আপডেট : ২৬ January ২০১৯
২০১৮ সালে ৫৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে ৭২২১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো অন্তত ১৫ হাজার ৪৬৬ জন। গতকাল শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে যাত্রীকল্যাণ সমিতির বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদের আলোকে সমিতির প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির ওই সংবাদ সম্মেলনের ঘণ্টা কয়েক আগে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে একটি ইটভাঁঁটায় কয়লাবাহী ট্রাক উল্টে শ্রমিকদের থাকার ঘরের ওপর পড়ে ১৩ জনের মৃত্যুর খবর আসে। সমিতির বার্ষিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়লেও হতাহতের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে। তাদের আগের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে চার হাজার ৯৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৩৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল, আহত হয়েছিলেন ১৬ হাজার ১৯৩ জন। এবারের প্রতিবেদন প্রকাশ করতে গিয়ে মোজাম্মেল হক লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিদায়ী বছরের ৩ এপ্রিল সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনায় রাজীবের বিচ্ছিন্ন হাত দুই বাসের মধ্যে আটকে থাকার ছবি দেশের মানুষের হূদয় কাঁদিয়েছে। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রাস্তা পার হতে গিয়ে গৃহকর্মী রোজিনা গত ২০ এপ্রিল প্রথমে পা হারায়, পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যায়। গত ২৯ জুলাই হোটেল র্যাডিসনের সামনে শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশের প্রতিটি স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। দেশব্যাপী নিরাপদ সড়কের আন্দোলন গড়ে ওঠে। সমিতির মহাসচিব বলেন, গত ২৭ আগস্ট চট্টগ্রামের সিটি গেট এলাকায় বাসে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে বিতর্কের জেরে রেজাউল করিম রনি নামে এক যাত্রীকে বাস থেকে ফেলে হত্যা করা হয়। ২৮ আগস্ট রাস্তা পার হাওয়ার সময় কুষ্টিয়ায় বাসের ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে পরে শিশু আকিফা নিহত হয়। গত বছর ২৩ জুন এক দিনে ৬২ জনের প্রাণহানির খবর ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয় মন্তব্য করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এহেন উদ্বেগজনক হারে প্রাণহানিতে ২৫ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সড়ক নিরাপত্তায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেন। এছাড়া নতুন সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে নিরাপদ সড়কের অঙ্গীকারের প্রতিফলনের জন্য আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। এবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে রেলপথে ৩৭০টি দুর্ঘটনায় ৩৯৪ জন নিহত ও ২৪৮ জন আহত হয়েছেন। আর নৌপথে ১৫০টি দুর্ঘটনায় ১২৬ জন নিহত ও ২৩৪ জন আহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন ৩৮৭ জন। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আকাশপথে পাঁচটি দুর্ঘটনায় গত বছর ৫৫ জন নিহত ও ৩২ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে নেপালে ইউএস বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাও যুক্ত করা হয়েছে। সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশ পথ মিলিয়ে মোট ৬ হাজার ৪৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে গত বছর। এসব ঘটনায় ৭ হাজার ৭৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৯৮০ জন। * গত বছর সড়কে যাদের প্রাণ গেছে, তাদের মধ্যে ৭৮৭ জনই নারী, ৪৮৭ জন শিশু। * সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ১ হাজার ২৫২ জন চালক ও শ্রমিক, ৮৮০ শিক্ষার্থী, ২৩১ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১০৬ জন শিক্ষক, ৩৪ সাংবাদিক রয়েছেন। * সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনায় পড়েছে ট্রাক ও কভার্ড ভ্যান। এ ধরনের বাহনের দুর্ঘটনায় পড়ার হার মোট দুর্ঘটনার ২৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ, বাস ১৮ দশমিক ৯২, অটোরিকশা ৯ দশমিক ৬১, নসিমন-করিমন ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। * ৪১ দশমিক ৫৩ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে গাড়িচাপায়, ২৯ দশমিক ৭২ শতাংশ ক্ষেত্রে দুই বাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, আর গাড়ি খাদে পড়ে ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ মৃত্যু ঘটেছে। সমিতির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, সড়ক-মহাসড়ক ও রাস্তা-ঘাটের নির্মাণ ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, মহাসড়ক ও রেলক্রসিংয়ে ফিডার রোডের যানবাহন উঠে পড়া, রাস্তায় ফুটপাথ না থাকা বা ফুটপাথ বেদখলে থাকা, যানবাহনে অতি পণ্য বা যাত্রী বহন এবং সড়কে ছোট যানবাহনের সংখ্যা বাড়ায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরেছে সংগঠনটি। সেখানে বলা হয়েছে, ট্রাফিক আইন, মোটরযান আইন ও সড়ক ব্যবহার বিধিবিধান সম্পর্কে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও সাধারণের মধ্যে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। একই সঙ্গে টিভি-অনলাইন, সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সড়ক সচেতনতামূলক বা দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ থেকে হাট-বাজার অপসারণ, ফুটপাথ দখলমুক্ত করা, রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা, জেব্রাক্রসিং দেওয়া, চালকদের পেশাগত প্রশিক্ষণ ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা, যাত্রীবান্ধব সড়ক পরিবহন আইন ও বিধিবিধান প্রণয়ন, গাড়ির ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার পদ্ধতিগত উন্নয়ন-আধুনিকায়ন, জাতীয় মহাসড়কে কমগতি ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা এবং লাইসেন্স নবায়নের সময় চালকদের জন্য ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করার কথা এসেছে তাদের সুপারিশে। সংসদে পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানানোর পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে সড়ক নিরাপত্তা তহবিল গঠনের সুপারিশ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। লিখিত বক্তব্যে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, গত কয়েক বছরে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে যানবাহনের সংখ্যানুপাতে দুর্ঘটনার সংখ্যা ‘অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে’ রাখা সম্ভব হয়েছে বলে সমিতি মনে করে। সরকার নির্বাচনী অঙ্গীকারের প্রতিফলন ঘটিয়ে সড়ক নিরাপত্তায় যথাযথ পদক্ষেপ নিলে আগামীতে সড়ক দুর্ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি। অন্যদের মধ্যে সংবাদ সম্মলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১