হস্তক্ষেপ নাও করতে পারে সরকার

ছবি : সংগৃহীত

নির্বাচন

ঢাকা সিটি নির্বাচন

হস্তক্ষেপ নাও করতে পারে সরকার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯

বিগত নির্বাচনগুলোতে সরকারের হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি বিরোধী দল ও সুশীল সমাজের। ফলে নির্বাচনে ভোটবিমুখতা দেখা দিয়েছে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে। এমন ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে গোটা নির্বাচন কাঠামোই ভেঙে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে তারা এ কথাও বলছেন, নির্বাচন কাঠামো ভেঙে পড়া রোধ এবং সরকার পতনের কারণ না হওয়ায় অন্তত আগের বদনাম কিছুটা ঘোচাতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ নাও করতে পারে সরকার। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছার ওপর।

এদিকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে রাজনীতির মাঠ ফের উত্তপ্ত হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এখন সর্বত্রই আলোচনা এ নির্বাচনকে ঘিরে। দেশের বৃহৎ দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের প্রার্থী বাছাইয়ে কিছুটা বিশেষ চমকও দেখিয়েছে এবার। রাজনৈতিক পরিবারের হলেও অপেক্ষাকৃত তরুণ ও শিক্ষিতদের প্রার্থী করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। আওয়ামী লীগ উত্তরে সর্বশেষ উপনির্বাচনে বিজয়ী বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলামকে মনোনয়ন দিলেও দক্ষিণে ছিটকে পড়েছেন বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন। তার স্থলে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তরুণ সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে। আর বিএনপি উত্তরে গতবারের প্রার্থী তাবিথ আউয়ালেই আস্থা রেখেছে। দক্ষিণে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে নতুন মুখ প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে। তিনি অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার ছেলে। এবারই প্রথম কোনো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন ইশরাক।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনসহ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত অন্য নির্বাচনগুলোতে সরকারের হস্তক্ষেপের অভিযোগ করে আসছে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজ। তবে বিশেষজ্ঞরা এখন মনে করছেন, ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন সরকার পতনের কারণ হবে না বলে এ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ নাও করতে পারেন ক্ষমতাসীনরা। ফলে নির্বাচন কিছুটা সুষ্ঠু হতে পারে।

নির্বাচনী পরিবেশ-পরিস্থিতি, প্রার্থী, প্রত্যাশা ও নির্বাচন কমিশনের অবস্থান নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী লেখক, গবেষক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে আর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নেই, তা হলফ করেই বলা যেতে পারে। বিশেষ করে গত এক দশকের নির্বাচন পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে যে কেউ গণতন্ত্র নিয়ে এমন প্রশ্ন তুলতে পারেন। মূলত নির্বাচন ঘিরেই এখন রাজনীতির যত হতাশা।’

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থাকে হাত করেই ক্ষমতা পোক্ত করতে চাইছে, যে ক্ষমতার সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। নির্বাচনের নামে যে প্রহসন চলছে, তারই হয়তো আরেকটি নাটক আমরা ঢাকা দুই সিটি নির্বাচনে দেখতে পাব। আগের অভিজ্ঞতা থেকেই আমি আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী নই।

তিনি বলেন, ‘তবে ঢাকা সিটি নির্বাচন নিয়ে ভিন্ন আলোচনাও সামনে আসতে পারে। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার বদলের কোনো সুযোগ নেই। সরকার গত দুটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা জারি করেছে, তা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ফলাফলে কিছুই যায়-আসে না। সরকার পতনের কারণ হবে না বলে এ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ নাও হতে পারে। সিটি নির্বাচন কিছুটা সুষ্ঠু হতে পারে, এটি তার একটি এবং আশার কথাও বটে।’

‘আরেকটি বিষয় হলো, গত এক দশকে পরিকল্পিতভাবে মানুষকে নির্বাচনবিমুখ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই আর নির্বাচন কাঠামোর ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। এমন ধারাবাহিকতা থাকলে গোটা নির্বাচন কাঠামোই ভেঙে পড়বে। সরকার শুভবুদ্ধির উপলব্ধি থেকে হয়তো এ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার সুযোগ দেবে। অন্তত আগের বদনাম কিছুটা দূর করতে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ নাও করতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছার ওপর।’

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রাজনীতির চলমান পরিস্থিতিতে জনগণের আসলে কিছুই করার নেই। মানুষ নির্বাচন ব্যবস্থায় কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না। ভোট দিতে পারবে কি পারবে না অথবা কাকে ভোট দিতে হবে, এ ভাবনাও করতে পারছে না জনগণ। অথচ সংকট নিরসনে সাধারণের অংশগ্রহণই জরুরি।’

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এ নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট, তা নানাভাবেই প্রমাণিত। আগের কমিশনও তা-ই ছিল। নির্বাচন কমিশন মানুষের বিশ্বাসের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।

একাধিক জালিয়াতির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এ কমিশন অতিপাপ করে ফেলেছে। কমিশনের পাপ ঢাকা সিটি নির্বাচনে মোচন হবে না। এ নির্বাচন কমিশনকে কেউ আর বিশ্বাস করে না। কারণ তারা বহু অপরাধের সঙ্গে যুক্ত।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সংবিধানের ৭৩ থেকে ৭৯ ধারা অনুযায়ী, কমিশন গুরুতর অপরাধ করেছে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের বিচার হওয়া দরকার।’

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য থেকে দেখেছি, অনেক কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। অনেক সেন্টারে বৈধ ভোটের চেয়ে অবৈধ ভোট বেশি পড়েছে। চট্টগ্রামে গণসংহতির এক প্রার্থী একটি ভোটও পায়নি। এগুলোর মাধ্যমে জালিয়াতির সীমা চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। এছাড়া কমিশন যে তথ্য দিয়েছে, তা পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট।

‘আগের অভিজ্ঞতা থেকেই আমি আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী নই। নির্বাচন কমিশন এ নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহার করতে চাইছে। অথচ গত জাতীয় নির্বাচনে কয়েকটি সেন্টারে ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহার করে নির্বাচন কমিশন নানা অসঙ্গতির জন্ম দিয়েছে। বাইরের দেশের অভিজ্ঞতার কথা বলে এ পদ্ধতি ব্যবহার করলেও, প্রয়োগ করেছে নিজেদের সিদ্ধান্ত। ইভিএমে ভোট পড়েছে ৫১ দশমিক ৪২ শতাংশ। ২৯৪টি আসনে ভোট পড়েছে ৮০ দশমিক ৮০ শতাংশ। এর চেয়ে বড় জালিয়াতির প্রমাণ আর কী হতে পারে!’

ঢাকার দুই সিটির তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর, বাছাই ২ জানুয়ারি, প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ জানুয়ারি, ভোট গ্রহণের দিন ৩০ জানুয়ারি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads