নরসিংদীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে গর্ভবতী নারী শ্রমিকের মৃত্যু

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

লাশ দাফনে গ্রামবাসীর বাধা

নরসিংদীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে গর্ভবতী নারী শ্রমিকের মৃত্যু

  • নরসিংদী প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১০ এপ্রিল, ২০২০


নরসিংদীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে সুলতানা বেগম (৩৫) নামে এক নারী পোশাক শ্রমিক মারা গেছেন। মৃত সুলতানা ৬ মাসের গর্ভবতী ছিলেন। সে জ্বর ঠান্ডা কাশি ও শ্বাস কষ্টে ভূগছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলার মেঘনা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়নের পূর্ব পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

সুলতানা নারায়ণগঞ্জের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। এদিকে করোনার আক্রান্ত হয়েছে কি না, সেই ভয়ে স্বামীর বাড়ী কাজির কান্দিতে লাশ দাফন করেতে দেয়নি গ্রামবাসী। এমনকি মৃতের স্বামী আমানুল্লাকেও লাশের কাছে যেতে দেয়নি তার স্বজনরা। ফলে ৬ ঘন্টা মেঘনা নদীর নৌকার ভেতর লাশ ভেসেছে। মেয়ের লাশ পাহাড়া দিয়েছেন মৃতের বাবা ফরিদ মিয়া। বৃহস্পতিবার বিকালে নরসিংদী থেকে একটি স্বাস্থ্য দল গিয়ে মৃতের নমুনা সংগ্রহ করে। পরে পুলিশের সহায়তায় সন্ধ্যায় স্বামীর বাড়িতে দাফন করা হয়।

সিভিল সার্জন সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েকদিন যাবৎ জ্বর ঠান্ডা ও কাশি শ্বাসকষ্টেতে ভুগছিলেন সুলতানা। সর্বশেষ নারয়ণগঞ্জ জেলাকে লকডাউনের পর বন্ধ হয়ে যায় শিল্প কারখানা। এরই মধ্যে গতকাল তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরে সে গতকাল বুধবার রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে নরসিংদী নিজ বাড়ী আলোকবালীতে চলে আসেন। সকালে তার শ্বাসকষ্ট আরো বেড়ে যায়। তাই বটতলী এলাকায় ডাক্তার দেখাতে যায়। সেখানে যাওয়ার পরপরই সুলতানা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পরে তার লাশ স্বামীর বাড়ী কাজির কান্দি গ্রামে নেওয়া হয়। কিন্তু করোনা উপসর্গ থাকায় গ্রামের লোকজন তাকে স্বামীর বাড়ীতে দাফন করতে দেয়নি। পরে লাশ নিয়ে পুনরায় বাবার বাড়ী আলোকবালীতে চলে আসেন। পরে পুলিশের সহায়তায় সন্ধ্যায় স্বামীর বাড়িতে দাফন করা হয়।

আলোকবালী গ্রামের বাসিন্দা সমির বলেন, করোনার আক্রান্ত হয়েছে কিনা, সেই ভয়ে স্বামীর বাড়ী কাজির কান্দিতে প্রথমে লাশ দাফন করেতে দেয়নি । মৃতের স্বামীকেও লাশের কাছে যেতে দেয়নি তার স্বজনরা। মেয়ের লাশ নদীতে নৌকায় নিয়ে বাবা শুধু বসে ছিলো। করোনার ভয়ে কেউ তার পাশে যায় নি।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে আগত বিজয় ও দুলাল নামে দুই গার্মেন্টস শ্রমিক নিজ বাড়ী হাজিপুর এলাকায় আসলে গ্রামের মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। পরে পুলিশ খবর দেয়া হলে তারা পালিয়ে যায়।
অন্যদিকে নরসিংদীতে এখন পযর্ন্ত মোট তিন জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তারা হলো রায়পুরা উপজেলার পলাশতলী ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামের একজন ও ডৌকারচর ইউনিয়নের ডৌকারচর গ্রামে একজন এবং পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের ইসলামপাড়া এলাকার একজনসহ মোট তিন জন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকি মোকাবেলা ও সুরক্ষার প্রয়োজনে বৃহস্পতিবার থেকে নরসিংদী জেলাকে লকডাউন (অবরুদ্ধ) ঘোষণা করেছেন জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন।

নরসিংদী সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন বলেন, মৃত নারী শ্রমিকের নমুনা সংগ্রহ করে শুক্রবার সকালে আইইআরডিসিতে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসার পরে বলা যাবে মৃত ব্যাক্তি করোনা পজেটিভ না নেগেটিভ। আর জেলা হাসপাতালের মালি জুয়েল মিয়ার করোনায় আক্রান্তের ঘটনায় জেলা হাসপাতালের এক ডাক্তারসহ ৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, নরসিংদীতে এখন পর্যন্ত ৩৬৬ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে। করোনা লক্ষণ দেয়ায় ৯৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইআরডিসিতে পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত রিপোর্টে সবার করোনা নেগেটিভ আসছে। আর করোনা শনাক্ত তিনজনের মধ্যে দুইজন নরসিংদীতে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে। তাদের অবস্থা এখন উন্নতির দিকে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads