মহল্লার ‘কুমিল্লা সেলুন’ এর আশপাশেই ‘নিউ কুমিল্লা সেলুন’ টাইপের দোকান পাওয়া যায়। ‘কুমিল্লা’ এবং ‘নিউ কুমিল্লা’ নামে পাশাপাশি দোকানের একটা সম্পর্কও থাকে। সেই সম্পর্কটা শুধু কুমিল্লা নামেই নয়। সেই সম্পর্কটা রেষারেষির। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, নিউ কুমিল্লা সেলুনের মালিক একসময় কুমিল্লা সেলুনের কর্মচারী ছিলেন। কিংবা পার্টনার। রেষারেষির কারণে নিজে দোকান খুলে বসেছেন। নাম রেখেছেন ‘নিউ কুমিল্লা সেলুন’।
এই ‘কুমিল্লা সেলুন’ ও ‘নিউ কুমিল্লা সেলুন’ এর রাজনীতি আমাদের সমাজের সর্বস্তরে। শোবিজ অঙ্গনেও। এখানে সংগঠন, প্রতি-সংগঠনে ঠাসাঠাসি। তবে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে যখন ‘এমআইবি’ নামে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা হয়, তখন অনেকেই আশান্বিত হয়েছিলেন এই ভেবে যে, এবার সঙ্গীতাঙ্গনের সত্যিকার কোনো উপকার হতে যাচ্ছে।
তা হতে যাচ্ছিলও। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ— এমআইবি যাত্রা শুরুর পরপরই বেশ কিছু ইতিবাচক কর্মকাণ্ড হাতে নেয়। তার মধ্যে অন্যতম ছিল— ‘গানমেলা’ নামে একটা গানের উৎসব আয়োজন।
২০১৫ সালে পহেলা বৈশাখকে উপলক্ষ করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এ মেলা আয়োজন করে এমআইবি। অনেকটা একুশে বইমেলার আদলে সাজানো হয় গানমেলা। নতুন-পুরনো অ্যালবামের স্টল নিয়ে বসে অডিও প্রযোজনা সংস্থাগুলো। প্রতিদিন কণ্ঠশিল্পীদের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে গানমেলা প্রাঙ্গণ। মঞ্চে তারকা শিল্পীদের উপস্থিতি জমজমাট করে তোলে গানমেলা।
চমৎকার এই উদ্যোগটি ভেস্তে যায় পরের বছরই। এমআইবির নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে। জি-সিরিজের কর্ণধার নাজমুল হক ভূঁইয়া খালেদ অপসারিত হন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে। পরিবর্তে লেজার ভিশনের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান প্রেসিডেন্টের পদে স্থলাভিষিক্ত হন। এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটা নাজমুল হক ভূঁইয়া সহজভাবে মেনে নেন না। ব্যাপারটা আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
২০১৬ সালে এমআইবির নতুন নেতারা ঘোষণা দেন আরো বড় পরিসরে গানমেলা আয়োজনের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিল্পকলা একাডেমি বেঁকে বসে। তারা তাদের মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেয় না। এমআইবির নতুন নেতৃত্ব অভিযোগ করে, এটা নাজমুল হক ভূঁইয়া খালেদের কারাসাজি। এমআইবির প্রেসিডেন্টের পদ হারিয়ে তিনি গানমেলার মতো চমৎকার এক আয়োজনটি আটকে দিয়েছেন বলে তারা দাবি করেন।
এমআইবির নতুন নেতৃত্বের দাবি কদিন বাদেই সত্য প্রমাণ হয়। মাঠে নামেন খালেদ। এবার তিনি শিল্পকলা একাডেমির ঘাড়ে বন্দুক রেখে গুলি ছোড়েন। শিল্পকলার আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ‘সঙ্গীতমেলা’। সেই ‘কুমিল্লা সেলুন’ থেকে ‘নিউ কুমিল্লা সেলুন’ হওয়ার গল্প। ‘গানমেলা’ হয়ে যায় ‘সঙ্গীতমেলা’।
দুটো নাম— ‘গানমেলা’ ও ‘সঙ্গীতমেলা’। বিষয় কিন্তু একই। নতুন-পুরনো গানের অ্যালবাম। মঞ্চে শিল্পীদের উপস্থিতি। তা সত্ত্বেও ২০১৬ সালের সঙ্গীতমেলা ঠিক জমে ওঠে না। বেশিরভাগ অডিও প্রযোজকদের উপেক্ষা করে জি-সিরিজের কর্ণধার নাজমুল হক ভূঁইয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। তার ক্ষমতা প্রদর্শনের মহড়ায় আখেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুরো মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি। থেমে যায় ‘গানমেলা’ নামে চমৎকার এক উদ্যোগ।
গত বছর গানমেলা কিংবা সঙ্গীতমেলা কোনোটাই আয়োজিত হয়নি। শিল্পকলা একাডেমির হঠাৎ জেগে ওঠা সঙ্গীতপ্রেমও যেন এক ফুৎকারে হারিয়ে গেল। এ বছরো আয়োজন হচ্ছে না সঙ্গীতাঙ্গনে প্রাণ ফিরিয়ে আনা এই মেলাটি।
এমআইবির বর্তমান নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তারা অপমানিত হয়ে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। ২০১৬ সালে একটা বড় আয়োজনের পরিকল্পনা করেছিলেন তারা। কিন্তু শিল্পকলা একাডেমির অসহযোগিতায় সেটা সম্ভব হয়নি। সংগঠনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট লেজার ভিশনের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম বড় পরিসরে সঙ্গীতমেলা আয়োজন করতে। বইমেলার মতো সারা দেশেও এটা ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। এ কারণে আমরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। ভবিষ্যতে সুযোগ হলে দেখা যাবে।’
কুচক্রী মহল বলতে আরিফুর রহমান জি-সিরিজের কর্ণধার নাজমুল হক ভূঁইয়া খালেদকেই ইঙ্গিত করেন। তার ২০১৬ সালের কর্মকাণ্ডেও তা প্রমাণিত হয়। এ ব্যাপারে নাজমুল হক ভূঁইয়া খালেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ। এ ব্যাপারে এখন কথা বলতে পারব না।’
 
                                 
                                 
                                         
                                         
                                         
                                        





