‘ধর্ষণ’ এমন ভয়ঙ্কর খবরে নাগরিক জীবনে অস্বস্তির মাত্রার সীমা ছাড়িয়েছে। সিরিয়াল কিলিংয়ের মতো সিরিয়াল রেপ চলছে আজ। শিশু, অষ্টাদশী কিংবা পঞ্চাশোর্ধ্ব— ‘ধর্ষণ’ নামক ব্যাধি থেকে আজ কোনো নারীই যেন নিরাপদ নয়। দিন দিন অপ্রতিরোধ্য হচ্ছে এই জঘন্যতম কর্মটি। যখন নিজের কাছে নিজেই এই প্রশ্নগুলো করি, তখন লজ্জায় গুটিসুটি হয়ে যাই। সামাজিক, পারিবারিক ও রক্তের সম্পর্কগুলোও কেমন ঘেঁটে যাচ্ছে। বিকৃত যৌনতার লোভে বাদ যাচ্ছে না কাকা-ভাইঝির সম্পর্কও। মুক্তিযুদ্ধের ঊনচল্লিশ বছরে স্বাধীন বাংলার সবুজ ঘাসের মানচিত্রে রক্তে লাল রক্তাক্ত ধর্ষিতাদের নিথর দেহ মনে করিয়ে দেয় মুক্তিযুদ্ধকালীন ধর্ষিতা বাংলার কথা, ভূলুণ্ঠিত জাতীয় পতাকার ঐতিহ্য! অসংখ্য ধর্ষণ ঘটনা দেখিয়ে দেয় নারীরা আজ সমাজে কতটা নিরাপত্তাহীন, পুলিশ প্রশাসন কতটা নিষ্ক্রিয়।
বেড়েই চলেছে শিশু ও নারী নির্যাতন। সংবাদপত্রে চোখ রাখলে মনে হয় যেন ঘটনার স্রোত চলছে। প্রতিটি ঘটনা আগেরটির থেকে আরো নৃশংস। শুধু ভয়াবহ ধর্ষণ নির্যাতনই নয়, কোথাও ছিন্নভিন্ন উলঙ্গ নারীদেহ, কোথাও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নির্যাতিতাকে খুন করে প্রমাণ লোপাটে মত্ত লম্পটের দল। এই নরপশুরা সমাজেরই ফসল। এদের দুষ্কর্মের মোকাবেলায় আইন-কানুনের প্রয়োগ চাই, চাই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। তেমনি চাই বিকৃত রুচির মানুষ সমাজে তৈরি হওয়া বন্ধ করা। এই সমাজের ঘরে ঘরে যে ছেলেরা বেড়ে উঠছে, তারা যাতে নৈতিক বোধসম্পন্ন মানুষ হয়, নোংরা সংস্কৃতির শিকার না হয়, তেমন পরিবেশ তৈরি করা জরুরি হয়ে উঠেছে বর্তমান এই পরিস্থিতিতে।
নারী ও শিশু ধর্ষণের একের পর এক নৃশংস ঘটনায় শিউরে উঠেছে বর্তমান সমাজ-সংসার, বাড়িয়ে দিয়েছে আরো উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। এর প্রতিকার চাইছেন দেশের সর্বস্তরের মানুষ। এতে করে আমাদের একটা প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে যে, এই একই মাত্রার অপরাধের কি কোনো নিবৃত্তি নেই? বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির দিকটি অনন্য উদাহরণ। সেই দেশে নারীর প্রতি এমন আচরণ কাম্য হতে পারে না। নিত্য একটার পর একটা ধর্ষণের সংবাদ আমাদের চোখ ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে, জাতি হিসেবে আমাদের অপরাধী করে তুলছে। সমাজে এ ধরনের পৈশাচিক বর্বরতা ক্রমেই বাড়তে থাকলে একসময় তা মহামারী রূপে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই শুরুতেই এর কবর রচনা করা আমাদের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে।
সমাজকে মানুষের বসবাসযোগ্য রাখতে হলে ধর্ষণের মতো অপরাধ প্রবণতাকে রোধ করার বিকল্প নেই। অপরাধের শাস্তি না হওয়া অপরাধ বিস্তারের অন্যতম প্রধান কারণ। সময়ের সঙ্গে সভ্যতার পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন হয়নি মানুষের মানসিকতার, কমেনি নারীর প্রতি সহিংসতা বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা অনেক বেড়েছে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় ধর্ষণের ক্ষেত্রে নিত্যনতুন বাজে দৃষ্টান্ত তৈরি হচ্ছে। দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠবে, উঠছেও। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে— এই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির অভিজ্ঞতায় যেন আমাদের আর না পুড়তে হয়, সেটা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে এমনটাই প্রত্যাশা।
লেখক : নিবন্ধকার
moonzeerahcklham@gmail.com