গত সপ্তাহের শুরুর দিকে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে কাঁচাবাজার। তবে এখন সে অবস্থা কেটে গেছে। সরবরাহ সঙ্কট না থাকায় কমে এসেছে পণ্যের বর্ধিত দাম।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ওই সময় যেকোনো পদের সবজির দরই কমপক্ষে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছিল। আর কাঁচামরিচের মতো কিছু পণ্যের দাম ছিল লাগামহীন। এ ছাড়া মাছের দামও কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি ছিল। তবে এখন পরিবহনব্যবস্থা স্বাভাবিক হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে এসব পণ্যের দামে।
তারা আরো জানিয়েছেন, স্বাভাবিকের তুলনায় শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ায় দাম কমার আরেক কারণ। শীতকালীন কিছু সবজির সরবরাহ এখন বেশ ভালো, ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে কিছু সবজির দামও আগের স্বাভাবিক সময়ের থেকে কমেছে।
ধর্মঘটের মধ্যে রাজধানীর বাজারে খুচরায় প্রতি কেজি কাঁচামরিচের দাম উঠেছিল ১৪০ টাকা পর্যন্ত, যা পাইকারিতেই ছিল ১০০ টাকা। তবে গতকাল বাজারভেদে খুচরা বিক্রেতারা ২৫০ গ্রাম কাঁচামরিচ বিক্রি করছেন ১৫ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি কেজি মরিচের দর পড়ছে ৬০ টাকা। আর কারওয়ান বাজারের আড়তগুলোতে পাইকারি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে।
একইভাবে বাজারে আসা শিম ১০০ টাকার নিচে নেমেছিল ধর্মঘটের আগে। কিন্তু সেটা আবার ধর্মঘটের সময় ১২০ টাকায় ওঠে। কিন্তু গত তিন দিনে প্রচুর সরবরাহ থাকায় সবজিটি ৪০-৬০ টাকার মধ্যে মিলছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে বাজারের সব থেকে দামি সবজি এখন সস্তার তালিকায় যোগ হয়েছে। শীতের ফুলকপি ও বাঁধাকপিরও সরবরাহ বেড়েছে। দামও কিছুটা কমতির দিকে। মাঝারি সাইজের প্রতিটি ফুলকপি ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে সপ্তাহখানেক আগে। সরবরাহ বাড়ার কারণে এগুলো বাজারভেদে ৪০ টাকার মধ্যে বিক্রি করতে দেখা গেছে। বাঁধাকপির দামও ৪০ টাকা থেকে কমে ৩০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
রামপুরা বাজারে সবজি বিক্রেতা লিমন হোসেন বলেন, ধর্মঘটের পর থেকে পাইকারি বাজারে প্রচুর সবজি আসছে। কারণ অনেক কৃষক সে সময় ক্ষেত থেকে সবজি ওঠাননি। এ কারণে প্রতিদিন এসব সবজির দাম কমছে।
তবে কিছু সবজি বিক্রি হচ্ছে স্বাভাবিক দরেই। এর মধ্যে শীতকালীন নতুন গোল বেগুন একটি। প্রতি কেজি নতুন বেগুন ৫০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া নতুন আসা পণ্যের মধ্যে পেঁয়াজপাতার দাম বেশি। প্রতি কেজি পেঁয়াজপাতা বাজারে আসার পর থেকেই ৮০-১০০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ পণ্যের সরবরাহ খুব কম বলে জানা কয়েকজন ব্যবসায়ী।
এদিকে মসলার বাজারে পেঁয়াজ ও রসুনের দাম স্থিতিশীল থাকলেও বেশ বেড়েছে আদার দাম। এখন বাজারে প্রতি কেজি চীন থেকে আমদানি করা আদা ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ১৪০-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ভারত থেকে আমদানি করা আদা বিক্রি হয় সচরাচর দেশি বলে। এসব আদার কেজি ১২০ টাকা, যা আগে ১০০ টাকার নিচে মিলত। আর প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ আগের মতো ৪০-৪৫ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজ ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। সঙ্গে বাজারে দেশি রসুনের দাম ৬০-৭০ টাকা এবং আমদানি করা রসুনের দাম ৮০ টাকা।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা শেষে রাজধানীর বাজারে বেড়েছে ইলিশ মাছের সরবরাহও। তবে জোগান নিষেধাজ্ঞায় আগের মতো স্বাভাবিক হতে আরো সপ্তাহ খানেক লাগবে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। খিলগাঁও রেলগেট মাছের বাজারে, এখন বাজারে এক কেজি বা তার থেকে একটু বড় ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১১০০-১২০০ টাকা কেজি দরে। আর ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকার মধ্যে আর ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা কেজি দরে। আর আধা কেজির থেকে ছোট ওজনের ইলিশের কেজি ৪০০ টাকা।