নাগেশ্বরীতে উঠতি বোরো ধানের ফলন ভালো হলেও আশানুরূপ দাম না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষক। উৎপাদন খরচ উঠে না আসায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।
প্রতিবছর এসময় ফসল ঘরে তোলার আনন্দে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম হলেও কৃষকের মুখে তৃপ্তির হাসি ফোটে। বাজারে ভালো দামে ধান বিক্রি করে তারা তাৎক্ষণিভাবে ধান কাটা মাড়াইয়ের খরচ মেটায়। উঠে আসে উৎপাদন খরচ। বাড়তি ফসলে মেটে পরবর্তী ৬ মাসের খাদ্য চাহিদা। এবারে ধানের দাম আশানুরূপ না থাকায় তাদের মুখের সেই হাসি উধাও হয়ে গেছে।
উপজেলার সর্ব বৃহৎ ধান-চালের হাট নাগেশ্বরীতে সম্প্রতি সরজমিনে দেখা গেছে, প্রতিমণ ব্রিধান-২৯সহ হাইব্রিড জাতের বিভিন্ন ধান বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। কৃষকের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া ভাল ফলন হলে প্রতি বিঘায় ফলে সর্বোচ্চ ১৮-২০ মণ ধান। এতে বীজতলা তৈরি থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত খরচ হয় ১৬-১৭ হাজার টাকা। হিসেব অনুযায়ী, প্রতিমণ ধানে খরচ পড়ে গড়ে ৮৫০ টাকা। বর্তমান বাজার মূল্য হিসেবে তাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে মণপ্রতি গড়ে ৪৫০ টাকা। অপরদিকে ধানের দাম কম হলেও কমেনি চালের দাম। প্রতিমণ মোটা চাল বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ৬৮৮ টাকায়। ভোক্তাকে প্রতি কেজি চাল কিনতে হচ্ছে গড়ে সাড়ে ৪২ টাকা দরে। একদিকে ধানের দরপতন, অন্যদিকে চালের মুল্যবৃদ্ধি। কৃষক ও ভোক্তা কেউই এ হিসাব মিলাতে না পারলেও লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্তভোগী এক শ্রেণীর মানুষ।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি বোরো মোট ২১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও কৃষক লাগিয়েছেন ২১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে সব ধরনের বোরো ধান। অনুকূল আবহাওয়া ও নিয়মিত পরিচর্যায় ফলনও ভালো হয়েছে।
পৌরসভার পুর্ব সাঞ্জুয়ার ভিটা গ্রামের বাচ্চু মিয়া, চৌবাড়ী পায়রাডাঙ্গা গ্রামের অনিল চন্দ্র, পুর্ব বাঘডাঙ্গা গুন্ডিরচর এলাকার আবু বকর সিদ্দিক, আফছার আলী, শহিদুল ইসলাম, আবুল কাশেম, কালীগঞ্জ ইউনিয়নের মাধাইখাল কুটির জামাল উদ্দিন, রফিক মিয়া, সাহাজুল হক, কুমড়িয়ারপাড় গ্রামের কৃষ্ণ চন্দ্রসহ অনেক কৃষকেই বলেন ধানের উৎপাদন খরচের চেয়ে বাজার মূল্য কম হওয়ায় তাদের বিঘাপ্রতি সাড়ে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। ফলে ঋণের বৃত্তে আটকা পড়ছে তারা। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামসুজ্জামান বলেন, ইতোমধ্যে সরকারীভাবে ধান-চাল কেনা শুরু হয়েছে। আশা করছি, অল্পকিছুদিনের মধ্যে ধানের বাজার দর বৃদ্ধি পাবে। সেক্ষেত্রে এখনে ধান বিক্রি না করে কয়েকদিন পরে করলে হয়তো আশানুরূপ ধানের দাম পাবেন কৃষকরা।