আপডেট : ০৭ January ২০১৯
কালেন্ডারের পাতা থেকে মুছে গেছে আরো একটি বছর। বিদায়ী বছরের প্রতিটি মিনিট শিক্ষার্থীদের কাছে কোনো না কোনো কারণে স্মরণীয় ছিল। সূচনা হতে যাচ্ছে নতুন একটি বছরের। নতুন বছর মানে নতুন ভাবনা। এখনই সবাই পুরনো বছরের প্রত্যাশা-প্রাপ্তির হিসাব কষছে। একই সঙ্গে নতুন বছরের পরিকল্পনাও করছে। কেমন কাটবে ২০১৯ সালটি? শিক্ষার্থীরা ভাবছেন ২০১৮-র ভুল-ত্রুটিগুলোকে পেছনে ফেলে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার। নতুনভাবে নিজেদের সাজাতে চান। নতুন বছরের ভাবনা নিয়ে কথা হয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে। তাদের নিয়ে লিখেছেন মো. শফিকুল ইসলাম ভুলগুলো যেন পুনরাবৃত্তি না হয় -অনুপম কুমার দাস প্রতিটি বছরই আমার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী অনুপম কুমার দাস। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের সময় ভালো কেটেছে। বছরের প্রতিটি মুহূর্ত থাকে রঙে-রাঙা। কিছু চড়াই-উতরাইও ছিল। তবে বিগত বছরটি নিয়ে খুশি। কারণ এ বছর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ করেছি। নতুন বছরের আমার অনেক পরিকল্পনা আছে। আমি এ বছর গ্র্যাজুয়েট হবো। পড়াশোনাও শেষ। এবার চাকরি করতে হবে। বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছি। সব মিলিয়ে ২০১৯ সালটিতে থাকতে হবে জব প্রস্তুতির ওপর। চাকরিতে যোগ দেব। নিজে স্বাবলম্বী হব। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারব। ভাবতেই ভালো লাগে। চেষ্টা করব ২০১৮-তে যে ভুলগুলো করেছি তা যেন নতুন বছরের আর পুনরাবৃত্তি না হয়। শুভ হোক নতুন বছর। নতুন বছরে অনেক স্বপ্ন ও প্ল্যান -জুনায়েদ আলম স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ক্ষের ছাত্র জুনায়েদ আলম। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আনন্দের। ক্লাস, পড়াশোনা আর পরীক্ষা সবকিছুর মাঝে আনন্দ থাকে। সময় পেলেই ক্যাম্পাসে বন্ধুরা মিলে গান-গল্প আর আড্ডার আসর বসাতাম। ঠিক এভাবে তিনটি বছর পার করলাম। আর মাত্র দুইটি সেমিস্টার রয়েছে। ২০১৯-তে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করব। এখন ক্যাম্পাসটিকে আরো বেশি আপন মনে হয়। ২০১৮ বছরটি আমার আনন্দ উৎসবে কেটেছে। পুরো বছরজুড়েই ছিল পড়াশোনার চাপ। তবু মনে ছিল আনন্দ। নতুন বছর নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ও প্লান রয়েছে। পিছনের ভুলত্রুটির কথা চিন্তা না করে নতুন উদ্যোগে এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে। যেহেতু পড়াশোনা শেষ হবে তাই ক্যারিয়ারটাকে কীভাবে সুন্দর করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখব। জীবনটাকে সাজাতে হবে সুন্দর করে। আরো বেশি পড়াশোনা করতে চাই -সৌরভ দাস ড্যাফোডিল ইন্ক্ষারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তিনি জানান, পড়াশোনার চাপ মানেই শিক্ষাজীবন। পরীক্ষা, ক্লাস, ভাইভা-এভাবেই চলছে আমার শিক্ষাজীবন। শত চাপের মধ্যে ইনজয় করি জীবনটাকে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, ক্লাসের ফাঁকে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার মজাই আলাদা। বন্ধুরা একসঙ্গে নতুন নতুন জায়গায় ঘুরতে গিয়েছি। ২০১৮-তে সবাই মিলে অনেক মজা করেছি। তাছাড়া এই বছরটি আমার কাছে আনন্দের একটি বছর। কারণ এ বছরই আমি আমার শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে আনন্দের ধাপটি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করলাম। ২০১৯ সালকে সামনে রেখে আমার অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। আমি আরো বেশি শিক্ষিত হতে চাই। ২০১৯-তে আমি এমবিএ করব এবং যতদূর পড়াশোনা করা সম্ভব আমি করব। উচ্চশিক্ষার জন্য ভবিষ্যতে দেশের বাইরের যাওয়ার চেষ্টা করব। প্রত্যাশা থাকবে নতুন বছরেও সবার জীবনের সাফল্য অব্যাহত থাকুক। শিক্ষার্থীদের সময়টা ভালো কাটুক -ফারিয়া ইসলাম কান্তা ঢাকা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফারিয়া কান্তা। তিনি জানান, দেখতে দেখতে আরো একটি বছর জীবনের পাতা থেকে বিদায় নিতে চলেছে। শুধু রেখে গেছে কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত। প্রত্যাশা-প্রাপ্তি আনন্দ, সুখ-দুঃখ- সবকিছু মিলিয়ে বছরটি ভালোই কেটেছে আমার। নতুন বছরে প্রত্যাশা থাকবে যেন সবার সময় খুবই ভালো যায়। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের। প্রতিটি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজনৈতিক অস্থিরতা-সন্ত্রাসমুক্ত হবে। শিক্ষার্থীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের দেখা পাবেন। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বদরবারে এ দেশের তরুণরা তাদের মেধার যথেষ্ট প্রমাণ দিয়েছেন। নতুন বছরে প্রত্যাশা থাকবে, তরুণদের জন্য আরো বেশি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ব্যবস্থা করতে হবে। যেন তরুণ শিক্ষার্থীরা সঠিক প্ল্যাটর্ফমের দেখা পান। আমরা স্বপ্ন দেখি সামনের দিনগুলো অনেক বেশি ভালো যাবে। কিন্তু্তু আমাদের এই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। তাই স্বপ্ন যেন দুঃস্বপ্ন না হয়। সবার প্রতি শুভকামনা রইল। সুন্দর একটা আগামী চাই -আজিজুল ইসলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আজিজুল ইসলাম। তিনি জানান, যে কোনো মূল্যে আমরা সুন্দর একটা আগামী চাই। সুন্দর আগামী মানেই আমাদের ভালোভাবে বাঁচা। আর ভালোভাবে বাঁচতে পারা মানেই একে অপরের জন্য কিছু করতে পারা। আর আমরা যখন একে অপরের জন্য কিছু করতে পারব, তখন এমনিতেই আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে। নতুন করে পথ চলতে পারব। নতুন স্বপ্নের কথা বলতে পারব। তিনি আরো বলেন, নতুন বছরে তারুণ্য জেগে উঠুক। নেতিবাচক বিষয়গুলো দূরে রেখে ইতিবাচক বিষয় খুঁজে বের করবে তরুণরা। বাসত্মবতা কঠিন জেনেও তরুণ প্রজন্মকে ধৈর্য ধরে তা মোকাবেলা করবে। সামনে নির্বাচন তাই রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রতি অনুরোধ নির্বাচনে জয় পরাজয় থাকবেই। তাই সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি যেন শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষতি না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। হতাশা কাটিয়ে নতুন বছর হোক আরো প্রাণবন্ত -নিগার সুলতানা কনা সরকারি জিল্লুর রহমান মহিলা কলেজের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী নিগার সুলতানা কনা। তিনি জানান, সময় আর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না-এ কথাটির মতোই আরো একটি বছর অতীত হয়ে গেল। জীবন থেকে আরো একটি বছর স্মৃতি হয়ে গেল। বিগত বছরের সব হতাশা কাটিয়ে নতুন বছর হোক আরো প্রাণবন্ত এই প্রত্যাশা থাকবে। ২০১৮-তে এ দেশের তরুণ শিক্ষার্থীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ কিছু সাফল্য অর্জন করেছে, যা ছিল সবার জন্য বেশ অনুপ্রেরণাদায়ক। এসব সাফল্য নতুন বছরে আমাদের পথচলায় সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। এ ছাড়াও শেষ হতে যাওয়া বছরে ক্যাম্পাসগুলোতে কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে, যা ছিল দুঃখজনক। আশা করি সামনের সময়গুলোতে এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আর ঘটবে না। অনেক আনন্দ আর উচ্ছলতায় কাটুক নতুন বছর-এ প্রত্যাশা রইল। শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য অর্জন চাই -মিজান আল মুক্তাদির ওয়াল্ড ইউানভার্সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের ছাত্র মিজান আল মুক্তাদির। তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা মূলত একাডেমিকভিত্তিক। