বৃষ্টিতে কক্সবাজারের লবণ চাষীদের মাথায় হাত

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

বৃষ্টিতে কক্সবাজারের লবণ চাষীদের মাথায় হাত

  • কক্সবাজার প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ৫ মার্চ, ২০১৯

কক্সবাজারে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে থমকে গেছে জেলার ৬০ হাজার একর জমির লবণ চাষ।  দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনকারী জেলা কক্সবাজারে লবণ উৎপাদন মৌসুমে এ বৃষ্টিতে কয়েক কোটি টাকার লবণ ভেসে গিয়ে বলে জানিয়েছেন চাষীরা।

আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে আকাশে মেঘ জমতে শুরু করে।  সাড়ে ১১ টার দিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত শুরু হয়।  টানা দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, টেকনাফ ও সদর উপজেলায় পানিতে মাঠেই লবণ ভেসে যায়। বিশেষ করে পলিথিন পদ্ধতিতে উৎপাদিত সাদা লবণ পানির সঙ্গে মিশে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান কৃষকরা।

চলতি বছর লবণ মৌসুম শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত প্রতি কানিতে ৮০ থেকে ১০০ মন লবণ উৎপাদন করতে পেরেছে। মাঠে আবার লবণ উৎপাদনে কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। তবে বৃষ্টির ফলে আপাতত উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এতে দেশের বৃহত্তম লবণ শিল্প এলাকা সদরের ইসলামপুরে লবণ কারখানা মালিক ও শ্রমিকদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক দিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে প্রায় ২ লাখ টনের বেশি লবণ। ফলে অর্ধশত কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি এক সপ্তাহ লবণ উৎপাদন বন্ধ থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন লবণ চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

লবণ চাষি কমিটির নেতা ও বিসিক কর্মকর্তারা বলছেন, সাময়িক এ ক্ষয়ক্ষতি লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় প্রভাব ফেলবে না।

সুত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলার হাজার হাজার লবণ শ্রমিক,চাষী ও ব্যবসায়ীরা আবহাওয়া অনূকূল থাকার স্বপ্ন নিয়ে আশাতীত ফলনের আশায় লবণ চাষাবাদ শুরু করে। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারী মাসের শেষের দিকে বৃষ্টিতে লবণ চাষাবাদ প্রায় ৪/৫দিন পিছিয়ে যায়। ফের মঙ্গলবার সকাল হতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও দূর্যোগ আবহাওয়া বিরাজমান থাকায় লবণ চাষাবাদ ব্যাহত হয়।

কক্সবাজার বিসিক লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক বলেন, এ বছর দেশে লবণের চাহিদা রয়েছে প্রায় ১৬ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিক টন।

আর ৪ মার্চ পর্যন্ত মৌসুমের ৩ মাসে জেলার প্রায় ৬০ হাজার একর জমিতে ৮লাখ ৫ হাজার ২০০ টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টিতে এসব মাঠে লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।আর বৃষ্টি বন্ধ হলে মাঠকে উৎপাদন উপযোগী করতে আরো ৭ দিন সময় লাগবে। এতে উৎপাদনে লবণ কম হবে। ফলে জেলার প্রায় ৬০ হাজার প্রান্তিক লবণ চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তিনি জানান, সামনে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ সাময়িক ক্ষতিতে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায়  ব্যাঘাত ঘটবে না।

সদরের লবণ চাষি সাইফুদ্দীন জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাসে দু’দফা বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরও মৌসুম শুরুর আগে চাষ শুরু হওয়ায় দেশে লবণের কোনো ঘাটতি হবেনা। আর চলতি বছর লবণ মৌসুম শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত প্রতি কানিতে ৮০ থেকে ১শ’ মণ লবণ উৎপাদন করতে পেরেছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে কাল সকাল থেকে কৃষকেরা আবারও মাঠে নামবে। তবে মাঠে আবার লবণ উৎপাদনে কদিন সময় লাগবে।

সদরের ইসলামপুর লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি শামসুল ইসলাম জানিয়েছেন, থেমে থেমে বৃষ্টির পর আবারও বৃষ্টি হলে মাঠ পর্যায়ে লবণ উৎপাদন বিলম্বিত হবে। এতে করে দেশের বৃহত্তম লবণ শিল্প এলাকা সদরের ইসলামপুরের উৎপাদনশীল কারখানাগুলো কাঁচামাল সংকটে পড়তে পারে।

তিনি জানান, বর্তমানে দেশব্যাপী পরিশোধিত লবণের প্রচুর চাহিদা রয়েছে এবং দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় কাঁচামালের সংকট হলে চাহিদা পূরণ করতে অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads