আমরা সবাই মিলে গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠান আয়োজন করব। অসংখ্য মানুষ মেয়েটিকে সাপোর্ট করার জন্য উৎসাহ প্রকাশ করে। ক্লেয়ার জানায় আমি ভাবতেই পারিনি এমনটাও কোনোভাবে ঘটতে পারে। সে আরো বলে, আমি এসব মানুষদেরকে প্রথমবারের মতো দেখছি। আর তারাও কিনা আমার মেয়ের জন্য পার্টিতে আসবে, তাও তাকে সাপোর্ট করার জন্য। তাহলে আমি মা হয়ে কেন পারব না আমার মেয়ের জন্য একটি গ্রাজুয়েশন পার্টির আয়োজন করতে। পোস্ট করার একদিন পরেই ক্লেয়ার একটি ডেট ফিক্সড করে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় যতজন তার পোস্ট দেখেছে সবাইকে আমন্ত্রণ জানায়। এরপরে কি ঘটতে চলেছে? অনেক ঘটনার পরে সেই কাঙ্ক্ষিত দিনটি ঘনিয়ে আসে। ২২ জুলাই। মেয়েটির পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়স্বজনেরা তাকে সাপোর্ট করার জন্য চলে আসে। মেয়েটি এবং তার মা অনুষ্ঠানটি যেখানে আয়োজন করা হয়েছে সেখানে পৌঁছায় এবং এরপর তারা নির্বাক হয়ে যায়। শহরের পুরো রাস্তা যেন মানুষে পরিপূর্ণ। অথচ এই অসংখ্য মানুষের মধ্যে তারা কাউকেই চিনে না। সবাই তার মেয়ে শ্যাননকে সাপোর্ট করতে এসেছে। তারা শুধুমাত্র একাই আসেনি একটি বিশাল গ্রুপের বাইকাররাও জয়েন করেছে তাদের পার্টিতে। জানলে অবাক হবেন ১২০ জন বাইকার আসে বিভিন্ন শহর থেকে একমাত্র শ্যাননের গ্র্যাজুয়েশন পার্টিকে আনন্দময় করে তুলতে। একজন বাইকার জানায় আমরা যখন পোস্টটি দেখেছিলাম তখন মেয়েটির জন্য কিছু না করে আর থাকতে পারছিলাম না। আর ঠিক তখনই সকল বাইকাররা মিলে পার্টিতে আসার পরিকল্পনা করে ফেলে। প্রথমে মেয়েটিকে নিয়ে কিছুক্ষণ বাইক রাইড করেছিল। তারপর দুজন মিলে মেয়েটিকে শূন্যে তুলে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়। আপনারা হয়তো ভাবছেন অনুষ্ঠানটি বেশ ব্যয়বহুল ছিল। কিন্তু না, রেস্টুরেন্টের মালিকও নিজ থেকেই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করার জন্য যতটুকু তার পক্ষে সম্ভব সবটুকুই সে করেছিল। দেখে যেন মনে হচ্ছিল পুরো শহরই এখানে চলে এসেছে। সবাই মিলে গ্রুপ ফটো তুলতে থাকে। এতো অতিথি এসেছিল যে ফটোগ্রাফারকে সবার ছবি তোলার জন্য ২০ কদম পেছনে যেতে হয়েছিল। এভাবেই মেয়েটির জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিনটি সবচেয়ে ভালো দিনে রূপ নেয়। মেয়েটি সারা রাত ধরে তার আত্মীয়স্বজন এবং নতুন বন্ধুদের সঙ্গে পার্টিতে আনন্দ করতে থাকে। সে যেন নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারছিল না। মেয়েটি বলে আমি জীবনে কখনো কল্পনাও করতে পারিনি যে, এমন দিনও আমার জীবনে আসবে। অবশ্যই ক্লেয়ার এবং তার মেয়ে শ্যানন দুজনে যেন জীবনের সেরা উপহারটাই অচেনা সব মানুষদের কাছ থেকে পেয়েছিল। এটা সত্যিই এক অন্য রকম অনুভূতি। অনুষ্ঠানে যত মানুষ এসেছিল তারা প্রত্যেকেই পার্টি জমিয়ে তুলতে নিজের মতো করে আলাদা আলাদা প্ল্যান করে এসেছিল শুধুমাত্র মেয়েটিকে সাপোর্ট করার জন্য। হ্যাঁ এমন অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটেছিল শ্যাননের সঙ্গে। ঘটনাটি এখানেই শেষ হয়নি। এটি অনেক দূর পর্যন্ত গড়িয়েছে। অনুষ্ঠানটি নিয়ে শহরের প্রতিটি নিউজ পেপারে ছাপা হয়েছিল। এমনকি ব্রিটেনের রাজপরিবারের সদস্য এবং সেলিব্রিটিরাও মেয়েটিকে সাপোর্ট করার জন্য একেক জন একেক কাণ্ড ঘটিয়েছিল। অনুষ্ঠানের দুই সপ্তাহ পরেই প্রিন্স উইলিয়াম শ্যাননকে আমন্ত্রণ জানায়। আর কিছুদিন পরে বিখ্যাত মোটর সাইকেল সেন বায়ার্নও মেয়েটির সঙ্গে দেখা করে। আর এই ঘটনার পরে মেয়েটির জীবনের সমস্ত দুঃখ-কষ্ট, সহপাঠীদের জ্বালা-যন্ত্রণা সবকিছু শেষ হয়ে যায়। কেউ তাকে এখন আর দূরে ঠেলে দেয় না। সে যেন একজন সেলিব্রিটিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। কখনো কখনো এভাবেই শেষ হয়ে যাওয়া স্বপ্ন থেকে এক অন্য রকম বাস্তবতার জন্ম হয়। তাই সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়ার আগে নিজেকে শেষ করে দিবেন না। কারণ আপনার ক্ষেত্রেও জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন সবচেয়ে ভালো দিনে রূপান্তরিত হতে পারে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১