আপডেট : ১৬ July ২০১৮
বিশ্বব্যাপী যে খাবার উৎপাদিত হয় তার প্রায় এক-তৃতীয়াংশের উৎপাদনে ভুমিকা আছে নানা রকমের কীটপতঙ্গের। মৌমাছির মতো পতঙ্গ ফুলে ফুলে ঘুরে নিজেদের জন্য খাবার সংগ্রহের পাশাপাশি পরাগায়ন ঘটিয়ে ফল ও ফসল উৎপাদনে বিরাট ভূমিকা রাখে। কিন্তু আধুনিক কৃষি ও উদ্যান ব্যবস্থাপনায় কীটপতঙ্গ তাড়াতে নির্বিচারে ব্যবহার করা হচ্ছে কীটনাশক। তাতে সাময়িক উৎপাদন বাড়লেও প্রাণ ও প্রতিবেশের ওপর পড়ছে ভয়ানক বিরূপ প্রভাব। এভাবে চলতে থাকলে একসময় হয়তো মৌমাছির মতো উপকারী পতঙ্গগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বিশেষজ্ঞদের ভাষায়- লোকসান এখানেই থেমে থাকবে না, মৌমাছির পরিমাণ যে হারে নিম্নগামী হচ্ছে যদি তা রোধ করা না যায় এবং মৌমাছি এভাবে বিপন্ন হতে থাকে তবে পুরো পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যই ধ্বংস হয়ে যাবে। চলতি বছরের ১১ জুলাই অ্যাপ্লায়েড ইকোলজি নামের একটি গবেষণা সাময়িকীতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, ফলের বাগান বা ফসলের ক্ষেতে অতিরিক্ত কীটনাশক ছিটানোর কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মৌমাছিরা। কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় তাৎক্ষণিক মৃত্যু ছাড়াও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মৌমাছির শারীরিক ক্রিয়ায়। গবেষকরা দেখেছেন, নিকোটিনোয়েডস গ্রুপের কীটনাশকগুলোর কারণে মৌমাছিদের স্মৃতিভ্রম হচ্ছে। নতুন মৌমাছিরা কাজও শিখতে পারছে না ঠিকঠাক। এছাড়া আগের এক সমীক্ষায় পাওয়া নিকোটিনয়েডস বিষের ফলে মৌমাছি ও অপরাপর কীটপতঙ্গের মস্তিষ্ক ও শরীরে যে বিরূপ প্রভাব পড়ে এবং তাদের প্রজনন ক্ষমতা ও আয়ু কমে যায় সেই তথ্যেরও প্রমাণ পাওয়া গেছে নতুন করে। লন্ডনের রয়্যাল হলোওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই গবেষণাটি করেন আগের সব গবেষণার চেয়ে একটু বড় পরিসরে। প্রায় এক দশক ধরে তারা কৃষিজমিতে প্রয়োগ করা নানা ধরনের অ্যাগ্রোকেমিক্যাল ও কীটপতঙ্গের ওপর তার প্রভাব নিয়ে গবেষণাটি পরিচালনা করেন। তারা দেখেন বেশিরভাগ অ্যাগ্রোকেমিক্যালের কারণেই কীটপতঙ্গরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফসলের উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে মানুষ প্রকৃতি তথা নিজের ওপরই অবিচার করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক হ্যারি সিভিটার, অধ্যাপক জুলিয়া করিচেভা, অধ্যাপক মারক ব্রাউন এবং এলি লিডবেটার মিলে করেন এই গবেষণাটি। তারা অনেকগুলো ছোট জরিপ ও গবেষণার ফলাফলের সমন্বয় করেই এ সিদ্ধান্ত দেন যে, কীটনাশকগুলোর কারণে মৌমাছিদের স্মৃতিভ্রম হচ্ছে। নতুন মৌমাছিরা কাজও শিখতে পারছে না ঠিকঠাক। তারা দেখেন, শ্রমিক মৌমাছিরা যে উপায়ে ফুলের গন্ধ শনাক্ত করতে পারে, নিকোটিনয়েডসের প্রভাবে সেটা ঠিকঠাক করতে পারছে না তারা। যেসব ফুলে মধু বেশি সেই ফুল আগের মতো চিনতে পারছে না তারা। শুধু তাই নয়, মধু সংগ্রহের পর অনেক সময়ই নিজের চাকে ফিরতে পারছে না শ্রমিক মৌমাছিগুলো। গবেষকদের দাবি, শুধু নিকোটিনয়েডসের অতিরিক্ত ব্যবহারই যে এমনটা ঘটাচ্ছে তা নয়। স্বল্পমাত্রায় নিওনিকোটিনয়েডস ব্যবহার করলেও একই প্রভাব পড়ছে মৌমাছিদের ওপর। অথচ কোন ফুলে মধু আছে, মধু সংগ্রহের পরে কী করে চাকে ফিরতে হবে, তা প্রত্যেক মৌমাছির জন্য অবশ্য পালনীয় বিষয়। হ্যারি বলেন, আমরা ছোট ছোট অনেকগুলো গবেষণার পর দেখেছি এসব কীটনাশক কীভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিচ্ছে পুরো একটি প্রজাতিকে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো একদিন লোকালয়ে আর মৌমাছিদের দেখা যাবে না। শুধু লোকালয় নয়, বনের মৌমাছিরাও একই ঝুঁকিতে আছে। কারণ, মধু সংগ্রহ করতে প্রতিটি মৌমাছি ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়। হ্যারির দাবি, বিশ্বজুড়েই কীটনাশক ব্যবহারের একটা বিশেষ নীতিমালা থাকা দরকার। তা না হলে অচিরেই মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে আমাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ খাদ্য উৎপাদনকারী এই প্রাণী-প্রজাতি। আর বিশ্বের পরিবেশবাদীদের দাবি, আমাদের কৃষিকাজের ধরন এবং ধারণাটাই পাল্টে ফেলতে হবে, অরাসায়নিক পদ্ধতিতে কীট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এমন সব পদ্ধতি, যা প্রকৃতির কোনো ক্ষতি না করেই ফসলের উৎপাদন বাড়াতে পারে। তবে আশা কথা হচ্ছে যে, ইউরোপে মৌমাছিরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে। সেখানেই তাদের রক্ষায় নেওয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। ২০১৩ সালেই ইউরোপীয় কমিশন নিকোটিনয়েডস শ্রেণির কীটনাশকের ওপর দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে সেটি নানা জটিলতায় আটকে থাকলেও চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে এই শ্রেণির কীটনাশক পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমিশন অফিস থেকে প্রচার করা হচ্ছে, আমাদের ইকোসিস্টেমের জন্য অত্যাবশ্যক এবং ইউরোপীয় কৃষিতে বার্ষিক ২২ বিলিয়ন ইউরো অবদান রাখা এই মৌমাছি রক্ষায় আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১