আপডেট : ১৫ December ২০২০
মুফতি কাজী সিকান্দার আল্লাহতায়ালা কোরআনের সুরা শুয়ারার ২১৫ নং আয়াতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লক্ষ করে বলেন, ‘যারা তোমার অনুসরণ করে সে সব মুমিনের প্রতি বিনয়ী হও’। এ আয়াতে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মুমিনের প্রতি বিনয়ী হওয়ার জন্য বলেছেন। অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুমিনের প্রতি কেমন বিনয়ী বা নম্র ছিলেন তা বিভিন্ন হাদিস ও কোরআনের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি। তবুও আল্লাহর নির্দেশ, মুমিনের প্রতি বিনয়ী হও। মূলত এটি সব মানুষকে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে বিনয়ী ও নম্রতা অবলম্বন করার জন্য। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে আল্লাহ তার বান্দাকে শিখিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা সুরা মায়েদার ৫৪ নং আয়াতে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের গুণ বলতে গিয়ে ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ যদি নিজের দীন থেকে ফিরে যায়, তাহলে আল্লাহ আরো অনেক লোক সৃষ্টি করবেন। যারা হবে আল্লাহর প্রিয় এবং আল্লাহ হবেন তাদের প্রিয়। যারা মুমিনদের প্রতি নম্র ও বিনয়ী হবে এবং কাফেরদের প্রতি হবে অত্যন্ত কঠোর।’ বিনয় ও নম্রতার কারণে মানুষের স্বভাব থেকে ফখর, অহংকার, গৌরব করার স্পৃহা চলে যায় এবং একে অপরের সাথে বাড়াবাড়ি করার মতো বদ অভ্যাস বা দুশ্চরিত্র দূর হয়ে যায়। এগুলো চলে যাওয়ার কারণেই আল্লাহতায়ালা তাকে ভালোবাসবেন। আর ওই মুমিন আল্লাহর প্রিয় হবে। এ বিনয় ও নম্রতা সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ আমার নিকট ওহী পাঠিয়েছেন। তোমরা পরস্পরের সাথে বিনয় নম্রতার আচরণ কর। যাতে কেউ কারো ওপর ফখর ও গৌরব না করে এবং একজন আরেক জনের ওপর বাড়াবাড়ি না কর”। (সহিহ মুসলিম) আজ দুনিয়াতে অশান্তির মূল কারণ হলো- অহংকার, একে অপরের উপর গর্ব ও ফখর করা এবং বাড়াবাড়ি করা। এগুলো যেন আজ সমাজে এক মহাব্যধির আকার ধারণ করেছে। এ থেকে ডাল পালা বিস্তৃত হয়ে সমাজে বিভিন্ন অপকর্ম সৃষ্টি হচ্ছে। আর সে অপকর্ম বন্ধের মহা একটি ওষুধ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চৌদ্দশত বছর পূর্বে দিয়ে গেছেন। ‘তোমরা বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন কর।’ তাহলে এসব বাড়াবাড়ি তোমাদের মধ্য থেকে চলে যাবে। আর এসব স্বভাব চলে গেলে সমাজে বৃদ্ধি পাবে ব্যক্তির সম্মান ও মর্যাদা। আমরা মূলত অহংকার এ জন্যই করে থাকি যে অন্যের কাছে আমার মর্যাদা যেন বাড়ে। আমরা দিন-রাত, কথায়, চাল-চলনে, রাস্তা-ঘাটে, হাট-বাজারে সর্বত্র একটু সম্মান বৃদ্ধি করার জন্য অজস্র বাড়াবাড়ি করে বেড়াই। আসলে তাতে কি আমাদের মর্যাদা বা সম্মান বৃদ্ধি পায়? না, প্রকৃতপক্ষে আমাদের সম্মান পদদলিত হয়। মানুষের স্বভাবেই আছে যে, নিজের সম্মান যেন দিন দিন বাড়তে থাকে। এখন কিভাবে বা কি করলে আমাদের সম্মান বৃদ্ধি পাবে, তা হাদিসে উল্লেখ আছে। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের সম্মান বৃদ্ধির জন্য একটি পদ্ধতি দেখিয়ে গেছেন। ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘দানের কারণে সম্পদ কমে না। ক্ষমার দ্বারা আল্লাহর বান্দার ইজ্জত ও সম্মান বৃদ্ধি করা ছাড়া আর কিছু করেন না। আর যে এক মাত্র আল্লাহরই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে বিনয় ও নম্রতার নীতি অবলম্বন করে আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।' (সহিহ মুসলিম) সম্মান ও মর্যাদা নিহিত বিনয় ও নম্রতায়। অপরদিকে লাঞ্ছনা ও অপদস্থতা নিহিত অহংকারে। কিন্তু আমরা সম্মান চাই অপদস্থতা চাই না। তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করতে হবে। এ বিনয় ও নম্রতা ঘর থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই করতে হবে। তাহলেই প্রত্যেক স্তরে আল্লহ নিজেই মর্যাদা ও সম্মান বাড়িয়ে দেবেন। লেখক : পরিচালক, ইসলাহ বাংলাদেশ কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১