আপডেট : ২১ April ২০২১
নোয়াখালীর মোক্তার হোসেনের ১৮ এপ্রিল সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল। স্বাভাবিক সময় হলে তিনি এলাকা থেকে করোনা টেস্ট করে সরাসরি চলে যেতেন বিমানবন্দরে। কিন্তু লকডাউনে বিশেষ ফ্লাইট হওয়ায় তাকে টিকিট রি-ইস্যু করতে ঢাকায় সৌদি এয়ারলাইনসের অফিসে আসতে হয়েছে। তিনি ফ্লাইট পেয়েছেন আরো দুদিন পর। উঠেছেন নারায়ণগঞ্জে এক আত্মীয়ের বাসায়। লকডাউনে ঢাকায় আসা, থাকার ব্যবস্থা করার দুর্ভোগের পাশাপাশি তাকে খরচ করতে হয়েছে অতিরিক্ত ৩০ হাজার টাকা। শুধু মোক্তার নয়, বিশেষ ফ্লাইটে যাওয়া প্রায় সকল প্রবাসী এমন ভোগান্তিতে পোহাতে হচ্ছে। লকডাউনে ১৪ থেকে ২০ এপ্রিল আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করায় প্রবাসী কর্মীদের কাজে ফেরার অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। পরবর্তীসময়ে দাবির মুখে ৫টি দেশে ১২টি এয়ারলাইনসের মাধ্যমে বিশেষ ফ্লাইটে তাদের কর্মস্থলে ফেরার ব্যবস্থা করে সরকার। বিশেষ ফ্লাইটের কারণে কর্মস্থলে ফেরার সুযোগ সৃষ্টি হলেও ভোগান্তি বেড়েছে তাদের। প্রবাসী কর্মীদের কর্মস্থলে ফেরার বিষয়টি বিবেচনা নিয়ে লকডাউনে প্রবাসী কর্মীদের জন্য স্বাভাবিক ফ্লাইটের ব্যবস্থা রেখে সিদ্ধান্ত নিলে এমন ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল ইসলাম হাসান বলেন, প্রথমত সকল আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করা ভুল সিদ্ধান্ত। কোনো দেশ তো আমাদের জন্য নিষেধাজ্ঞা দেয়নি, আমরা সব বন্ধ করে দিলাম। এখন বিশেষ ফ্লাইট দিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে; কিন্তু সমন্বয় নেই। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৭৮৫টি ফ্লাইটে বিদেশ গিয়েছেন ১ লাখ ২৩ হাজার ৯৫১ জন। ফেব্রুয়ারিতে ৮২৯টি ফ্লাইটে ১ লাখ ৪৬ হাজার ২৭৪ জন। মার্চে ১০৭৮টি ফ্লাইটে ২ লাখ ১ হাজার ১৫৬জন বিদেশে গিয়েছেন। অন্যদিকে জানুয়ারিতে দেশে এসেছেন ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫৯৯ জন। ফেব্রুয়ারিতে এসেছেন ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫২৭ জন। মার্চে দেশে এসেছেন ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯৮০ জন। কাতার প্রবাসী মোহাম্মদ ইকবাল শান্তর ভিসার মেয়াদ শেষ হয় ১৭ এপ্রিল। ১৪ এপ্রিল তার কাতারে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লকডাউনে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় তার ফেরত যাওয়া হয়নি। এখন ভিসার মেয়াদ বাড়াতে না পারলে বেকার হতে হবে এই প্রবাসীকে। তিনি বলেন, ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে দেশে এসেছি। নানা জটিলতায় কাজে ফিরতে পারিনি। এখন যখন সব ঠিকঠাক হলো, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়ে সব শেষ করে দিল। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও সিঙ্গাপুর-এই ৫ দেশের প্রবাসীদের কাজে ফেরাতে ১৭ এপ্রিল থেকে বিশেষ ফ্লাইট অনুমতি দেয় সরকার। এসব দেশে শুধু মাত্র প্রবাসী কর্মীরা যেতে পারবেন। আর এই ৫ দেশে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ১২টি এয়ারলাইনস অনুমতি পেয়েছে। ১২টি এয়ারলাইনস হচ্ছে-বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস, ওমান এয়ার, সালাম এয়ার, কাতার এয়ারওয়েজ, এমিরেটস, ইতিহাদ, এয়ার অ্যারাবিয়া, এয়ার অ্যারাবিয়া আবুধাবি, ফ্লাই দুবাই ও সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস। এই ৫ দেশের বাইরে যেসব দেশে প্রবাসীরা আছেন তারা জানেন না কবে কাজে ফিরতে পারবেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আবু মোশাররফ ২৪ এপ্রিল দেশে আসার টিকিট কেটে রেখেছেন। এখন তিনি অনিশ্চয়তায় আদৌ তার আসা হবে কি না। প্রবাসী কর্মীদের কর্মস্থলে ফেরানোর উদ্যোগ প্রথম দিনেই ধাক্কা খায়। ১২টি এয়ারলাইনসের ১৪টি ফ্লাইটের মধ্যে কমপক্ষে ৭টি ফ্লাইট বাতিল হয়। লকডাউনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিমানবন্দরে এসে প্রবাসীরা জানছেন ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ১৭ এপ্রিল বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইনসের রিয়াদগামী ফ্লাইট (বিজি৫০৩৯) সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। এ কারণে এয়ারলাইনসের নির্দেশনা অনুসারে ৬ ঘণ্টা আগে রাত ১টার মধ্যেই হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসেছিলেন যাত্রীরাও। ফ্লাইটটি বাতিল হলে ক্ষুব্ধ হয়ে সেদিন রাতে প্রবাসী কর্মীরা বিক্ষোভ করেন বিমানবন্দরে। তালিকায় থাকলেও সিঙ্গাপুরের প্রবাসী কর্মীরা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বিপাকে। অনুমতি পেলেও এখন পর্যন্ত কোনো ফ্লাইট পরিচালনা করেনি সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস। অন্যদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ১৭ থেকে ২০ এপ্রিলের মধ্যে মাত্র একটি ফ্লাইট পরিচালনা করবে। এ কারণে অসহায়ের মতো বিমানবন্দরে গত রোববার সারাদিন দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেছেন সিঙ্গাপুর প্রবাসীরা। হন্যে হয়ে বিমান, ট্রাভেল এজেন্সির অফিসে ছুটেছেন টিকিটের আশায়। সিঙ্গাপুর প্রবাসী কুমিল্লার গাজী হান্নান ছুটিতে এসে গত এক বছর ধরে দেশে আটকা পড়ে আছেন। তারা ভিসার মেয়াদ শেষ হবে এ মাসেই। হন্য হয়ে ঘুরেও কোনো টিকিট পাচ্ছেন না। বলেন, বিমানের অফিসে গিয়েছিলাম, অনুরোধ করেছি; কিন্তু তারা বলছে টিকিট নেই। আমরা কার কাছে যাব, আমাদের কথা শোনার মতো কেউ কি আছে? ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পাওয়া এয়ারলাইনস্রের তালিকায় রয়েছে এয়ার অ্যারাবিয়া। তবে ১৭ থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত তারা কোনো ফ্লাইট পরিচালনা করেনি। ফলে এই এয়ারলাইনসের টিকিট কাটা যাত্রীরা আছেন অনিশ্চয়তায়। সৌদি প্রবাসী আরমান পাটওয়ারী রিটার্ন টিকিট কেটেছিলেন শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনসের। ১৪ এপ্রিল তার সৌদি ফিরে যাবার কথা ছিল। কিন্তু লকডাউনে ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় আটকা পড়েছেন তিনি। অনুমতি পাওয়া ১২টি এয়ারলাইনসে তালিকায় নেই এই এয়ারলাইনস। এখন অনুমতি পাওয়া এয়ারলাইনস থেকে নতুন করে টিকিট কাটা ছাড়া তার ফেরত যাওয়ার কোনো পথ খোলা নেই। একদিনে পুরাতন টিকিট বাতিল অন্য দিকে নতুন টিকিট কেনার খরচ জোগাড় করতে হচ্ছে তাকে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১