কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে হচ্ছে দেশের প্রথম মডেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনাগার, সাথে থাকছে সংক্রামন রোধে আধুনিক সব ব্যবস্থা। ইতি মধ্যে কাজের বেশির ভাগ অগ্রগতি হয়েছে এবং আগামী বছরের শুরুর দিকে এটা দৃশ্যমান হবে বলে জানান জেলা সদর হাসপাতালের কর্মকর্তারা।
এমএসএফ’এর সহযোগিতায় প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার হাসপাতালে এই আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাগার নির্মাণ হলে জেলাতে সম্পূর্ন বিদেশের আদলে উন্নত চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি পরিবেশ সম্মত এবং দূর্গন্ধমুক্ত একটি পরিবেশ হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ শাহীন আবদু রহমান বলেন, ইতি মধ্যে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে সরকারের পক্ষ থেকে আধুনিক এবং সহজ চিকিৎসা সেবার জন্য আইসিইউ, সিসিইউ সহ শিশুদের জন্য আলাদা আধুনিক চিকিৎসা সহ সব ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া লোকবল থেকে শুরু করে সব দিক থেকে মানুষের জন্য নিরাপদ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে নতুন ভাবে আরো একটি ভাল খবর আছে সেটা হলো কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে হচ্ছে দেশের প্রথম আধুনিক মডেল বর্জ্য ব্যবস্থপনাগার সহ হাসপাতালে সংক্রামন রোধে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। এমএসএফ’এর সহযোগিতায় ৭ কোটি টাকা ব্যায়ে এই আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থপনা ইউনিট হলে হাসপাতালের পুরু পরিবেশ বদলে যাবে বলে মনে করেন তিনি। একই সাথে বর্তমানে নির্মাণ কাজের বেশির ভাগ সমাপ্তি হয়েছে জানিয়ে দ্রুত এর সুফল পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
এদিকে এমএসএফ এর প্রজেক্ট কর্ডিনেটর জুলিয়েন ডেবোস জানান, হাসপাতালের আগের পরিবেশ ছিল মারাত্বক সংক্রামন যুক্ত। তাদের সব ধরনের বর্জ্য পেছনে বা যে কোন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখতো, সেখানে গরু ছাগল সহ গিয়ে একটি নোংরা পরিবেশ ছিল যা মাটি, পানি, বায়ু সব কিছুকে সংক্রামিত করতো। এতে হাসপাতালে নার্স, সহ পরিচ্ছন্ন কর্মী, রোগি এবং রোগির স্বজনরাও নানান ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভবনা ছিল। সেই পরিস্থিতিতে এম,এস,এফ মনে করেছে হাসপাতালকে সব দিক থেকে চিকিৎসা বান্ধব করতে হবে। সে জন্য আমরা প্রায় ৭ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছি, এতে থাকছে দেশের প্রথম আধুনিক এবং মডেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিট। যার মধ্যে থাকছে ইংল্যান্ড থেকে আমদানী করা মেশিন বা দহন যন্ত্র। এখানে ধারালো বর্জ্য, জৈব বর্জ্য এবং সাধারণ বর্জ্য গুলোকে পৃথকীকরণ করে শোধনাগারে নেওয়া হবে। এবং বেশির ভাগ বর্জ্য ঐ দহনযন্ত্রের মাধ্যমে পুড়িয়ে ফেলে ছাই করে ফেলা হবে। এবং সেই ছাই স্থানীয় ফসলি জমিতে দিলে ফসল ভাল হবে এবং জমিও উর্বর হবে। আর ৩ টি আলাদা সেফটি ট্যাংক আছে যে গুলো কমপক্ষে ৫ বছর ব্যবহার করা যাবে।
জুলিয়েন ডেবোস আরো বলেন, মডেল আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাগার ছাড়াও হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার, জরুরী বিভাগ, ডেলিভারী রুমের জন্য একটি লন্ড্রি স্থাপন করা হবে, একই সাথে হাসপাতালের ভেতরে প্রয়োজনীয় সব স্থানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া বর্তমানে আমাদের ২ জন হেলথ প্রভাইটার প্রতিদিন হাসপাতালে আগত রোগী এবং রোগীর স্বজনদের সংক্রামন রোধে করনীয় এবং এর ব্যবহার বিষয়ে ধারনা দিচ্ছে। সব মিলিয়ে আমি মনে করি যদি হাসপাতালে চলমান প্রকল্প চালু হলে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল হবে একটি আদর্শ হাসপাতাল এবং দেশের প্রথম মডেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনাগার। আগামী বছরের শুরুর দিকে কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে আগের মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে বর্জ্য পড়ে থাকে না। বরং এখন বেশির ভাগ বর্জ্য কালো পলিথিনে মোড়ানো করে একটি নিদিষ্ট জায়গায় রাখা হচ্ছে যাতে পৌরসভার গাড়ী খুব সহজে নিরাপদে বর্জ্য অপসারণ করতে পারছে। আর হাসপাতাল এলাকা থেকে দূর্গন্ধও কমে গেছে। আর জরুরী বিভাগেও চলছে ব্যাপক সংস্কার, সে জন্য প্রধান ফটক বন্ধ করে দিয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় চলছে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম। এদিকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিটে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে বেশির ভাগ কাজ শেষ পর্যায়ে ইতি মধ্যে কয়েকটি সেফটি ট্যাংকও নিমার্ণ কাজ শেষ হয়েছে। এবং ভেতরেও বেশ কয়েক জন যুবক যুবতী সাধারণ রোগিদের সাথে স্বাস্থ্য সচেতন বিষয়ে ধারনা দিতে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ পুচনু বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্টের পরে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার জন্য ইতি মধ্যে অনেক দেশি বিদেশি এনজিও কাজ করছে। এর মধ্যে অনেকে স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কাজ করে আমরা মনে করেছি রোহিঙ্গা নাগরিকদের সেবা দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় জনগনও যাতে উন্নত মানের সেবা পায় সে জন্য কিছু করা দরকার। এই ধারাবাহিকতায় এম.এস.এফ বেলজিয়ামের সহযোগিতায় একটি বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। উচ্চ আদালতের একটি রায় ছিল দেশের সকল হাসপাতালের বর্জ্য তাদের নিজেদেরকেই ব্যবস্থাপনা করতে হবে। সেই আলোকে আমরা গড়ে তুলছি সম্পূর্ন পরিবেশ বান্ধব এবং দেশের প্রথম একটি মডেল মেডিসিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাগার। মোট কথা হাসপাতালের কোন বর্জ্য আর বাইরে যাবে না। সব কিছুই এখানে সংরক্ষণ এবং পুড়িয়ে ছাই করে ফেলা হবে। ফলে বর্তমানে বর্জ্য নিয়ে হাসপাতালের ভেতরে বাইরে যে চিত্র সেটা পরিবর্তন হয়ে একেবারে উন্নত দেশের মত দেখা যাবে। এতে কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষ একটি উন্নত চিকিৎসার পরিবেশ পাবে।
                                
                                
                                        
                                        
                                        
                                        




