আপডেট : ০৩ December ২০২০
মুফতি এনায়েতুল্লাহ জামিয়া ইসলামিয়া সেহড়া মোমেনশাহী। একটি আদর্শ কওমি মাদরাসা। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রাচীনতম দিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ময়মনসিংহ অঞ্চলে দিনের প্রচার ও ইসলামি আদর্শ বিস্তারে এ প্রতিষ্ঠানের অবদান ব্যাপক। মাদরাসাটি ময়মনসিংহ জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র চরপাড়ায় অবস্থিত। জামিয়া ইসলামিয়া যেখানে অবস্থিত, ওই জায়গাটি ছিল একজন দিনদার মহিলার। তিনি সেখানে একটি মাদরাসা করার বাসনায় স্বামীকে শহরের বড় মসজিদের তৎকালীন ইমাম মাওলানা ফয়জুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহির কাছে পাঠান। হুজুরের কাছে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার কথা জানানো হলে তিনি মাওলানা মঞ্জুরুল হক রহমাতুল্লাহি আলাইহির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে ১৯৪২ সালে মাওলানা মঞ্জুরুল হক (র.) দারুল উলুম নামে এ মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। এসময় তার সহযোগী ছিলেন, মাওলানা আশরাফ আলী (র.)। তিনি পরবর্তীতে মাদরাসা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। ময়মনসিংহ অঞ্চলে কওমিধারার প্রথমদিকের প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা হওয়ায় অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বিভিন্ন এলাকা থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তালেবে ইলম দিন শিক্ষার জন্য এখানে আসতে শুরু করে। ১৯৬৪ সালের দিকে এখানে হাদিসের পাঠদান শুরু হয়। এ সময় মাদরাসার মুহতামিম ছিলেন মাওলানা নূর উদ্দীন (র.)। তিনি দীর্ঘ পঁচিশ বছর মাদরাসা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ সালে দিকে মাদরাসায় দাওরায়ে হাদিস চালু করা হলে বড় হুজুর বা ইমাম সাহেব হুজুর নামে পরিচিত মাওলানা ফয়জুর রহমান (র.) এবং মাওলানা জালালুদ্দীন কোরায়শি (র.) কিছুদিন নিয়মিত হাদিসের দরস প্রদান করেন। ১৯৭৬ সালে মাদরাসার আমূল পরিবর্তন হয়। দারুল উলূম থেকে মাদরাসার নামকরণ করা হয় জামিয়া ইসলামিয়া নামে। মাদরাসার দৃষ্টিনন্দন সাততলা ভবনের ভিত্তি তখনই স্থাপিত হয়। তখন শিক্ষা-ব্যবস্থাপনা এবং পাঠদান পদ্ধতিতেও ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এর নেপথ্যে ছিলেন মাওলানা আতহার আলী (র.)। ব্রিটিশ ভারত ও পরবর্তী পাক শাসনামলে দেশের রাজনীতি ও আধ্যাত্মিকতায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে যাঁরা ছিলেন কিশোরগঞ্জের হজরত মাওলানা আতহার আলী (র.) হলেন তাঁদের অন্যতম। সিলেটে জন্ম নেওয়া এই মহীরুহ ছিলেন হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (র.)-এর খলিফা। স্থানীয়দের অনুরোধে মাওলানা আতহার আলী (র.) ময়মনসিংহে থেকে যান। তিনি শহরের দিনদার মানুষদের সঙ্গে পরামর্শ করে এবং তাদের সহযোগিতা নিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই মাদরাসার কাঠামোগত ও ব্যবস্থাপনায় অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনেন। ছয় মাস সময় তিনি ছিলেন মাদরাসার প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং ১৯৭৬ সালের ৬ অক্টোবর ইন্তেকালের পর এ মাদরাসায়ই তাঁকে দাফন করা হয়। তখন মাদরাসার মুহতামিম ছিলেন, মাওলানা মিঞা হোসাইন (র.)। এরপর পর্যায়ক্রমে মাদরাসার মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন-মাওলানা আশরাফ আলী (র.), মাওলানা মুজিবুর রহমান (র.), মাওলানা শরফুদ্দিন (র.), মাওলানা আবদুল গণি, মাওলানা ফয়সাল আহমদ, মাওলানা শওকত আলী (ভারপ্রাপ্ত) ও মাওলানা আবদুর রাহমান হাফেজ্জী (ভারপ্রাপ্ত)। মাদরাসার বর্তমান মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা আনওয়ারুল হক। বর্তমানে জামিয়া ইসলামিয়া শুধু ময়মনসিংহে নয়, বাংলাদেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি কওমি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কওমি শিক্ষার সূচনা নূরানী বিভাগ থেকে শুরু করে দাওরায়ে হাদিসসহ সর্বোচ্চ জামাত উচ্চতর ইসলামী আইন গবেষণা বিভাগ ‘ইফতা’ পর্যন্ত ক্লাস বর্তমানে চালু রয়েছে। এখানে প্রায় হাজারখানেক শিক্ষার্থী প্রতিনিয়ত ইলম অর্জন করছে। প্রতি বছর এখান থেকে বিশ/ত্রিশ জন কোরআনের হাফেজ, চল্লিশ/পঁয়তাল্লিশজন মাওলানা এবং বিশ/পঁচিশজন মুফতি ফারেগ হচ্ছেন। হবিগঞ্জের মাওলানা তাফাজ্জুল হক (র.), মাওলানা কুতুব উদ্দীন (র.), কিশোরগঞ্জ জামিয়া ইমদাদিয়ার মাওলানা আজহার আলী আনোয়ার শাহ (র.), ময়মনসিংহ বড় মসজিদের বর্তমান ইমাম ও খতিব মাওলানা আবদুল হকসহ অনেক বরেণ্যে আলেম এখানে পাঠদান করেছেন। ময়মনসিংহ অঞ্চলের দিনি শিক্ষার প্রচার-প্রসারে জামিয়া ইসলামিয়া মোমেনশাহীর ভূমিকা আরো ব্যাপক হোক। লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম-বার্তা টুয়েন্টি ফর ডটকম
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১