একটি হত্যাকাণ্ড ওলট-পালট করে দিল বিশ্বের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল। দুর্বলকে করে দিল সবল, সবলের কণ্ঠ হয়ে গেল দুর্বল। যে নামটি কয়েকদিন আগেও তেমন কেউ জানত না, সে নামটি হয়ে দাঁড়িয়েছে চেতনা ও শক্তির প্রতীক হয়ে। বলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় নিহত ইরানি জেনারেল কাসেম সোলাইমানির কথা। জীবিত সোলাইমানি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই তাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু মৃত সোলাইমানি যে এতটা শক্তিশালী হয়ে দাঁড়াবে তা বুঝতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। বোঝার ভুলের খেসারত যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েকদিন ধরে দিয়ে যাচ্ছে। আর কতদিন, কোন পথে, কী কী ভাবে এর খেসারত দিতে হবে, দেশটি তার কোনো ধারণা করতে পারছে না। এখানেই মৃত সোলাইমানির কাছে ধরাশায়ী বিশ্বের পরাশক্তি হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র। খবর : বিবিসি, পার্স টুডে, ইরান নিউজ ডেইলি, আলজাজিরা ও সিএনএনের।
এ হত্যার জেরে ইরান ইতোমধ্যে ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এক বিবৃতিতে দেশটি জানিয়ে দিয়েছে, তারা আর তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ, মজুত, গবেষণা বা উন্নয়ন সীমিত রাখার শর্ত মেনে চলবে না। রোববার ইরানের পার্লামেন্টে এক বৈঠকের পর চুক্তি থেকে সরে আসার ওই ঘোষণা আসে। একই দিন ইরাকের পার্লামেন্টে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের সে দেশ থেকে বের করে দিতে একটি প্রস্তাব পাস হয়।
এছাড়া ইরানের পাল্টাঘাতের আশঙ্কায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) বিরোধী লড়াই স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট। এক বিবৃতিতে মার্কিন কমান্ড বলেছে, গত কয়েক সপ্তাহে ইরাকি ও যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে একের পর এক আক্রমণের কারণে আমরা আইএসবিরোধী লড়াই আপাতত স্থগিত রেখেছি। ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের নিয়ার ইস্ট পলিসির গবেষক মাইকেল নাইটস বলেন, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে আইএসবিরোধী লড়াইয়ের গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।
এদিকে গতকাল সোমবার তেহরানে সোলাইমানির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দেশটির শীর্ষ এ জেনারেলের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তেহরানে লাখো মানুষের ঢল নামে। সোলাইমানির মরদেহের প্রতি সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সকালে জেনারেল সোলাইমানির মরদেহ ইনকিলাব চত্বরে পৌঁছানোর পর তেহরান যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সেখান থেকে তার মরদেহ তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হলে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি জানাজা নামাজের নেতৃত্ব দেন। সে সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। জেনারেল সোলাইমানির সঙ্গে বিপ্লবী গার্ডের আরো পাঁচ সদস্যেরও জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজায় অংশ নেন সোলাইমানির মেয়ে জয়নাব সোলাইমানি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলেন, ভাববেন না আমার বাবার মৃত্যুতে সব শেষ হয়ে গেছে। আপনি ইরানি ও ইরাকি জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু এ মৃত্যুর ঘটনায় দুই জাতির মধ্যে বন্ধন আরো শক্তিশালী হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের জন্য কালো অধ্যায় আসছে।
তার কথার প্রমাণ ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছে বিশ্ববাসী। গত রোববার রাতে ইরাকের পার্লামেন্টে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের সে দেশ থেকে বের করে দিতে একটি প্রস্তাব পাস হয়। এতে বলা হয়েছে, সরকারকে যেকোনো বিদেশি সেনার ইরাকে অবস্থানের ইতি অবশ্যই টানতে হবে। বিদেশি সেনাদের কোনো কারণেই ইরাকের মাটি, আকাশ ও নৌপথ ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। আইএসবিরোধী যুদ্ধে সহায়তার জন্য ইরাকি সরকার বহুজাতিক বাহিনীর প্রতি যে অনুরোধ জানিয়েছে, তা ফেরত নিতে হবে। এছাড়া ইরাকের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে নালিশ জানাতেও সরকারকে বলেছেন পার্লামেন্ট সদস্যরা।
ইরাক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য বহিষ্কার ইরানের জন্য বড় বিজয় বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শেরমান। বলেন, ইরাকি পার্লামেন্টে মার্কিন সৈন্য বহিষ্কার করতে ভোট হয়েছে। এটা ইরানের জন্য একটি বড় বিজয়। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের কারণে এটা আমাদের স্বার্থের একটি বড় বিপর্যয়। জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যার পর ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনার মধ্যে এক টুইটবার্তায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
এর আগে রোববার ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে জয়নাব জানান, তার বাবার মৃত্যু তাদের নিরাশ করবে না এবং শেষ পর্যন্ত তারা প্রতিশোধ নিয়ে ছাড়বেন। এ সময় তিনি লেবাননের শিয়া সশস্ত্র দল হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে সালাম জানিয়ে বলেন, আমি নিশ্চিত তিনি আমার বাবার হত্যার প্রতিশোধ নেবেন। তার এ কথাই যেন প্রতিধ্বনিত হলো নাসরুল্লাহর কথায়। রোববার তিনি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইরানি সেনানায়ক কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার দাম চোকাতে হবে মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন মার্কিন সেনাদের। কফিনে করে তাদের এ অঞ্চল থেকে ফিরে যেতে হবে।
সোলাইমানির হত্যার বদলা নেওয়ার দায় কেবল ইরানের নয়, তাদের মিত্রদের ওপরেও বর্তায়। আমাদের দেশগুলোতে মোতায়েন মার্কিন সামরিক ঘাঁটি, নৌ-জাহাজ এবং প্রত্যেক মার্কিন কর্মকর্তা ও সেনার কাছ থেকে সোলাইমানি হত্যার ন্যায্য বদলা নেওয়া হবে। যখন কফিনে করে মার্কিন সেনা ও কর্মকর্তাদের লাশ যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাবে, তখন ট্রাম্প ও তার শাসন অনুধাবন করতে পারবেন যে, সত্যিই মধ্যপ্রাচ্য বেহাত হয়ে গেছে, আর (২০২০ সালের) নির্বাচনেও তাদের ভরাডুবি হবে।
১৯৮২ সালে ইরানের বিপ্লবী গার্ড প্রতিরক্ষা বাহিনী লেবাননে শিয়াপন্থি হিজবুল্লাহকে সংগঠিত করে। তারপর থেকেই এ গোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছে। ১৯৮৩ সালে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে লেবাননের বৈরুতে যুক্তরাষ্ট্রের সামুদ্রিক সদর দপ্তর ধ্বংস করে হিজবুল্লাহ। ওই হামলায় ২৪১ কর্মকর্তা নিহত হন। একই বছর দূতাবাসেও আত্মঘাতী হামলা চালায় তারা। পরে ওই বছরই লেবানন থেকে সেনা সরিয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্র।
সেসব হামলার প্রসঙ্গ টেনে নাসরুল্লাহ বলেন, পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সম্ভাব্য আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীর সংখ্যা এখন বেশি। সোলাইমানি ও অন্যদের হত্যার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। এ অঞ্চলে মোতায়েন মার্কিন সেনাদের ওপর আমাদের হামলা তাদের পূর্বের মতোই বিভীষিকা পৌঁছে দেবে। অপদস্থ আর পরাজিত হয়ে সরে যেতে বাধ্য হবে তারা। আমাদের অবশ্যই বদলা নিতে হবে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকদের ওপর কোনোভাবেই হামলা চালানো যাবে না বলেও সতর্ক করেন নাসরুল্লাহ। বলেন, সেনারা সোলাইমানি ও অন্যদের হত্যা করেছে। ফলে এর দাম শোধ করবে কেবল তারাই। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে কোনো সাধারণ মার্কিন নাগরিককে স্পর্শও করা যাবে না। তাহলে তা ডোনাল্ড ট্রাম্পেরই এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হবে।
ইরানের নিরাপত্তাবিষয়ক সর্বোচ্চ কর্মকর্তা আলী শামখানি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র অচিরেই এ কথা উপলব্ধি করবে যে, সোলাইমানি তার জীবিত অবস্থার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। রোববার তার দপ্তরে সিরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আলী মামলুকের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। বলেন, ইরান অবশ্যই এ অপরাধযজ্ঞের জবাব সামরিক উপায়ে দেবে; তবে শুধু সামরিক পদক্ষেপে জবাব সীমাবদ্ধ থাকবে না। ইরাকি পার্লামেন্টে মার্কিন সেনা বহিষ্কারের বিল পাসের প্রতি ইঙ্গিত করেন। ইরানের নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান আলী শামখানি বলেন, বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার পর সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা আর থাকতে পারবে না। যদি থাকে তবে তারা দখলদার হিসেবে চিহ্নিত হবে। কারণ, এতদিন ইরাক সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটিতে মার্কিন সেনা মোতায়েন ছিল।
সোলাইমানি হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে হোয়াইট হাউসে হামলার হুমকি দিয়েছেন এক ইরানি এমপি। আবুল ফজল আবুতোরাবি নামের ওই এমপি রোববার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতেই জেনারেল কাসেম সোলাইমানির হত্যার প্রতিশোধ নিতে পারে ইরান। আমাদের সে ক্ষমতা আছে এবং আল্লাহ চাইলে আমরা সময়মতো এর জবাব দেব। তিনি আরো বলেন, এটা যুদ্ধের ঘোষণা। যদি আপনি দ্বিধান্বিত হন তবে আপনি হেরে যাবেন। যখন কেউ যুদ্ধের ঘোষণা দেবে তখন কি আপনি বুলেটের জবাব ফুল দিয়ে দেবেন? তারা আপনার মাথায় গুলি করবে। এছাড়া ট্রাম্পের মাথার বিনিময়ে বড় অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে যে, সোলাইমানির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদ মিছিল করছে। ওই ভিডিওতে একটি পুরুষ কণ্ঠে ট্রাম্পের মাথার বিনিময়ে ৮০ মিলিয়ন ডলার বা ৮ কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে।
অন্যদিকে ২০১৫ সালে করা ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ইরান। এক বিবৃতিতে ইরান জানিয়েছে, তারা আর তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ, মজুত, গবেষণা বা উন্নয়ন সীমিত রাখার শর্ত মেনে চলবে না। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের পশ্চিমা মিত্রদের টানাপড়েন দীর্ঘদিনের। তাদের অভিযোগ ছিল ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। যদিও তেহরান বরাবরই এ কথা অস্বীকার করেছে। এ নিয়ে উত্তেজনার এক পর্যায়ে ২০১৫ সালে বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকার সময় যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করে ইরান। চুক্তির শর্ত ছিল, ইরান তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি সীমিত রাখবে এবং যেকোনো স্থাপনায় যেকোনো সময় আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রতিনিধিরা পরিদর্শন করতে পারবেন।
ওই চুক্তির পর ইরানের ওপর থেকে দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ওই চুক্তিকে ত্রুটিপূর্ণ ও একপেশে আখ্যায়িত করেন এবং যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালের মে মাসে চুক্তি থেকে সরে যায়। ইরানের ওপর তখন নতুন করে অবরোধ আরোপ করা হয়। বিবিসির সাংবাদিক জোনাথন মার্কাসের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পরে ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি লাইফ সাপোর্টে চলে গিয়েছিল। ইরানের ঘোষণায় এখন তার মৃত্যু ঘটল।
ট্রাম্প যা চেয়েছিলেন, পারমাণবিক চুক্তির ঠিক সেই পরিণতিটাই এখন বিশ্ববাসী দেখতে পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর ইরান তা ঠিকঠাক মানছে না বলে অভিযোগ ছিল, তা নিয়ে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্য পরাশক্তিগুলোরও অসন্তোষ ছিল। ট্রাম্প ইরানের কুদস ফোর্সের প্রধানকে হত্যার যে পথে হাঁটলেন, তাতে বাকি মিত্ররাও হতবাক। তার ওই পদক্ষেপ ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রকে আবারো যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পরও স্বাক্ষরকারী বাকি দেশগুলো ইরানের সঙ্গে সমঝোতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল। এখন ইরান চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেওয়ায় হতাশ বাকি দেশগুলোর নেতারা। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এক যৌথ বিবৃতিতে ইরানকে তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। এতে বলা হয়, উত্তেজনা প্রশমন ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আমরা সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত।
এত কিছুর পরও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টে ট্রাম্পের কোনো হুঁশ হয়নি। তিনি আগের মতোই এখনো হুমকি-ধমকি দিয়েই যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের বের করে দেওয়ার বিষয়ে ইরাকের পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাস হওয়ায় বাগদাদের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছেন তিনি। স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি যাওয়ার পথে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিমান ‘এয়ার ফোর্স ওয়ানে’ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প এ হুমকি দেন। বলেন, ইরাকে আমাদের অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি বিমান ঘাঁটি আছে। যা নির্মাণ করতে শত শত কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে। এর মূল্য পরিশোধ না করা পর্যন্ত আমরা সেখান থেকে সরছি না। ইরাক যদি অবন্ধুসুলভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীগুলোকে চলে যেতে বলে তবে তাদের ওপর এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করব, যা তারা কখনোই দেখেনি। এর কাছে ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলোও নিরীহ মনে হবে।
তবে ট্রাম্প ইরাকে থাকা কোন বিমানঘাঁটির কথা বলেছেন তা স্পষ্ট করেননি। ধারণা করা হচ্ছে, আনবার প্রদেশের আল আসাদ বিমানঘাঁটির কথা বলেছেন তিনি। এটি ইরাক ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে পরিচালনা করে। তবে ট্রাম্পের এ হুমকি সত্ত্বেও বিদেশি সেনা বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকার কথা জানিয়েছেন ইরাকি প্রধানমন্ত্রী আদিল আবদুল মাহদি। বলেন, অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক চাপের মুখে পড়লেও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের সহযোগিতা নেওয়া বন্ধ করাই ইরাকের জন্য আদর্শগত ও বাস্তবিকভাবে সবচেয়ে ভালো হবে। উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতে বহুজাতিক বাহিনীর অভিযান শুরুর পর ইরাকে ঘাঁটি গাড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যরা। ২০০৭ সালে প্রত্যাহার শুরু হয়ে ধাপে ধাপে অধিকাংশকে ফিরিয়ে আনা হলেও এখনো সেখানে পাঁচ হাজার মার্কিন সৈন্য রয়েছে।