ধর্ম

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ

  • প্রকাশিত ৮ মার্চ, ২০২১

রাশেদ নাইব

 

 

অতি সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান বলে ‘প্রলোভন’ ও ‘ধর্ষণ’ শব্দ দুটি বিপরীতমুখী। ধর্ষণ হচ্ছে জোরপূর্বক কারো সাথে যৌনাচার করা। অন্যদিকে ‘প্রলোভন’ শব্দটাতেই একটা আপসের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কারো সাথে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য কেউ কাউকে কখনো প্রলোভন দেখায় না। প্রলুব্ধ করার উদ্দেশ্যই মূলত অপর পক্ষকে আগ্রহী করার ইচ্ছা। আর প্রলোভনে পড়ে কেউ যখন আপসে যৌন সম্পর্কে সম্মতি দেয় তখন আর জোর প্রয়োগের কোনো প্রশ্ন আসে না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অপরাধী নিজেও জানবে যে এই ক্ষেত্রে বিয়ের বিষয়টি পুরোপুরি সুনিশ্চিত নয়। এখানে একটা অনিশ্চয়তা থেকেই যায়। কেউ নিশ্চয়ই মুখের কথায় অন্য কাউকে জমি-জমার দখল দিয়ে দেন না। নগদ অর্থ বুঝে নিয়ে তবেই সম্পদ হস্তান্তর করে থাকেন। সুতরাং বিয়ের পূর্বে যদি কেউ যৌন সম্পর্কে সম্মতি দেন তবে তিনি হয় ঝুঁকি নিয়েই তা করেন অথবা ধর্মীয় ও সামাজিক আনুষ্ঠানিকতায় তিনি শ্রদ্ধাশীল নন। তবে যে কোনো রকম প্রতিশ্রুতিতে কাউকে দিয়ে তা ভঙ্গ করাটা নিশ্চিতভাবেই ভীষণ অন্যায় ও প্রতারণা। আর যে কোনো প্রতারণাই একটা অপরাধ। সেক্ষেত্রে তাকে ধর্ষণের অভিযোগ না দিয়ে প্রতারণার অভিযোগ দেওয়া যেতে পারে। আর এটাই অধিক যৌক্তিক বলে আমি মনে করি। তাছাড়া প্রতারণা বা প্রলোভন শব্দটিও যথেষ্ট প্রমাণসাপেক্ষ।

বিয়ের প্রতিশ্রুতি ছাড়া আমাদের সমাজের কোনো মেয়েই যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে না, তা নয়! এখানে পারিবারিক শিক্ষা এবং পর্দার ব্যাপারটা নিশ্চিত না হওয়ার কারণেও কিছু ক্ষেত্রে এমনটা হতে পারে। অথবা সঠিক সময়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হওয়ার কারণেও এমনটি হতে পারে। এমন অনেক অভিযোগ পাওয়া যায়, যেখানে ভুক্তভোগীকে ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে’ ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে নারী ও শিশু দমন নির্যাতন আইনে যেহেতু বলা আছে, যদি প্রতারণামূলকভাবে সম্মতি আদায় করে যৌন সম্পর্ক করা হয়, তাহলে সেটা ধর্ষণ হিসেবে দেখা হবে। এখন বিয়ের প্রলোভন দেখানোর বিষয়টি আইনানুযায়ী প্রতারণামূলকভাবে সম্মতি আদায়ের মধ্যে পড়লেও অনেক সময় সেটা দুর্বল হয়ে পড়ে। এটা নির্ভর করে কতদিন ধরে বিয়ের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে? সম্পর্কের গভীরতা কেমন ছিল? লিখিতভাবে বিবাহিত না থাকলেও ধর্মীয় রীতিতে বিয়ে করেছিলেন কিনা? কোনো সাক্ষী আছেন কিনা সেগুলোর ওপরেও নির্ভর করে। কিন্তু একই রকম অভিযোগ কোনো পুরুষ আনতে পারবেন না। বাংলাদেশের আইনে সেই সুযোগ নেই।

ইসলামী আইনশাস্ত্র মোতাবেক ধর্ষকের শাস্তি ব্যভিচারকারীর শাস্তির অনুরূপ। তবে অনেক ইসলামী স্কলার ধর্ষণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কিছু শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন। শিরক ও হত্যার পর ব্যভিচার সুস্পষ্ট হারাম বড় ধরনের অপরাধ। কোরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ (সুরা আল ইসরা, আয়াত-৩২) প্রখ্যাত তাফসির বিশারদ ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, ‘উলামায়ে কেরাম বলেছেন, ‘ব্যভিচার করো না’-এর চেয়ে ‘ব্যভিচারের ধারে কাছেও যেয়ো না’ এটি অনেক বেশি কঠোর বাক্য। এর সহজ অর্থ হলো, যেসব বিষয় ব্যভিচারে উদ্বুদ্ধ করে ও ভূমিকা রাখে সেগুলোও হারাম।

ধর্ষণের শাস্তির ব্যাপারে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। শাস্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বিষয়টির স্পর্শকাতরতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এক হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে এক মহিলাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হলে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে কোনোরূপ শাস্তি দেননি, তবে ধর্ষককে হদের শাস্তি দেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-২৫৯৮) [যেসব শাস্তির পরিমাণ ও পদ্ধতি কোরআন হাদিসে সুনির্ধারিত রয়েছে সেগুলোকে হদ বলে।] অন্য হাদিসে আছে, গণিমতের পঞ্চমাংশে পাওয়া এক দাসির সঙ্গে সরকারি মালিকানাধীন এক গোলাম জবরদস্তিপূর্বক ব্যভিচার (ধর্ষণ) করে। এতে তার কুমারিত্ব নষ্ট হয়ে যায়। হজরত উমর (রা.) ওই গোলামকে বেত্রাঘাত করেন এবং নির্বাসন দেন। কিন্তু দাসিটিকে (অপকর্মে) বাধ্য করেছিল বলে তাকে বেত্রাঘাত করেননি।’ (বুখারি, হাদিস নং- ৬৯৪৯)

যুগ ধীরে ধীরে পাল্টাচ্ছে। পাশ্চাত্য দেশের মতো আমাদের দেশেও ছেলেমেয়েরা এখন অপেক্ষাকৃত অবাধে মেলামেশা করছে। ইউরোপে বা আমেরিকায় বিয়ে না করেও ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে থাকছে। বিয়ের আগেই তাদের অল্প-বিস্তর যৌন-অভিজ্ঞতাও হচ্ছে। আমাদের দেশেও হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে আমাদের দেশ অনেক বেশি রক্ষণশীল। আমাদের দেশে বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত মেয়েদের কুমারিত্ব বজায় রাখাটা অতি আবশ্যিক। এর সঙ্গে জড়িত থাকে পারিবারিক সন্মান ও সুনাম। নারীর এই কুমারিত্বের মূল্য শুধু আমাদের সমাজে সীমাবদ্ধ নয়। বেশিরভাগ সমাজেই পুরুষরা বিয়ে করতে চায় এমন একটি নারীকে যে আগে অন্য কাউকে দেহদান করে নি। নারীদের ক্ষেত্রে কাউকে ভালোবাসলেও বিয়ের আগে যৌন-সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে সংযম বা সতর্কতার পেছনে এই সামাজিক কারণ অবশ্যই কাজ করছে। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পূর্বে ছেলে মেয়েদের কোনোরূপ সম্পর্কে জড়ানো যাবে না। ইসলাম এটাকে পুরোপুরি হারাম করে দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের কারো মাথায় লোহার পেরেক ঠুকে দেওয়া ওই নারীকে স্পর্শ করা থেকে অনেক ভালো, যে নারী তার জন্য হালাল নয়।’ (তাবারানী) ইসলামে বিবাহবিহির্ভূত প্রেম, যৌন সম্পর্ক, আসক্তিমূলক আচরণ, সামাজিকতার নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ফাহেশা কথা-বার্তা বা চ্যাটিং সবই হারাম তথা নিষেধ।

 

লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads