হবিগঞ্জ জেলার নবগঠিত শায়েস্তাগঞ্জ, মাধবপুর ও বাহুবল উপজেলার নীরব নিভৃত পল্লীগুলোয় এখন একের পর এক শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। কয়েক বছরের ব্যবধানে গড়ে উঠছে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা। গ্রামীণ পরিবেশে এখন বিরাজ করছে শহরের হাওয়া।
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সহজলভ্যতা আর মহাসড়ক দিয়ে সহজে যোগাযোগের কারণে উদ্যোক্তারা বেছে নিয়েছেন পাহাড়ঘেঁষা এ জনপদকে। রেল অথবা সড়কযোগে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সিলেট যাওয়ার পথে মাধবপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা চত্বর নামক স্থানে এসে রাস্তার দুই দিকে তাকালে কেবল চোখে পড়বে নতুন নতুন শিল্প- কারখানা।
সিলেট বিভাগের প্রবেশদ্বার মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর, নোয়াপাড়া, বেজুড়া, শাহপুর, বাঘাসুরা, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নূরপুর, বিরামচর, উবাহাটা ও বাহুবল উপজেলার মিরপুর, নতুনবাজার গ্রামে এসব শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে।
গড়ে ওঠা শিল্প-কারাখানার মধ্যে স্কয়ার, হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক (প্রাণ-আরএফএল), আকিজ গ্লাস, যুমনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, ট্রান্সকম গ্রুপ, চারু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, আরএকে সিরামিক, বাদশা গ্রুপ, সিপি বাংলাদেশ, স্টার সিরামিক্স, তাসহিদ কটন মিলস, মেঘনা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ, বেঙ্গল গ্রুপ, মার কোম্পানি, এন জে গ্রুপ, চায়না-বাংলা সিরামিক, এজি সিরামিক, সায়হাম গ্রুপ, এফএসএল গ্রুপ, এসএম গ্রুপ, রাখিন গ্রুপ, কে-কো কেমিক্যাল, ম্যাটাডোর গ্রুপ, সেলিম গ্রুপ, এফএল গার্মেন্ট, টিকে গ্রুপ, রূপায়ণ গ্রুপ উল্লেখযোগ্য।
হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় প্রায় শতাধিক শিল্প-কারাখানা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে মাধবপুর উপজেলায় ৬০টি শিল্প-কারাখানা গড়ে উঠেছে।
প্রাণ-আরএফএলের মিডিয়া ম্যানেজার জিয়াউল হক জিয়া বলেন, ঢাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এ এলাকায় শিল্প- কারখানাগুলো গড়ে উঠেছে। শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠায় এলাকার লোকজনের কর্মসংস্থান যেমন সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি তাদের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হচ্ছে। ২০১৪ সালে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক নামে (প্রাণ-আরএফএল) যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এখানে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। এর মধ্যে ৮০ ভাগ স্থানীয় লোক রয়েছে।
এ ছাড়া রয়েছে ৫০-৬০ ভাগ নারী শ্রমিক।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কয়েক বছর আগেও এসব এলাকায় একটি গাড়ির শব্দ শোনা গেলে গ্রামের মানুষ বেরিয়ে আসত দেখার জন্য। আর এখন সেখানে আধুনিক কলকারখানার শব্দে ঘুম ভাঙে এলাকাবাসীর। আধুনিক জীবনধারা থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন ছিল এলাকাবাসী। এখন সে এলাকার চেহারা পাল্টে গেছে পুরোপুরি। ৫-৬ বছর আগের এলাকার সঙ্গে এখানকার তফাত এখন আকাশ-পাতাল। এখানে ক্রমেই বাড়ছে কলকারখানা; উৎপাদন হচ্ছে দেশীয় অনেক নতুন নতুন পণ্য। তৈরি হচ্ছে হাজার হাজার লোকের কর্মক্ষেত্র।
তারা আরো জানান, কিছুদিন আগেও এসব এলাকায় কেউ জমি কিনতে চাইতো না। প্রতি একর বিক্রয় হতো লাখ টাকায়। বর্তমানে সেই জায়গায় প্রতি শতক জমি বিক্রি হচ্ছে আড়াই লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত।
কোনো কোনো স্থানে দশ লাখের বেশি টাকা দিয়ে শতক কিনছেন কোম্পানি মালিকরা। এলাকার কর্মক্ষম লোকজন আগে যেখানে ঘুরে বেড়াত কাজের সন্ধানে এখন তারা দলবেঁধে কাজ করছেন এসব কোম্পানিতে। সব মিলিয়ে এক সময়ের নিস্তব্দ পল্লীগুলো যেন এখন পরিণত হচ্ছে শিল্পনগরীতে।
 
                                 
                                 
                                         
                                         
                                         
                                        





