নাটোরের লালপুরে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীন কোন্দল দিন দিন বেড়েই চলেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে এমপি সমর্থকদের দুরত্ত দিন দিন দুরত্ব বেড়েই চলেছে। মাত্র মাস খানেক আগেই এমপি সমর্থকরা উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার অফিস ভাংচুরের পরে এবার ভিজিএফ কার্ডকে কেন্দ্র করে উপজেলার কদিমচিলান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ওই ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম রেজা মাষ্টারকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে এমপি সমর্থকরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধায় উপজেলার গোপালপুরে এ ঘটনা ঘটে। আহত চেয়ারম্যানকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে।
কদিমচিলান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহসভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম রেজা মাষ্টার জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি ভিজিএফ কার্ডের তালিকা জমা দিতে উপজেলা পিআইও অফিসে যান। পিআইও আব্দুর রাজ্জাক তাকে দলীয় ভাগের কার্ড গুলি স্থানীয় এমপি সমর্থিত ব্যক্তিদের সাথে সমন্বয় করে তালিকা জমা দেওয়ার জন্য বলেন অন্যথায় তালিকা জমা নেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এসময় তিনি পিআইও কে স্থানীয় ইউপি ও ওয়ার্ড নের্তৃবৃন্দের কাছ থেকে দলীয় কার্ডের তালিকা নেয়া হয়েছে বলে জানান। তখন পিআইও বলেন, দলীয় বুঝি না। এমপি কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তিদের মাধ্যমে দলীয় কার্ডের তালিকা জমা দিতে হবে। এসময় উভয়ের মাঝে কথাকাটি শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে দু'জনেই উত্তেজিত হয়ে হাতাহাতির পর্যায়ে গেলে ঘটনাস্থলে উপস্থিতরা তাদেরকে নিয়ন্ত্রনে আনেন। এর কিছুক্ষনের মধ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের সমর্থনপুষ্ট দেলোয়ার, সজল, স্বপন, সহ কয়েকজন। তারা উপজেলা চত্তরে চেয়ারম্যানকে খোঁজ করতে থাকে ও এমপি'র নির্দেশ অমান্য করায় তাকে হুমকি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে সন্ধা ৬ টার দিকে চেয়ারম্যান সেলিম রেজা মাষ্টার উপজেলা থেকে বের হলে পিছু নেয় তারা। চেয়ারম্যান গোপালপুর বাজার এলাকায় পৌছালে তারা তার পথরোধ করে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এবং পরে তাকে সেখান থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। তিনি এর বিচার দাবি করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, দলীয় কোন্দল এমন পর্যায়ে পোঁছেছে যে, এখন আর মান সম্মান নিয়ে রাজনীতি করা সম্ভব হচ্ছেনা। দলীয় কার্ডগুলো এতদিন ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা তালিকা করতেন অথচ স্থানীয় এমপি সাহেব তার পছন্দ মত ব্যক্তিদের দিয়ে কার্ডের তালিকা করায় দলীয় নেতাকর্মীরা বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে সেলিম রেজা চেয়ারম্যানকে মার খেতে হলো।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক চেয়ারম্যানের সাথে কথা কাটাকাটির কথা স্বীকার করে জানান, ঘটনার পরপরই চেয়ারম্যান এখান থেকে চলে গেছেন তবে পথিমধ্যে কি ঘটেছে তা তার জানা নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মুল বানীন দ্যুতি জানান, পিআইও ও চেয়ারম্যানের মধ্যকার বিবাদের বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষনিক তাদের বিবাদ মিটিয়ে নিয়ম মাফিক কাজ করার পরামর্শ দিয়েছি। পরবর্তীতে শুনলাম চেয়ারম্যানকে পথিমধ্যে মারধর করা হয়েছে। কে বা কারা মেরেছে আমার জানা নেই, তবে বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জুয়েল জানান, আমি ঘটনাটি শুনেছি, কিন্তু এখনো পর্যন্ত কেউ কোন অভিযোগ দায়ের করেননি, অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল জানান, চেয়ারম্যান সেলিম রেজা মাস্টারের উপর হামলার কথা তিনি শুনেছেন তবে কি কারণে এ হামলা হয়েছে তা জানেন না তিনি।