সেলিম সানোয়ার পলাশ, গোদাগাড়ী (রাজশাহী)
সৈবুর আলী একজন সাধারণ কৃষক। বাড়ি গোদাগাড়ী উপজেলার পালপুর গ্রামে। জমি চাষাবাদ করে চলে তার সংসার। নিজের চাষযোগ্য ৬ বিঘা জমি রয়েছে। সেই জমিতে ধনিয়া, পেঁয়াজ, রসুন, বেগুন জাতীয় ফসল চাষ করলেও তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে মরিচ। তার সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত। মরিচ চাষ শুরু করার পর থেকে সংসারে এসেছে সচ্ছলতা।
ক্ষেত থেকে মরিচ তোলার সময় কথা হয় চাষি সৈবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, মরিচ চাষ করে সফলতা পেয়েছি। অন্যান্য ফসল চাষ করলেও প্রতি বছর মরিচ চাষ করি। মরিচ চাষে ভালো লাভ হয়। সংসারে ফিরে এসেছে সচ্ছলতা। গত বছর এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছিলাম। এক বিঘায় সার, টারা, সেচ, শ্রমিকসহ মোট খরচ হয়েছিল ১৫ হাজার টাকা। জমি থেকে মরিচ বিক্রি করে পেয়েছি ৯৫ হাজার টাকা। লাভ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। এবারো মরিচ চাষ করেছি ১০ কাঠা জামিতে। আমার ৫ বিঘা জমি পেয়ারা চাষিকে লিজ দেওয়ায় অন্যের ১০ কাঠা জমি লিজ নিয়ে হাইব্রিড সুপার জাতের মরিচ চাষ করেছি। ১০ কাঠা জমি থেকে প্রতি পালিতে মরিচ উঠছে ৬ থেকে ৭ মণ করে। তবে এবার মরিচের দাম না পাওয়ায় হয়তো লাভ গত বছরের মতো হবে না। প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি করছি ১৫ টাকা দরে। তার ১ মেয়ে ও ১ ছেলে। মেয়ে রুকুমনি চতুর্থ শ্রেণিতে আর ছেলে রাকিব সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তার স্বপ্ন দুই সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করা।
তার মরিচ চাষ দেখে মরিচ চাষে বেশ আগ্রহ দেখা দিয়েছে উপজেলার চাষিদের মাঝে। চাষিরা বলেন, বসতভিটায় অনেকে মরিচ চাষ করছি। কৃষি অফিস থেকে সঠিক সময়ে সঠিক সহযোগিতা পাওয়ায় অল্প পরিচর্যা এবং স্বল্প খরচে অনেক লাভ হওয়ায় মরিচ চাষে এগিয়ে আসছে অনেক কৃষক। এতে করে এ অঞ্চলের মরিচের চাহিদা পূরণ হওয়ার পাশাপাশি দেশের চাহিদাও পূরণ হবে বলে মতপ্রকাশ করেন কৃষকরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মরিচের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। উপজেলার দেওপাড়া, গোগগ্রাম, মাটিকাটা, মোহনপুর ও রিশিকুল ইউনিয়নেসহ অনেক অঞ্চলে মরিচের চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে মাটিকাটা ইউনিয়নে বেশি বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস।
কৃষি অফিস জানায়, এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ১৯৫ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। গত বছর এ উপজেলায় মরিচ চাষ হয়েছিল ২২৫ হেক্টর জমিতে। এখনো অনেকে মরিচ চাষের জন্য জমি তৈরি করছেন এবং জমিতে মরিচ লাগাচ্ছেন। এ বছর মরিচের চাষ গত বছরের লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যাবে। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, মরিচ চাষে অনেক লাভবান হওয়া যায়। মরিচ চাষ বৃদ্ধি করার জন্য ৪-৫টি প্রদর্শনী প্লট তৈরি করা হয়েছে। মরিচ চাষের মূল সমস্যা মরিচ গাছ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া। ভাইরাস সমস্যা দূর করতে পারলে মরিচে অনেক লাভবান হওয়া যায়। আমরা এ ব্যাপারে কৃষকদের যে কোনো সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।