বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১০ October ২০২০

সুরক্ষায় আসছেন পোশাক ও চামড়া শিল্পের শ্রমিকরা


সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আসছেন রপ্তানিমুখী দুই ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান পোশাক ও চামড়া শিল্পের কর্মহীন ও দুস্থ শ্রমিকরা। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকাশিল্পের কর্মহীন ও দুস্থ শ্রমিকরা নগদ সহায়তা পাবেন। এ লক্ষ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে সরকার।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আপাতত পাইলট প্রকল্প হিসেবে তা শুরু হবে। অর্থায়ন করবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং জার্মানি। কার্যক্রম সফল হলে তা দীর্ঘমেয়াদে চলবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, দেশের অর্থনীতিতে রপ্তানিমুখী শিল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। দুর্ঘটনা ও অসুস্থতাজনিত নানা কারণে এ খাতের শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত বা কর্মহীন হয়ে দুস্থ হয়ে পড়েন। সম্প্রতি কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারী সারা পৃথিবীর অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশও এর থেকে ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিপণ্যের বাজার ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে এ মহামারীর কারণে রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে। এ সংকটের প্রভাবে দেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাত, তথা তৈরি পোশাক এবং চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকাশিল্পে একাধিক রপ্তানিমুখী কারখানা লে-অফ এবং উৎপাদন সাময়িকভাবে স্থগিত করা বা সীমিত করতে বাধ্য হয়েছে, যার ফলে উদ্যোক্তা এবং শ্রমিক উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কারখানা সাময়িক বন্ধ বা উৎপাদন সীমিত হলে শ্রম আইনে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির সুযোগ রয়েছে। তবে এ অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হয়ে আসায় ক্ষতিপূরণ প্রার্থির পরে অনেক শ্রমিক কর্মহীন অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেক অস্থায়ী শ্রমিক আইন অনুসারে ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির সব শর্ত পূরণ না করায় ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। এসবের পাশাপাশি, শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত কারণে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়লে, বা নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে সন্তান জন্মদানের কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজে ফিরতে না পারলে, তাদের পারিবারিক আয় সংকুচিত হয়ে পড়ে এবং আর্থিক অনটনের মধ্যে পড়তে হয়। এ প্রেক্ষাপটে এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানিমুখী খাতের দুস্থ শ্রমিকদের জরুরি মানবিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার এই সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যাতে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ফেডারেল জার্মান সরকার অর্থায়ন করতে সম্মত হয়েছে।

রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পের কর্মহীন হয়ে পড়া ও দুস্থ শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা ২০২০-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, কর্মমুখী তৈরি পোশাক এবং চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পের বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে যারা কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সাময়িক বা দীর্ঘমেয়াদি কর্মহীনতার মুখে পড়েছেন, অথবা অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে দুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাদের সাময়িক আর্থিক সুরক্ষা প্রদান নিশ্চিত করা হবে।

জানা যায়, এ কার্যক্রমের আওতায় নির্বাচিত প্রত্যেক শ্রমিককে মাসিক ৩ হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা প্রদান করা হবে। একজন শ্রমিক সর্বোচ্চ তিন মাস নগদ সহায়তা পেতে পারেন। তবে নির্বাচিত শ্রমিক এ সময়ের মধ্যে নতুন কর্মে নিযুক্ত হলে এই নগদ সহায়তা পাবেন না। জিটুপি পদ্ধতিতে সরাসরি উপকারভোগী শ্রমিকদের নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নগদ সহায়তা পরিশোধ করা হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী আট ধরনের শ্রমিক সহায়তা পাওয়ার যোগ্য হবেন- ১. বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক এবং রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা অথবা রপ্তানিমুখী চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্প কারখানার শ্রমিক যিনি ফেব্রুয়ারি, ২০২০ মাস পর্যন্ত কোনো কারখানায় কারখানার পে-রোল অনুযায়ী কর্মরত ছিলেন। ২. যেসব শ্রমিক দুর্ঘটনাজনিত কারণে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েছেন এবং শারীরিক অসুস্থতার কারণে কাজে ফিরতে পারছেন না। ৩. সন্তান জন্মদানকারী শ্রমিক যিনি শ্রম আইনের ৪৬ ধারা অনুযায়ী আর্থিক সুবিধাদি পাওয়ার শর্তের আওতাভুক্ত না হওয়ায় প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং পুনরায় চাকরিতে বহালকৃত না। ৪. কোভিড-১৯ আক্রান্ত, অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত এবং কাজ করতে অক্ষম শ্রমিক। ৫. যেসব শ্রমিক সাময়িক চাকরি হারিয়েছেন এবং শ্রম আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০১৮) অনুযায়ী আইনানুগ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার শর্তের আওতাভুক্ত নন, অর্থাৎ লে-অফ বা ছাঁটাইকৃত শ্রমিক, যাদের কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা বা পরিষেবা দেওয়ার সময়কাল একটানা বা নিরবচ্ছিন্ন এক বছর, বা ২৪০ দিনের কম হওয়ায় বা চাকরি আনুষ্ঠানিক চুক্তিভিত্তিক না হওয়ায়, শ্রম আইন-২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮)-এর ২৩ ধারা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাওয়ার শর্তের আওতাভুক্ত নয় এবং যিনি এখনো কর্মহীন রয়েছেন। ৬. যিনি শ্রম আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮)-এর ধারা ২০ অনুযায়ী ছাঁটাইকৃত বা ১৬ (৭) অনুযায়ী লে-অফকৃত ও পরবর্তী ছাঁটাইকৃত শ্রমিক এবং এখনো কর্মহীন রয়েছেন। ৭. লে-অফকৃত শ্রমিক যারা বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮)-এর দ্বারা ১৬ অনুযায়ী এক বা দুই মাসের ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন কিন্তু এখনো কর্মহীন রয়েছেন। ৮. ২০২০ সালের ৮ মার্চের পর স্থায়ীভাবে কারখানা বন্ধের ফলে চাকরি হারানো শ্রমিক এবং যিনি এখনো কর্মহীন রয়েছেন।

এ কার্যক্রমটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগী ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ফেডারেল জার্মান সরকার বাজেট সাপোর্টের  মাধ্যমে অর্থায়ন করবে।

এ নীতিমালার আওতায় চলতি ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে এটি বাস্তবায়িত হবে। এই দুই বছরে সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে সরকার কার্যক্রমকে একটি স্থায়ী সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমে পরিণত করার উদ্যোগ নিতে পারবে। এক্ষেত্রে অপর কোনো উন্নয়ন সহযোগী অর্থায়ন করতে আগ্রহী হলে তা গ্রহণ করা যাবে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আব্দুস সালাম বলেন, ‘দাতাদের অর্থায়নে তৈরি পোশাক, চামড়াজাত ও পাদুকা শিল্পের কর্মহীন ও দুস্থ শ্রমিকদের একটি ভাতা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে শুরু হবে। এটি সফল হলে সরকার পরবর্তীতে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১