বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৭ May ২০১৯

ফণীতে বিধ্বস্ত সাত গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা, পানিবন্দী হাজারো মানুষ


সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। বিধ্বস্ত রাস্তা রামনাবাদ নদীর পানিতে তলিয়ে থাকায় এক গ্রামের সাখে অন্য গ্রাম ও উপজেলা সদরে আসতে নৌকাই এখন একমাত্র ভরসা। পুকুর তলিয়ে থাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। এ কারনে নদীর অপরিষ্কার পানিতে দৈনন্দিন কাজ করতে হচ্ছে হাজারো মানুষকে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় দেখা দিয়েছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ। ফণী তান্ডবে বিধ্বস্ত পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের চাড়িপাড়া ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ সংলগ্ন মানুষের এ দুঃখ কষ্ট এখন নিত্যদিনের। সরকারের পক্ষ থেকে দুর্গত মানুষকে রক্ষায় জরুরী সহায়তা ও ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ রক্ষার আশ্বাস দেয়া হলেও গ্রামবাসীদের বক্তব্য সেই সিডরের পর থেকে ঝড় জলোচ্ছাস হলেই আমরা ভাসছি। কিন্তু টেকসই বেড়িবাঁধ আর নির্মাণ হয়নি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ফণীর প্রভাব কেঁটে গেলেও এখনও স্বাভাবিক হয়নি চাড়িপাড়া গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা। পায়রা বন্দরের জন্য এ গ্রামটি সরকার অধিগ্রহণ করায় বন্দরের নির্মাণ কাজ শুরু না হওয়ায় থমকে আছে সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড। তাই ঝড় জলোচ্ছাস হলেই চাড়িপাড়া বিধ্বস্ত বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে তলিয়ে যায় লালুয়া ইউনিয়নের ১৬টি গ্রাম।

ফণীর তান্ডবে কলাপাড়ায় তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও চাড়িপাড়াসহ সাতটি গ্রামের অর্ধশতাধিক বসত ঘর ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছে। সিডর পরবর্তী গত একযুগ ধরে কিন্তু এ বিধ্বস্ত ঘরের দুঃখ ক্ষতিগ্রস্থ্যদের না কাঁদালেও তারা এখন কাঁদছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা, বিধ্বস্ত সড়ক ও বিশুদ্ধ পানির সংকটের কারনে।

এগারো নং হাওলা গ্রামের গৃহবধু জেসমিন বেগম জানান, রামনাবাদ নদীর পানিতে গত পাঁচদিন ধরে তলিয়ে আছে চাড়িপাড়া, নাওয়াপাড়া, এগারো নং হাওলা, চেীধুরী পাড়া, নয়াকাটা, মুন্সীপাড়া, চান্দুপাড়া, হাসনাপাড়া, চর চান্দুপাড়া ও পশরবুনিয়া গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার। কোমর সমান পানিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকায় এবং কাঠের সেতু ও সাঁকো ভেঙ্গে পড়ায় বন্ধ হয়ে গেছে সড়ক যোগাযোগ। এ কারনে জরুরী প্রয়োজনে গ্রামবাসীদের নৌকা ট্রলারে করে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যেতে হচ্ছে। এতে সরকারের ত্রান বিতরণে সীমাহীন কষ্টসহ স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা পড়েছে চরম দূর্ভোগে।

চাড়িপাড়া গ্রামের গৃহবধু মমতাজ বেগম জানান, এখনও চাড়িপাড়া ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে রামনাবাদ নদীর পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় দেখা দিয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। এ কারনে এখনও অধিকাংশ পরিবারে রান্নার কাজ করতে হচ্ছে ঘরের মধ্যে ও বাইরে উঁচু জায়গায় চুলা করে।

একই গ্রামের শানু হাওলাদার জানান, পানিবন্দী হয়ে থাকায় গ্রামবাসীরা বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। ডায়রিয়া ও চর্মজনিত রোগের প্রাদূর্ভাব দেখা দিলেও পানির কারনে ডাক্তার দেখাতেও যেতে পারছেনা গ্রামবাসীরা।

জেলে নুর মোহাম্মদ বলেন, ফণীর ঝড় শেষ কিন্তু ঘর ভেঙ্গে যাওয়ায় অনেক পরিবার নিজ ঘরে ফিরতে পারেনি। বাড়িতে আসা যাওয়ার রাস্তাঘাট,সাঁকো ভেঙ্গে যাওয়ায় ঝুঁকি থাকায় এসব পরিবারের লোকজন স্বজনদের ঘরে আশ্রয় নিয়েছে।

চাড়িপাড়া গ্রামের গৃহবধু শিরীনা বেগম বলেন, ঝড়তো শেষ হইছে, কিন্তু আমাগো বাঁচন নাই। পানিতে তলাইন্না হগল গ্রাম। রান্না করমু যে হেই জায়গা নাই। পোলাপাইন ঘরের বাইরে যাইতে পারে না। পানিতে সারা গাও চুলকায়। সব বাড়ির লেট্রিন তলাইন্না। কোথায় ভালো পানি, কোথায় খারাপ পানি তা বোঝা মুশকিল। কিন্তু তারপরও এইপানি দিয়া হগল কাজ করতে হয়।

গ্রামবাসীদের দাবি, দূর্যোগ হলেই লালুয়া ইউনিয়নের মানুষ ভাসে। তাই চাড়িপাড়া গ্রামের ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ সংস্কারে উদ্যোগ নেয়া হলে আবার হাসি ফুটে উঠবে সর্বস্ব হারানো মানুষগুলোর মুখে। এজন্য সরকারের জরুরী সহায়তা কামনা করছেন।

লালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস বলেন, ১৬ গ্রাম তলিয়ে রয়েছে। পুকুর ডুবে আছে নদীর পানিতে। এ অবস্থায় গ্রামবাসীদের গৃহস্থলী সব কাজ করতে হচ্ছে এই দূষিত পানি দিয়ে। এ কারনে গ্রামবাসীরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। চাড়িপাড়া ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ জরুরীভাবে মেরামত না করলে গোটা বর্ষা মৌসুমেই এভাবে দূর্ভোগ পোহাতে হবে গ্রামবাসীদের।

এদিকে গত রোববার কলাপাড়ার এ বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ এলাকা পরিদর্শনে এসে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল(অবঃ) জাহিদ ফারুক এমপি গ্রামবাসীদের বলেন, নদীর পানি কিছুটা কমলেই জিও ব্যাগ ফেলে লোকালয়ে পানি প্রবেশ বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হবে এবং বেড়িবাঁধ নির্মানে স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহন করা হবে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১