বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০১ December ২০১৮

প্রার্থিতার নিষ্পত্তি আদালতে

আদালত প্রতীকী ছবি


একটি জরুরি আপিল নিয়ে আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও বসছেন আদালত। এ বিষয়ে আদেশ পাওয়ার জন্য শুক্রবারের ছুটির দিনে ফাইল করা হয়েছে সরকারপক্ষীয় একটি আপিল। আপিল বিভাগের এ রায়ে বদলে যেতে পারে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থিতার হিসাব-নিকাশ।

অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান  সাবিরা সুলতানার বিষয়ে একটি আদেশ হয়। তাতে বিচারপতি মোহাম্মদ রইচ উদ্দিনের একক বেঞ্চ বিচারিক আদালতে দণ্ডিত সাবিরার সাজা স্থগিত করেন। এর ফলে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আইনগত বাধা দূর হয়। এ আদেশের পর প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ একই রকম মামলার আদেশে বলেছিলেন, দণ্ড বা সাজা স্থগিত হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এরপর সেই আদেশের বিরুদ্ধে বিএনপির এক মনোনয়নপ্রত্যাশী আপিল করেন। আপিল বিভাগ এর ওপর কোনো আদেশ দেননি। ফলে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশই বহাল থাকে। এর এক দিন পর হাইকোর্টের একটি একক বেঞ্চ বলেছেন, দণ্ডিত ব্যক্তির সাজা হাইকোর্টে স্থগিত হলে দণ্ডিতদের নির্বাচন করতে বাধা নেই। তাহলে এটা তো পূর্বের আরেকটি হাইকোর্ট বেঞ্চের বিপরীতধর্মী আদেশ হলো, যা সংবিধান পরিপন্থী। এ আদেশের পর নড়েচড়ে বসে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস। সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল ফাইল করা হয়।

আইন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সাবিরা সুলতানার আদেশটি স্থগিত না হলে পাল্টে যেতে পারে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদে প্রার্থিতার হিসাব-নিকাশ। কারণ গত ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এই মর্মে আদেশ দেন যে, বিচারিক আদালতে দণ্ডিত হলে সেই দণ্ডাদেশ হাইকোর্ট  স্থগিত করলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমের দ্বৈত বেঞ্চ আদেশের পর্যবেক্ষণে বলেন, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারো দুই বছরের বেশি সাজা বা দণ্ড হলে সেই দণ্ড বা সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপিল বিভাগ ওই রায় বাতিল বা স্থগিত করে তাকে জামিন দেন। হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে  ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ বিষয়ে কোনো আদেশ না দিয়ে ‘নো-অর্ডার’ করেন। ফলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল থাকে। এর ফলে ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন প্রার্থী হিসেবে ‘অযোগ্য’ হয়ে পড়েন। একই কারণে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান,  খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূঁইয়া, সাবেক সংসদ সদস্য ও ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ মো. মশিউর রহমান এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. আবদুল ওহাব। এ আদেশের ফলে দলটির শীর্ষ নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রার্থিতাও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। দুটি মামলায় যথাক্রমে ৫ বছর এবং ৭ বছর কারাদণ্ড হয়েছে তার। বিচারিক আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করলে হাইকোর্ট তার সাজা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। মোট ১৭ বছর সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন। আপিল বিভাগ সেটিও খারিজ করে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। আদালতের দৃষ্টিতে খালেদা জিয়া এখন ‘দণ্ডপ্রাপ্ত’ আসামি হিসেবেই বিবেচিত। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থিতা বাতিল করে দেবে- এমনটা ধরে নিয়েই খালেদা জিয়ার তিনটি আসনেই বিকল্প প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। অ্যাটর্নি জেনারেল স্বয়ং বলেছেন, খালেদা জিয়া কিংবা এজেডএম জাহিদ হোসেনসহ ৫ প্রার্থীর বিষয়ে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছেন সাবিরা সুলতানার আদেশটি তার বিপরীত। অর্থাৎ সাবিরা সুলতানার বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ আপিলে স্থগিত না হলে প্রার্থিতা নিয়ে নতুন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। আদেশ বহাল থাকলে নির্বাচনে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণের প্রতিবন্ধকতা অপসারিত হবে। আর স্থগিত হলে তার মনোনয়ন বাতিল হবে। ফলে এক সাবিরা সুলতানার আদেশের বিরুদ্ধে সরকার তড়িঘড়ি আপিল করে। এ আপিলের ফলাফলের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতার হিসাব-নিকাশ।

সুপ্রিমকোর্ট বার সূত্র জানায়, সাবিরা সুলতানার একটি আদেশের ফলে খালেদা জিয়ার মতোই প্রার্থিতার ঝুঁকিতে থাকা বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, হাফিজ ইব্রাহিম, আওয়ামী লীগের মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, হাজী সেলিমেরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বাধা কাটতে পারে।

আইনজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক গতকাল শুক্রবার টেলিফোনে ‘বাংলাদেশের খবর’কে বলেন, আপিল বিভাগের আদেশ পেলে হয়তো প্রার্থিতার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে। এ চিন্তা থেকেই হয়তো তড়িঘড়ি আপিল করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণও। 

সাবিরা সুলতানার আদেশের বিরুদ্ধে আপিল প্রসঙ্গে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাসুদ হাসান চৌধুরী শুক্রবার বিকালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশ আমরা স্থগিত চেয়ে আবেদন ফাইল করেছি। এটি আপিল বিভাগের চেম্বার জাস্টিসের কোর্টে দাখিল ও শুনানির দিন ঠিক হয়েছে শনিবার সকাল ১০টায়। ‘সাপ্তাহিক ছুটির দিনও আদালত বসবে কি-না আর অতীতে এমন ঘটনার নজির আছে কি-না’ এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চেম্বার কোর্ট যেকোনো দিন যেকোনো স্থানে বসতে পারেন। এতে কোনো আইনি বিধি-নিষেধ নেই। এরই মধ্যে মামলার দুই পক্ষকেই শুনানিতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

গত ২৯ নভেম্বর যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা সুলতানার বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা ও দণ্ড স্থগিত করে আদেশ দেন বিচারপতি মোহাম্মদ রইচ উদ্দিনের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ বিষয়ে সাবিরার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। এর ফলে যারা নির্বাচনে অংশ নিতে চান, তারা হাইকোর্টে সাজা বা দণ্ড স্থগিত চেয়ে আবেদন করে ভোটে অংশ নিতে পারবেন।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১