পেয়ারা বাগানে নিষিদ্ধ পলিথিন ফ্রুটব্যাগ

পেয়ারা বাগানে নিষিদ্ধ পলিথিন ফ্রুটব্যাগের ব্যবহার

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

কৃষি অর্থনীতি

বরেন্দ্র অঞ্চলে পেয়ারার চাষ

পেয়ারা বাগানে নিষিদ্ধ পলিথিন ফ্রুটব্যাগ

  • গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৬ জানুয়ারি, ২০২০

বরেন্দ্র অঞ্চলের পেয়ারা বাগানে ফ্রুটব্যাগ হিসেবে চাষীরা ব্যাবহার করছেন নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ। এ অঞ্চলের ৫ হাজার ৭৭১ হেক্টর জমিতে পেয়ারার থোকায় থোকায় ঝুলে রয়েছে ৫৭৭ কোটির উপরে পলিথিন ব্যাগ। চাষীরা পেয়ারা সুরক্ষায় হেক্টর প্রতি এক লাখ পলিথিন ফ্রুটব্যাগ ব্যাবহার করছেন। নিষিদ্ধ পলিথিন পেয়ারা বাগানে ফ্রুটব্যাগ হিসাবে ব্যবহার হলেও প্রসাশনের নেই কোন নজরদারী। প্রসাশন দেখেও যেন নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছে। এসব ব্যাগ পুরোপুরি ব্যাবহার নিষিদ্ধ। বাগান থেকে এ পলিথিনের বেশিরভাগ চলে যাচ্ছে বাজারে। সেখান থেকে আবর্জনার সঙ্গে মিশে পরিবেশ নষ্ট করছে। কিছু অংশ জমিতেই পড়ছে।

আঞ্চলিক কৃষি দপ্তরের হিসেবে, ২০১৮-২০১৯ মৌসুমে এ অঞ্চলের প্রায় ৫ হাজার ৭৭১ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে পেয়ারার। ১৯ দশমিক ৯৩ টন হারে পেয়ারা উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৬২৩ টন।

প্রতি হেক্টরে এক লাখ হারে এ মৌসুমেই পেয়ারার পলিথিনের ফ্রুটব্যাগ ব্যাবহার হয়েছে ৫৭৭ কোটির উপরে। এ বছর রাজশাহী জেলায় ৪ হাজার ২০ হেক্টর পেয়ারায় চাষ হয়েছে। তাতে ব্যবহার হয়েছে ৪০২ কোটি পলিথিন ফ্রুটব্যাগ। এছাড়া নওগাঁয় ২৯০ হেক্টরে ২৯ কোটি, নাটোরে ৩৮৫ হেক্টরে সাড়ে ৩৮ কোটি এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক হাজার ৭৬ হেক্টরে ১০৭ কোটি পলিথিন ফ্রুটব্যাগ ব্যবহার হয়েছে।

পেয়ারা বাগানে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহারকারী কৃষকরা বলছেন, পোকা মাকড় ও কীটনাশক থেকে সুরক্ষা এবং পেরারার রং ঠিক রাখতে তারা পলিথিন ফ্রুটব্যাগ ব্যবহার করেন।

কুড়ি থেকে পেয়ারার গুটি আসার সাথে সাথে পেয়ারায় ফ্রুটব্যাগ পরানো হয়। এর প্রায় তিন মাস পর পেয়ারা বাজারে ওঠে। হাতের নাগালেই সস্তায় এ পলিথিন ব্যাগ পাওয়া যাওয়ায় ফ্রুটব্যাগ হিসাবে ব্যবহার করছে পেয়ারা চাষীরা। তবে বেশীর ভাগ বাণিজ্যিক পেয়ারা চাষিরা জমি লিজ নিয়ে পেয়ারা চাষ করেন। মেয়াদ শেষে জমি ছেড়ে চলে যায় বাণিজ্যিক পেয়ারা চাষীরা। পরে কৃষক নিজের জমি চাষে গিয়ে কেবল পলিথিন ব্যাগ পান। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় কৃষকদের।

অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে কয়েকজন জমির মালিক জানান, পাঁচ থেকে সাত বছর মেয়াদে পেয়ারার বাগান করেন বাণিজ্যিক চাষিরা। বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহকালে তারা কিছু পলিথিন ফেলে যান। চুক্তির মেয়াদ শেষে চাষে নেমে সেই পলিথিন উঠে আসে। বছরের পর বছর ধরেই উঠতে থাকে এমন পলিথিন। এতে ফসল উৎপাদন ব্যহত হয়।

বিষয়টি স্বীকার করেছেন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারারা। তারা জানিয়েছেন, মৌসুমে প্রতি হেক্টরে প্রায় এক লাখ পলিথিন ফ্রুটব্যাগ ব্যবহার করেন চাষি।

ফ্রুটফ্লাইসহ বিভিন্ন ছত্রাক আক্রমণ ঠেকাতে চাষিরা ফ্রুটব্যাগ ব্যাবহার করছেন। এতে কমছে রাসায়নিকের ব্যবহার। পেয়ারার রঙ আকর্ষনীয় থাকায় ভালো দাম পাচ্ছেন চাষী।

তারা আরও বলেন, মাঠ থেকে পেয়ারার সঙ্গে অধিকাংশ পলিথিনই চলে যায় বাজারে। তবে কিছু অংশ বাগানে পড়েই থাকে। কেউ কেউ এগুলো সংগ্রহ করলেও অধিকাংশ চাষীই তা ফেলে রাখেন।

এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আঞ্চলিক অতিরিক্ত পরিচালক দেব দুলাল ঢালী বলেন, প্রায় পাঁচ-সাত বছর ধরে পেয়ারায় পলিথিন ফ্রুটব্যাগ ব্যাবহার করছেন চাষি। এতে ভালো ফল পাচ্ছেন তারা। এ ব্যাগ ব্যবহারে কমে গেছে রাসায়নিকের ব্যবহার। তিনি দাবি করেন, পলিথিন এ ব্যাগে পরিবেশের যে ক্ষতি তা রাসায়নিকের ক্ষতির চেয়ে অনেক কম।

তবে পলিথিনের বিকল্প ফ্রুটব্যাগের বিষয়টি নিয়ে তারা ভাবছেন বলে জানিয়েছেন রাজশাহীর ফল গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিন। তিনি বলেন, পলিথিনের বিকল্প বাজারে যে ফ্রুটব্যাগ রয়েছে তাতে পেয়ারার রঙ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। নষ্ট হতে পারে গুণগত মানও। দামে সস্তা এবং ফল নষ্টের আশঙ্কা কেটে গেলে বিকল্প ফ্রুটব্যাগে আগ্রহী হবেন চাষী।

জানতে চাইলে রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, পলিথিন ব্যাবহার ও বিক্রি আইনত নিষিদ্ধ। কেবল উৎপাদন বাড়াতে কৃষিতে পলিথিনের ব্যবহারে বেড়েছে। এর পরিবেশগত প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। কৃষি দপ্তরের উচিত এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেয়া।।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads