বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালায় উদযাপনের প্রস্তুতি

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ

বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালায় উদযাপনের প্রস্তুতি

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ৩ মার্চ, ২০১৯

আগামী বছর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন শুরু হবে সব মতের রাজনৈতিক দলের নেতা ও পেশাজীবীদের নিয়ে। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় যারা তার সাহচর্য ও স্নেহ পেয়েছেন, তারা এখন যে রাজনৈতিক দলেই থাকুন, তাদের নিয়ে সর্বদলীয় কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশজুড়ে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পুরো জাতিকে সম্পৃক্ত করে সর্বজনের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও গভীর ভালোবাসায় সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আগামী ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মতারিখ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময়কে মুজিব বর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে।

সরকারি দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মধ্য দিয়ে সরকার গঠনের আগে থেকেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপনের নানা পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেয়। বঙ্গবন্ধুর গড়া দল আওয়ামী লীগ সরকার তার জন্মশতবর্ষ উদযাপনকে জাতির কাছে স্মরণীয় করে রাখার মতো আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করতে চায়। বঙ্গবন্ধু জাতির কাছে পরম পূজনীয় হওয়ায় বর্তমানসহ সাবেক বিভিন্ন সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবসহ কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক, কবি, শিক্ষাবিদ, অভিনেতা, অভিনেত্রী ও বিশিষ্ট ব্যক্তি— সবাইকে নিয়ে তার জন্মশতবর্ষ উদযাপন করা হবে। পুরো জাতিকে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতার জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানে সম্পৃক্ত করতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে থাকবে দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড পর্যন্ত নানা আয়োজন। প্রতি বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে অবশ্যই থাকবে আয়োজন। মুজিববর্ষ সরকারিভাবেও উদযাপন হবে।

দলীয় সূত্র জানায়, রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও মুজিববর্ষ সবাইকে নিয়ে উদযাপন করতে চান সরকারপ্রধান ও বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা— এ বার্তা দেশের সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও এ বার্তা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়। আগামী ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্ম তারিখ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ উদযাপন করা হবে। সঙ্গে থাকবে মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীর নানা আয়োজনও। ২০২০ সালে পূর্ণ হবে জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী আর ২০২১ সালে হবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।

সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, বায়ান্ন সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুর গঠিত সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ, গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়লাভের পর যারা বিভিন্নভাবে রাজনীতি করেছেন, তাদের মধ্যে যারা এখনো বেঁচে আছেন, সবাইকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। সময়ের বিবর্তনে আজকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বা নানা মত ধারণ করলেও এক সময় তারা বঙ্গবন্ধুর ডাকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও সংগ্রাম করেছিলেন। এ ছাড়া জাতির জনক সবার। তাকে দলীয় গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা যায় না।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়, একাত্তরে মানবতাবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর সরকারের আমলে সংবিধান অনুযায়ী নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে না। একই সঙ্গে পঁচাত্তর সালের ১৫ আগস্টে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের পরিবার ও ওই হত্যাকাণ্ডের বেনিফিশিয়ারি রাজনৈতিক দলগুলো জন্মশতবর্ষে নিমন্ত্রণ পাবে না। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির বিভিন্ন আন্দোলন ও সংগ্রামে বিরোধিতাসহ একাত্তরে কথিত অখণ্ড পাকিস্তান রক্ষার নামে ধর্মের ধুয়া তুলে বাঙালি নিধনে মেতে ওঠে দলগুলোর নেতারা। এসব দলের মধ্যে আছে জামায়াতে ইসলামী। বাহাত্তর সালের সংবিধান অনুযায়ী দলটি নিষিদ্ধ হলেও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে দলটির রাজনীতির সুযোগ করে দেন। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সরকার দলটির শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকর করেছে এবং বাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনো চলছে।

স্বাধীনতাবিরোধী ভাবমূর্তি থেকে ‘রক্ষা’ পেতে চার দশক পর নতুন নামে জামায়াত রাজনৈতিক সংগঠন গড়তে যাচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অভিযোগ, নাম বদলিয়ে খোলস পাল্টালেও বদলাবে না জামায়াতের চরিত্র। দলটি সরবে না সন্ত্রাসবাদের অন্যতম উৎস হিসেবে পরিচিত ওয়াহাবিবাদ ও মওদুদীবাদ থেকেও। দলটি নাম পরিবর্তন করলেও মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দলটির ও যুদ্ধাপরাধীদের সাজা হবেই বলেও সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপনে সর্বদলীয় কমিটি চলতি বছরই গঠন করা হবে। কমিটির বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনকে। ড. কামাল এখন রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের নেতা হলেও তিনি বঙ্গবন্ধুর সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বিশিষ্ট এ আইনজীবীকে বঙ্গবন্ধু স্নেহ করতেন। ড. কামালও বঙ্গবন্ধুকে দেখেছেন কাছ থেকে। ’৬৯ সালে দেশ স্বাধীন করার জন্য বঙ্গবন্ধুর গঠিত সর্বদলীয়  ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতাদের মধ্যে যারা জীবিত আছেন, তাদেরও এ কমিটিতে রাখা হবে। তাদের মধ্যে জীবিতরা দেশ ও বিদেশের কোথায় অবস্থান করছেন, সেসবের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে সরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম ও মতিয়া চৌধুরী, জাসদের হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন ও সিপিবির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম প্রমুখ নেতাদের সামনে রেখে মুজিব বর্ষের কর্মসূচি সাজানো হবে। আ স ম আবদুর রব ও শাহজাহান সিরাজের মতো নেতাদেরও রাখা হবে কর্মসূচিতে। যোগাযোগ করলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী আমরা খুব জাঁকজমকভাবে পালন করতে চাই। অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন, তার সান্নিধ্য পেয়েছেন, তারা সেখানে প্রাধান্য পাবেন। ড. কামাল হোসেনসহ অন্যরাও সেখানে থাকতে পারেন।’

তথ্যমতে, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে দুটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সভাপতি করে ১০২ সদস্যের ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি’ ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামকে সভাপতি করে ৬১ সদস্যের ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠিত হয়েছে। ৬১ সদস্যের কমিটিতে আছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ছাড়াও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। দুটি কমিটিকেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সাচিবিক সহায়তা দেবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads