ধর্ম

নতুন বছরের শুরুটা হোক গুনাহমুক্ত

  • প্রকাশিত ১ জানুয়ারি, ২০২১

মো. হুসাইন আহমদ

 

দিন যায় রাত আসে, রাত যায় দিন আসে। সময়ের এই পরিক্রমায় কখনো শীতের বিদায়, গরমের আগমন। আবার শীতের আগমন, গরমের বিদায়। এরই ধারাবাহিকতায় এখন গত বছরের বিদায়, নতুন বছরের আগমন। যাকে ইংরেজিতে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ বলা হয়। আর এই নতুন বছরকে উদযাপন করার জন্য আমাদের দেশসহ অন্য দেশসমূহে ‘থার্টি ফার্স্ব নাইট’ এবং নববর্ষ পালন করা হয়। সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে গোলা-বারুদ, ফটকা ও আতশবাজি ফাটিয়ে আনন্দে মেতে উঠে অনেকেই। রাত ১২ টায় শহরের অলিতে গলিতে শুধু এই আওয়াজই শোনা যায়। এছাড়াও এই নতুন বছরকে সামনে নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদির আয়োজনও করা হয়। যা অনেক জমজমাটপূর্ণ হয়।

এই হলো এক বছরকে বিদায় জানিয়ে আরেক বছরকে অভিবাদন জানানোর পদ্ধতি। কিন্তু আজ থেকে কিছুকাল অতীতের দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়-ওই সময়েও বিগত বছরের বিদায় ও নতুন বছরের আগমন ঘটতো। কিন্তু বর্তমান সময়ের মতো এত বাড়াবাড়ি, হই-হুল্লোড়, গান-বাজনা ও আতশবাজির মাধ্যমে বিগত বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে অভিনন্দন জানানো হতো না। কোনো রীতিনীতি ছিল কি না তাও জানা নেই। তখন রাতের আঁধারে আল্লাহর দরবারে বিগত বছরে যে ভুল-ভ্রান্তি সংঘটিত হয়েছে তার জন্য কান্নাকাটি ও রোনাজারি করার মাধ্যমে অতিবাহিত করত। আর নতুন বছরে যেন বিগত বছরের সেই গুনাহসমূহ থেকে বিরত থাকতে পারে সেই তাওফিকের দোয়া করত অনেকেই।

 

বর্তমানে সারা বিশ্বে নভেল করোনাভাইরাসের ভয়াবহ সময় অতিক্রম করছে। যার ভয়াবহতা থেকে আমাদের এই দেশটিও রেহাই পায়নি। যে কারণে দীর্ঘদিন আমাদের দেশও লকডাউনের মধ্যে ছিল। আর এজন্যই আমাদের দেশের সচেতন প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ বলেছেন, ‘এবছর হ্যাপি নিউ ইয়ার, থার্টি ফার্স্ব নাইটকে উপলক্ষ করে যে কোনো প্রকার হই-হুল্লোড়, আতশবাজি ও অনুষ্ঠানাদি করা নিষিদ্ধ। হ্যাঁ, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন উদ্যোগ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাতে আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। আর এ কথা স্পষ্ট যে, বর্ষবরণ উপলক্ষে ‘থার্টি ফার্স্ব নাইট’ নামে সমাজে যে অশ্লীলতা-বেহায়াপনা এবং নগ্নতার উন্মুক্ত প্রদর্শন চলে; তা একজন বিবেকসম্পন্ন সভ্য রুচিশীল মানুষের জন্য পালন করা লোভনীয় নয়। তাছাড়া এটা তো একটি বিজাতীয় উৎসব। এখানে অংশগ্রহণ করা একজন মুসলমানের জন্য কখনোই জায়েজ নয়। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য কোনো জাতির আচার-আচরণে, কৃষ্টি-কালচারে সামঞ্জস্যতা অবলম্বন করবে, সে তাদের দলভুক্ত বলে বিবেচিত হবে।’ অতএব বর্ষবরণ তথা থার্টি ফার্স্ব নাইট পালন করা সম্পূর্ণ হারাম।

বছরের সূচনালগ্নে একজন মুসলমানের অনুভূতি এই হওয়া উচিত যে, বিগত বছরে যে দিনগুলো অতিবাহিত হয়ে গেল। তা আমার জীবনেরই মূল্যবান একটি অংশ। একটি বছরের সমাপ্তি হয়ে গেল মানে আমার জীবন থেকে একটি বছর কমে গেল। আর আমার জীবনের সময় সংকীর্ণ হয়ে এলো। তাই মনে রাখা উচিত; এটা কখনোই আনন্দের সংবাদ নয়, বরং চিন্তার ব্যাপার। আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠার সময় নয়; বরং হিসাব-নিকাশের সময়। হারানোর সময়ের জন্য অনুতপ্ত হওয়ার সময়। সুতরাং বছরের প্রথম দিনেই গোনাহের কাজে জড়িত হওয়া থেকে আমরা নিজেরা সচেতন হই এবং অন্যকে সচেতন করি। আর বিগত বছরের বিদায়, নতুন বছরের আগমনকে স্বাগত জানাতে ও উদযাপন করতে কোনো অনুষ্ঠান এবং কোনো ধরনের গুনাহে লিপ্ত না হই। আল্লাহতায়ালা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন!

 

লেখক : শিক্ষার্থী, তাকমিল, দারুস-সুন্নাহ মাদরাসা, টাংগাইল

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads