বায়ু নিরোধক নয় এমন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা অধিকাংশ পণ্য সংরক্ষণ ও বিপণনে পাটের বস্তা ব্যবহার করেন না। ফলে দেশের পাটকলে উৎপাদিত অনেক পণ্য অবিক্রীত থাকে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পাটের বস্তাকে বায়ু নিরোধক করে বাজারজাত শুরু করেছে দেশের সবচেয়ে বড় পাটকল খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলস লিমিটেড। এ জন্য তারা স্থাপন করেছে প্রিমিয়াম লেমিনেটিং প্লান্ট। যেখানকার উৎপাদিত পাটপণ্য ব্যবহার করে বীজসহ বিভিন্ন পণ্য সংরক্ষণ করে বাজারজাত করছেন ব্যবসায়ীরা।
দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে বাংলাদেশের প্রায় সবকটি পাটকল। তাই লোকসান এড়াতে পাটপণ্যের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে বীজসহ অন্যান্য পণ্য সংরক্ষণের জন্য বিশেষ বস্তা তৈরি করছে খুলনা দ্য ক্রিসেন্ট জুট মিলস্ কোম্পানি লিমিটেড। মিলের অভ্যন্তরে গত বছরের জুলাই মাসে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হয় প্রিমিয়াম লেমিনেটিং প্লান্ট বা পিএলপি। এই মেশিনের সাহায্যে চটের বস্তার ভেতরে পরিবেশসম্মত প্লাস্টিকের প্রলেপ দিয়ে বায়ু নিরোধোক করা হচ্ছে। ফলে এ জাতীয় চটের বস্তা ব্যবহার করে বীজ, চিনি, লবন, আটা, ময়দার সংরক্ষণ করে বাজারজাত করতে পারছেন ব্যবসায়ীরা। এর ফলে পণ্যের গুণগত মান বজায় থাকার পাশাপাশি পাটের বস্তার ব্যবহারও বাড়ছে।
মিলের সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) শাহাবুদ্দিন কাজী বলেন, এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে বস্তা তৈরি হচ্ছে সেই বস্তা কয়েকবার ব্যবহারের পর প্লাস্টিকের প্রলেপ হয়তো নষ্ট হয়ে যাবে। তবে বস্তাটি পাটের অন্য বস্তার মতোই বার বার ব্যবহার করা যাবে। ফলে অর্থনৈতিকভাবেও সাশ্রয়ী হবে ব্যবহারকারীরা। তিনি আরো জানান, পাটের সঙ্গে কৃষকসহ কোটি কোটি মানুষ সম্পৃক্ত। তাই পাটের ব্যবহার নিশ্চিত হলে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ লাভবান হবে। পাটের সুদিন আনতে হলে পাটের নতুন নতুন পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহারের ব্যপ্তি বাড়াতে হবে বলেও তিনি মনে করেন।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের মহাব্যবস্থাপক গাজী শাহাদাত হোসেন বলেন, প্রিমিয়াম লেমিনেটিং প্লান্টে কাজ করছে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত ৫০ জন শ্রমিক। বর্তমানে তারা প্রতিদিন ১০ ও ২০ কেজি ধারণ ক্ষমতার ১০ হাজার বস্তা উৎপাদন করছে। চাহিদার নিরীখে আগামীতে বাড়ানো হবে এ উৎপাদনের পরিমাণ।
পাটজাত বহুমুখী পণ্য উৎপাদনে এ জাতীয় পরিকল্পনা এক দিকে পাটপণ্যের ব্যবহার যেমন বাড়াবে, অপরদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর লোকসান কমিয়ে সুদিন ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে। গত ছয় মাসে নতুন এ পণ্য থেকে লাভের মুখ দেখায় আগামীতে পাটের নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন করার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
জাতিসংঘের ২০০৯ সালকে ‘আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক তন্তু বর্ষ’ হিসেবে পালিত হওয়ায় এবং উন্নত দেশগুলোয় পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবেশ বিপর্যয়কারী কৃত্রিমতন্তুর জনপ্রিয়তা বা ব্যবহার ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে।
জলবায়ু আন্দোলনের অংশ হিসেবে পানি, মাটি ও বায়ু দূষণকারী পলিব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে বিশ্বের সর্বত্র জনমত তৈরি হয়েছে। তাই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনের ব্যাগ বিশ্বজুড়ে যখন উদ্বেগের কারণ, তখন পাটের এই ব্যাগ পরিবেশ দূষণ কমাতে সহায়ক হবে।
 
                                 
                                 
                                         
                                         
                                         
                                        