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে শিক্ষাদান জরুরি। নতুন বছরে শিক্ষাক্ষেত্রে আরও উন্নয়ন দেখতে চাই। শিক্ষাব্যবস্থায় কেবল প্রতিযোগিতার মানসিকতা। প্রকৃত জ্ঞান অর্জন না করে শিশুরা ছুটছে গোল্ডেন জিপিএ-৫ এর পেছনে। শিক্ষার্থীদের এমন প্রতিযোগিতার প্রমাণ হাতেনাতে পাই উচ্চশিক্ষায় ভর্তি পরীক্ষার ফল বিপর্যয়ে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল শতভাগ ভালো দেখালেও উচ্চশিক্ষার মান বিচারের সময় ধরা পড়ে যায় ফাঁক ও ফাঁকি। এভাবে আমরা শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য অর্জন করতে পারব না। তাই নতুন বছরে শিক্ষাব্যবস্থায় যুগোপযোগী পরিবর্তন আসবে এমনটাই প্রত্যাশা করছি। তাছাড়া নতুন বছরে আমরা শৃঙ্খলা ও শান্তির অব্যাহত ধারা দেখতে চাই। স্বাধীনভাবে পড়াশোনা করতে চাই -কল্যান দাস যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ছাত্র কল্যান দাস। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে বন্ধুরা মিলে অনেক মজা করেছি। এ বছর সময় ভালো কেটেছে আমার। ২০১৮ নিয়ে আমি খুব খুশি। নতুন বছরে শিক্ষার্থী হিসেবে আমার প্রত্যাশা স্বাধীনভাবে যেন লিখতে, পড়তে ও চলাফেরা করতে পারি। রাজনীতিমুক্ত দেশর প্রতিটি ক্যাম্পাস দেখতে চাই। দেশের সহজ সরল মানুষগুলোর সোজাসাপক্ষা হাসিটা সবসময় দেখতে চাই। নির্বাচনের পরে দেশে কোনো ধরনের অরাজকতা বা খুন-গুম দেখতে চাই না। সংখ্যালঘুদের ওপর যে নির্যাতন ও হামলা বিগত বছরে হয়েছে, নতুন বছরে তার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। দেশের মুক্তচিন্তার মানুষগুলো যেন আর অপশক্তির দ্বারা আক্রান্ত না হয়। দেশের সব মানুষের মাঝে মুক্তবুদ্ধি চর্চা বৃদ্ধি পাবে। দেশ কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে মুক্ত হবে। নতুন বছরে হিংসা-বিদ্বেষ হানাহানি বন্ধ হোক -রুকাইয়া তাবাচ্ছুম রুপা মিরপুর বাংলা কলেজের মাকেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী রুকাইয়া তাবাচ্ছুম রুপা। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আনন্দের, ঠিক তেমনি বছরের প্রতিটি মিনিটও হাসি-ঠাট্টা-আনন্দে ভরা ছিল। বছরটিতে অনেক ইনজয় করেছি। শিক্ষার্থী হিসেবে নতুন বছরের প্রত্যাশা হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি ও পরস্পরে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করার মাধ্যমে সম্ভাবনাময় দেশগড়ার মূলমন্ত্রের জাগ্রত হবে দেশের কর্ণধারদের মস্তিষ্কে। দেশের ভাবমূর্তি পাক্ষে যাবে। বেকার যুবকরা খুঁজে পাবে কর্মসংস্থান। শ্রমজীবী মানুষ পাবে তাদের শ্রমের ন্যায্যমূল্য। ছাত্রছাত্রীরা পাবে তাদের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ। যেখানে তারা জ্ঞানার্জনে মনোনিবেশ করবে নিশ্চিন্তে। সন্ত্রাস, সুদ ও ঘুষের মূলোৎপাটন হবে। অনেক আনন্দ আর উচ্ছলতায় কাটুক নতুন বছর। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চাই -মাইনুল হাসান ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মাইনুল হাসান। তিনি বলেন, আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমি যেহেতু কম্পিউটার সায়েন্স পড়াশোনা করছি, তাই কম্পিউটার ও ইন্টারনেটসহ সব আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিকে আরো বেশি করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে কাজ করব। দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও স্থানীয় এলাকার সর্বত্র উচ্চ গতির ইন্ক্ষারনেট সংযোগ দেখতে চাই। তাছাড়া বর্তমানে আমাদের দেশ আউটসোর্সিং এ অনেক এগিয়ে। তাই সরকারিভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষিত জনবল তৈরি করতে হবে। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এ খাত থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যাবে। আর এভাবেই একটু একটু স্বপ্নের ডিজিটাল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১