প্রতিষ্ঠার দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও অদ্যবদি মেলেনি কোন সরকারি ভবন। পুরানো ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে গাদাগাদি করে শ্রেণি শিক্ষার কার্যক্রম চললেও কক্ষ সংকটর বর্তমানে ভয়বহ আকার ধারণ করেছে। ৫শতাধিক শিক্ষার্থীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে । ফলে বাধ্য হয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ নিজেদের অর্থায়ন ও স্থানীয় লোকজনদের সহযোগিতা নিয়ে পুরানো টিনশেড ভবন পুন: নির্মাণ তৈরিতে হাত দিলেও অর্থাভাবে চলছে ঢিমেতালে। ফলে বাধ্য হয়েই মাঠেই চলছে শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ২নং বালিথুবা পুর্ব ইউনিয়নের বালিথুবা শামছুলিয়া অদুদিয়া দাখিল মাদ্রাসার চিত্র এটি।
মাদ্রাসা সুপার মাহবুবুর রহমান জানান, ১৯৯৪ সালে মাদ্রাসাটি স্থাপনের পর ২০০১ সালে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমানের সহযোগিতায় এমপিও ভুক্ত হয় শামছুলিয়া অদুদিয়া দাখিল মাদ্রাসা। এবতেদায়ী থেকে দাখিল পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫শতাধিক। দৃশ্যমান মাদ্রাসা ভবনের ৬টি কক্ষের মধ্যে ২০১০ সালেই ৪টি কক্ষ জরাজীর্ণতার কারণে পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়েছে। তারপরও ঝুঁকি নেয়ই কক্ষেই চলছে শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তৈরি অপর পাশে টিনশেডের ৩টি কক্ষে এতদিন কোন রকমে শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম চললেও স্থানীয় লোকজন ও মাদ্রাসার অর্থায়নে তা পুন:নির্মাণ কাজ চলায় বেকাদায় পড়েছি শ্রেণি শিক্ষা চালানো নিয়ে। অর্থাভাবে নির্মাণ কাজ চলছে ঢিমেতালে । ফলে বাধ্য হয়েই মাদ্রাসার মাঠেই উন্মুক্ত স্থানে নিয়মিত শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মাঠের এক পাশে এবতেদায়ীর তৃতীয় শ্রেণির , অপর দুই পাশে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির কার্যক্রম চলছে। আরেক পাশে অর্থাৎ মাদ্রসার সামনে দিয়ে সড়ক থাকায় সেখান দিয়ে চলছে যান বাহন। সকালে শীতের তীব্রতা এবং দুপুরে রোদ্রের উত্তাপের মধ্যে দিয়েই এবং সাথে যুক্ত হয়েছে গাড়ী শব্দ ও উড়ন্ত ধুলিকণা, এর মধ্যেই চলছে শ্রেণি শিক্ষা।
মাঠে ৬ষ্ঠ শ্রেণির আরবী বিষয়ের ক্লাস নেয়া শিক্ষক মাও. হারুনুর রশিদ জানান, খোলা আকাশের নিচে সকালে ঠান্ডা ও দুপুরে প্রচন্ড গরম থাকে। এতে করে শিশু শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। খোলা স্থানে একই সাথে তিন শ্রেণির পাঠদান চলমান থাকায় তারা মনযোগ দিয়ে পাঠগ্রহণ করতে পারে না। তাছাড়াও মাঠ সংলগ্ন যানবাহনের শব্দ ও ধূলাবালিতে পড়ালেখার পরিবেশ নেই বললেই চলে।
গত তিন বছরের জেডিসি ও দাখিল পরীক্ষায় মাদ্রাসার ফলাফল আশাব্যঞ্জক। জেডিসিতে এপ্লাস ছাড়াও পরীক্ষায় দাখিল পরীক্ষায় শতভাগ পাশের রেকর্ড রয়েছে। ফলে মাদ্রাসাটিকে নিয়মিত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু, মাদ্রাসার শ্রেণিকক্ষ সহ বিভিন্ন সংকটের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে জানিয়ে মাদ্রাসা সুপার জানান, একটি ভবনের জন্যে উর্ধ্বতনদের কাছে ধর্না দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। এবার যদি হয় এইআশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছি।
মাদ্রাসার ম্যানেজিং সভাপতি আব্দুল আজিজ জানান, গত ১০ বছরে ফরিদগঞ্জের অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন ও ডিজিটাল ল্যাবসহ ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হলেও আমাদের এই প্রতিষ্ঠানের দিকে কেউ ফিরেও তাকায়নি। প্রতিহিংসা কিনা বুঝতে পারছি না। তবে আমি বর্তমান এমপি মহোদয়ের নিজ ইউনিয়নে মাদ্রাসা হওয়ায় এবং তার আন্তরিকতা থাকায় নতুন একটি ভবনের প্রত্যাশা করছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও সাংবাদিক জসিম উদ্দিন মিজি জানান, একটি ভাল ও মানসম্পন্ন মাদ্রাসাকে টিকিয়ে রাখা জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব। আমরা চেষ্টা করছি। আশা করছি সাংবাদিক শফিকুর রহমান এমপির সুদৃষ্টি পড়লে রক্ষা পাবে মাদ্রাসাটি।
মাদ্রাসার বিষয়টি ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আলী আফরোজের দৃষ্টি আর্কষন করলে তিনি জানান, মাননীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটার নিয়ে আবেদন করলে অবশ্যই এই প্রতিষ্ঠানে একটি নতুন ভবন হবে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করে তাহলে আমি জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাহেদ সরকার জানান, মাদ্রাসার এই জীর্ণ দশার কথা কেউ আমাদের জানায়নি। তবে এখন যখন জেনেছি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করবো ।





