জাতীয়

রাজধানীর মশা নিধনে নতুন কৌশল

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২১ মার্চ, ২০২১

মশা নিধনে গাপ্পি মাছ, হাঁস চাষ ও ড্রোন ব্যবহার ব্যর্থ হওয়ার পর এবার ব্যাঙকে কাজে লাগানোর চেষ্টা চলছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাঙ এনে নগরীর বিভিন্ন পুকুর ডোবা ও জলাশয়ে ছেড়ে দেবে। প্রাথমিকভাবে ডিএসসিসির কয়েকটি জলাশয়ে এরই মধ্যে কিছু ব্যাঙ অবমুক্ত করা হয়েছে। তবে কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, এই উদ্যোগ হাস্যকর। কারণ মাছ, হাঁস ও ব্যাঙ চাষ কখনো মশার লার্ভা ধ্বংস করতে পারে না। পৃথিবীর কোনো দেশে এমন নজির নেই। ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পরপরই মাছ ও হাঁস চাষের মাধ্যমে নগরীতে মশা নিয়ন্ত্রণের কথা জানান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তাই নগরীর বিভিন্ন পুকুরে মাছ ও হাঁস অবমুক্ত করা হয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই মাছ ও হাঁস উধাও হয়ে যায়।

ডিএসসিসির এসব উদ্যোগে যখন কোনোভাবেই মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, তখন এবার নতুন করে নগরীর পুকুর-ডোবাসহ জলাশয়গুলোতে ব্যাঙ অবমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে মাত্রাতিরিক্ত দূষণের শিকার পুকুর ও জলাশয়ের পানিতে ব্যাঙ কতদিন বাঁচবে তা নিয়ে খোদ সিটি করপোরেশনই শঙ্কা প্রকাশ করেছে। কারণ এর আগে এসব পুকুর ও জলাশয়ে অবমুক্ত করা হাঁস ও মাছ বেশি দিন বাঁচেনি। ডিএসসিসির এই উদ্যোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য সংস্থার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদের দপ্তরে গেলেও তিনি সাক্ষাৎ দেননি। তার ব্যক্তিগত সহকারী যেকোনো তথ্যের জন্য গণসংযোগ দপ্তরে যোগাযোগ করতে বলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করে কিছু ব্যাঙ পুকুর ও জলাশয়গুলোতে অবমুক্ত করেছি। যে ব্যাঙগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে সেগুলো ঢাকার পরিবেশের জন্য

উপযুক্ত কি না জানতে চাইলে বলেন, মাত্র পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা এখন পর্যবেক্ষণ করব এ ব্যাঙগুলো বাঁচে কি না। কারণ আমাদের শহরের খাল ও জলাশয়ের পানি যে পরিমাণ দূষিত তাতে ব্যাঙগুলো বাঁচা কঠিন। যদি আমরা সফল হই তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো। ডিএসসিসির এই উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, মশা দমনের জন্য তারা (ডিএসসিসি) এর আগে জলাশয়গুলো পাতিহাঁস ও তেলাপিয়া মাছ ছেড়েছিলেন। এখন নতুন করে ১৫ হাজার ব্যাঙ আমদানি করছেন। এখানে একটা কথা স্পষ্ট- পৃথিবীর কোথাও হাঁস ও ব্যাঙ দিয়ে কখনো মশা নিয়ন্ত্রণ হয়নি, হবেও না। হাঁস ও ব্যাঙের খাবার মশা নয়, অন্য কিছু।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে ৩৭ প্রজাতির ব্যাঙ রয়েছে। এই ব্যাঙের প্রত্যেকটির এক একটি রেঞ্জ রয়েছে। সুন্দরবন বা কক্সবাজার এলাকার ব্যাঙ যদি ঢাকায় এনে ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে সেগুলো মারা যাবে। কিছু কিছু ব্যাঙের প্রজাতি আছে যেগুলো খুবই দুর্লভ। সেগুলোও যদি এনে ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আর বড় ব্যাঙ মশার লার্ভা খায় না। তারা স্থলভাগে থাকে। তাদের ৯৯ শতাংশ খাবার হচ্ছে বড় খাবার। তারা ঘাস থেকে শুরু করে মাংস পর্যন্ত খায়। এই খাবার থেকে তারা অনেক ক্যালরি পায়। কিন্তু একটা মশা থেকে খুবই কম ক্যালরি পাবে।

তবে ব্যাঙাচি মশার লার্ভা উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে। অর্থাৎ ব্যাঙাচির লার্ভা মশা উৎপাদনে বাধা দেয়।  বিশেষ করে বৈশাখ বা জৈষ্ঠ্য মাসে বৃষ্টির পরিষ্কার পানিতে ব্যাঙ যখন প্রজনন করে,  ব্যাঙাচি হয় তখন সেই পানিতে মশার লার্ভা উৎপাদনে তারা বাধা সৃষ্টি করে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তখন মশা তো জমিতে থাকে না। মশা থাকে ঘরের ভেতরে। তখন এডিস মশার সৃজন হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads