বাংলাদেশে বিনিয়োগের অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের মিরসরাই ইকোনমিক জোন (ইজেড)। এর প্রতি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ এত বেশি যে, এখন সেখানে জমি পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে এরই মধ্যে অনুমোদন পাওয়া বিনিয়োগ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে মিরসরাই একসময় বাংলাদেশের বিনিয়োগ রাজধানী হিসেবে পরিচিত হবে। গতকাল সিটি ইকোনমিক জোনের চূড়ান্ত লাইসেন্স প্রদান অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী।
গতকাল বেজা কার্যালয়ে এ লাইসেন্স প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বেজা চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির নির্বাহী সদস্য ড. এম এমদাদুল হক, মো. আইয়ুব, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সিইও নাসের এজাজ, সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান, পরিচালক মো. হাসান, শম্পা রহমানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সিটি ইকোনমিক জোন লিমিটেড সিটি গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৭৭ দশমিক ৯৬৫৫ একর জমির ওপর এটি অবস্থিত। সিটি ইকোনমিক জোন দেশের সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়ন তথা শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও জিডিপি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে বেজা মনে করছে। এরই মধ্যে সিটি ইকোনমিক জোনের মাটি ভরাট, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া এখানে কারখানা স্থাপনের জন্য তিনটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে।
সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, সিটি ইকোনমিক জোনে আগামী এক বছরে ১০ কোটি ডলার বিনিয়োগ হবে। এ বিনিয়োগ পর্যায়ক্রমে বাড়বে। এখানে মূলত খাদ্যপণ্য উৎপাদন করা হবে। আমাদের বিনিয়োগ ছাড়াও ইকোনমিক জোনটিতে বিদেশী বিনিয়োগকে গুরুত্ব দেয়া হবে।
বেজা জানিয়েছে, সিটি ইকোনমিক জোনে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ রয়েছে, যা সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের সরবরাহ করা হবে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পানি শোধনাগার প্লান্ট, বর্জ্য পরিশোধনাগার প্লান্ট, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাসহ সব ধরনের পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা থাকবে। প্রস্তাবিত শিল্প খাতগুলোর মধ্যে ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ও রফতানিমুখী শিল্প রয়েছে। বাণিজ্যিক উৎপাদনের প্রথম বছর থেকে সিটি ইকোনমিক জোনে দক্ষ-অদক্ষ, নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট তিন হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, যা পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে ২০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান, সিটি গ্রুপ বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদনে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। এমনকি পর্যটন খাতেও প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগের আগ্রহ রয়েছে। আশা করি, সিটি গ্রুপ তার সুনাম অক্ষুণ্ন রেখে ইকোনমিক জোন সফলভাবে বাস্তবায়নে সক্ষম হবে ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য একটি দিক হলো এগুলোর উন্নয়নকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। অথচ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নে অনেক সময় লাগে। মিয়ানমারে লেগেছে ২০ বছর।
অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মত প্রকাশকালে তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে মিরসরাই ইকোনমিক জোন ভবিষ্যতে দেশের উন্নয়নে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আজ এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ আমাদের কার্যালয়ে এসে মিরসরাইয়ে জমি চেয়েছেন। আমি বলেছি জমি নেই। মিরসরাইয়ে এরই মধ্যে যেসব বিনিয়োগ প্রস্তাবের অনুমোদন হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হলে একটা সময় বাংলাদেশে বিনিয়োগের রাজধানী হবে মিরসরাই।
 
                                 
                                 
                                         
                                         
                                         
                                        





