মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ‘রোহিঙ্গা নিধন’ বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের নীরবতার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের দুটি গ্রুপ দাবি করেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী দেশটির সেনাবাহিনীর হাতে গণহত্যার শিকার হয়েছে। গত সোমবার ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির আইনি সংস্থা পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল ল অ্যান্ড পলিসি গ্রুপ এমন দাবি করে। ওই দিন ওয়াশিংটনের হলকস্ট মিউজিয়ামও এক বিবৃতিতে একই দাবি করে। এর আগে কেবল জাতিসংঘই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী দেশটির সেনাবাহিনীর হাতে গণহত্যার শিকার হয়েছে বলে উল্লেখ করেছিল। তবে বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রশাসন কোনো মন্তব্য থেকে বিরত থাকে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স গত মাসে এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গা নির্যাতনের ঘটনাকে ‘ট্র্যাজেডি’ হিসেবে বর্ণনা করেন, কিন্তু তাকে ‘গণহত্যা’ বলতে অসম্মত হন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন স্বীকৃতির ফলে আন্তর্জাতিক আইনের চোখে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বেশকিছু আইনগত দায়দায়িত্ব এসে পড়ে, যার জন্য তারা এখনো প্রস্তুত নয়। তবে কোনো মন্তব্য না করলেও দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোহিঙ্গা নিধনের তদন্তের ভার দেয় পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল ল অ্যান্ড পলিসি গ্রুপ (পিআইএলপিজি) নামের আইনজীবীদের ওই সংগঠনটিকে। তদন্তে গণহত্যার প্রমাণ পাওয়ার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তদন্ত শেষে সংগঠনটি জানায় রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিধন অভিযান যে স্পষ্টতই একটি গণহত্যা এ বিষয়ে তাদের হাতে যথেষ্ট প্রমাণ আছে।
পিআইএলপিজি সোমবার জানায়, রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর যেসব রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের মধ্যে এক হাজারের বেশি ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা নিশ্চিত হয়েছে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা হয়েছে। তারা আরো জানিয়েছে, সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছে তা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ।
ওয়াশিংটনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতা পল উলিয়ামস বলেন, আমাদের নেওয়া সাক্ষাৎকারে এটা খুব স্পষ্ট যে, প্রকৃতপক্ষে বৈধ উপায়ে পাওয়া তথ্যের উপসংহারে এটা বলা যায়, রোহিঙ্গারা যুদ্ধাপরাধ, মনবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার শিকার।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি সহিংসতা চালানো অপরাধীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি মামলা আনার পর্যাপ্ত আইনি ভিত্তি রয়েছে। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত অত্যাচার ও অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তাদেরকে আইনি জবাবদিহিতার মাধ্যমে বিচারের সম্মুখীন করার সুপারিশ করা।
তদন্ত দলের আরেক কর্মকর্তা মার্কিন নৌবাহিনীর রিজার্ভ সদস্য গ্রেগরি নুন বলেন, তদন্তকালে তিনি এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন, যা গণহত্যা ছাড়া আর কিছু নয়। রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের সঙ্গে কথা বলার সময় এক হাজারেরও বেশি সাক্ষাৎকার তারা গ্রহণ করেন। উদ্বাস্তুরা সবাই একইরকম ভয়াবহ ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন।
ওয়াশিংটনের হলকস্ট মিউজিয়াম বিবৃতিতে রোহিঙ্গা নির্যাতনকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে ও তার প্রতিকারে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে।