বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৭ December ২০১৯

ভোটের উৎসবে ফিরছে দুই সিটি করপোরেশন


ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ৩০ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট চলবে নগরপিতা নির্বাচনে। এরই মধ্যে আগ্রহীরা দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ শুরু করেছেন। বড় দুই দলের মেয়র প্রার্থী অনেকটা চূড়ান্ত। শিগিগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের চূড়ান্ত করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আগ্রহী কাউন্সিলর প্রার্থীরাও মাঠে নামতে প্রস্তুতি শুরু করেছেন। সব মিলিয়ে ঢাকায় বেজে উঠেছে ভোটের দামামা। নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপি প্রশ্ন তুললেও শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে চায় তারা।

জানা যায়, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ দলগুলো মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৩১ ডিসেম্বর। আর প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ জানুয়ারি। গত রোববার এ দুই সিটিতে ভোটের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনের তিন বছর অতিবাহিত হতে যাচ্ছে। বাকি দুবছর সময়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনকে নিয়ে রাজধানীবাসীর উৎসুক ও উদ্বেগ অন্তহীন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও জাতীয় নির্বাচনের মতোই এতে সমগ্র দেশবাসীর দৃষ্টি নিবন্ধ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রথম দুটি নির্বাচন- কুমিল্লা ও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সফলতা ছিল। কিন্তু বেশিদিন সেটি থাকেনি। পরবর্তী পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তিনটির বিষয়ে নানা অভিযোগ ওঠে। বরিশাল সিটি করপোরেশন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভিন্ন বার্তা যায়। ২০১৫ সালের ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও ব্যাপক অনিয়মের তথ্য এসেছে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে। তবে বিগত দিনের পরিস্থিতি যাই হোক, ঢাকা সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচনে পুরনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চান না সাধারণ ভোটাররা। নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দুই দিনব্যাপী কর্মশালায় আনে। গতকাল তাদের কর্মশালা শেষ হয়েছে।

ঢাকার দুই সিটির ভোট ইসির জন্য চ্যালেঞ্জিং বলে মত দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। ভোটারদের প্রসঙ্গ টেনে কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেছেন, ভোটাররা যেন তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে পারেন। এই দুই সিটির ভোট ইসির জন্য চ্যালেঞ্জিং। নির্বাচন প্রতিযোগিতাপূর্ণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। দল দেখে প্রার্থীদের প্রতি আচরণ করা যাবে না। এবার নিরপেক্ষ ভোট হবে।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেছেন, ‘এই নির্বাচন নিয়ে সারা দেশের মানুষের চোখ-কান খোলা থাকে। দায়িত্ব পালনে সাহসী ভূমিকা পালন করতে হবে। ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্বাচন পরিচালনায় কোনো ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না। কঠোরভাবে কাজ করতে হবে। কার কী রাজনৈতিক পরিচয় তা না দেখে, দায়িত্ব পালন করতে হবে নিরপেক্ষভাবে।

৫৪ লাখেরও বেশি ভোটারের এই দুই সিটি নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ইভিএম মেশিনের কারিগরি সহায়তা দিতে দুজন করে সেনা সদস্য উপস্থিত থাকবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব তাদের ওপর থাকবে না। নির্বাচনের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় রাষ্ট্রের নিয়মিত বাহিনীর সদস্য পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনীসহ অন্য সদস্যদের মোতায়েন করা হবে। বর্তমান মেয়রদের নির্বাচনে আবারো প্রার্থী হতে চাইলে তাকে পদত্যাগ করতে হবে। মেয়র পদে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হলেও সাধারণ ওয়ার্ড ও নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে।

তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩১ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২ জানুয়ারি। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ৫ জানুয়ারির মধ্যে আপিল করা যাবে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের কাছে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ রাখা হয়েছে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। ১০ জানুয়ারি প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। এর পরই আনুষ্ঠানিক প্রচারে নামতে পারবেন প্রার্থীরা। এর আগে সব ধরনের প্রচার নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়বে বলে ইসি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এর আগে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আনিসুল হক এবং দক্ষিণ সিটিতে সাঈদ খোকন। আনিসুল হকের মৃত্যুর পর ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র পদে উপনির্বাচনে বিজয়ী হন আতিকুল ইসলাম। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই উপনির্বাচনের সঙ্গে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির বর্ধিত ৩৬টি ওয়ার্ডেও কাউন্সিলর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

এবারের নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন যুগ্ম সচিব আবুল কাশেম এবং দক্ষিণ সিটিতে যুগ্ম সচিব আবদুল বাতেন। পাশাপাশি উত্তর সিটির ১৮টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে এবং দক্ষিণ সিটির ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে একজন করে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটিতে ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন হলেও সাধারণ ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫৪টি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮টি। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ভোটার সংখ্যা ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ জন হলেও সাধারণ ওয়ার্ডের সংখ্যা ৭৫টি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড ২৫টি।

এদিকে চলতি বছর উপনির্বাচনে বিজয়ী দুই সিটির বর্ধিত এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলররা পুরো পাঁচ বছরের মেয়াদ পূরণের দাবি তুলেছেন। তারা ইতোমধ্যে নির্বাচন বন্ধে আইনের আশ্রয় নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে আইনি জটিলতা নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না এ প্রশ্নে সিইসি বলেন, করপোরেশনের আইনে মেয়াদ সম্পর্কে বলা রয়েছে। সে অনুযায়ী স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুরোধে কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছে। তাই আইনি জটিলতা হবে না বলেই তিনি মনে করেন।

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার সম্প্রতি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমরা আশা করব, নির্বাচনে সৎ ব্যক্তিদের প্রার্থী করা হবে। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তাদের যাতে মনোনয়ন দেওয়া না হয়।

এবার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছেন ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তাপসের মনোনয়ন সংগ্রহকে চমক হিসেবে দেখছেন অনেকে। আবার বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন মনোনয়ন সংগ্রহের পর সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কেঁদে দিয়ে আলোচনায় আছেন এখন। আর উত্তরে কিনেছেন বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম। এর বাইরে আরো কয়েকজন প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছেন। অন্যদিকে ঢাকা উত্তরে বিএনপির প্রার্থী হতে গতকাল মনোনয়নপত্র কিনেছেন তাবিথ আউয়াল ও আসাদুজ্জামান রিপন। দক্ষিণের জন্য কিনেছেন ইশরাক হোসেন। জাতীয় সংসদের বিরোধী দল একক প্রার্থী দিতে মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করেছে। তবে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের জানিয়েছেন, সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হলে তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১